এ কেমন চলে যাওয়া by সাইফুল আলম
মার্কিন ঔপন্যাসিক হাওয়ার্ড ফাস্টের
উপন্যাস স্পার্টাকাস-এ একটি বাক্য পড়ে থমকে ছিলাম, তা হচ্ছে, ভগবান যাকে
ভালোবাসেন, সে জন্মেই মরে। অর্থাৎ পৃথিবীর দূষিত আলো-বাতাসের স্পর্শহীন
অপাপবিদ্ধ পবিত্রতায় স্রষ্টা তাকে তুলে নেন নিজ ক্রোড়ে। থমকে ছিলাম কথাটা
বোঝার জন্য। ভালো মানুষদের আয়ুষ্কাল অল্পই, এটা হচ্ছে ওই বাক্যের
অন্তর্নিহিত বক্তব্য। বাক্যটি স্মরণে এলো অজাতশত্র“ সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব
প্রিয় জগ্লুল ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদটি শুনে। এ কেমন মৃত্যু! এ কেমন চলে
যাওয়া। বলা হয়, কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের চেয়ে হালকা। আবার কোনো কোনো
মৃত্যু হিমালয় পাহাড়ের চেয়ে ভারি। যা-ই হোক না কেন, অনিবার্য, তবু এমন
মৃত্যু আমাদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত।
আমাদের প্রিয় মুখ কাছের মানুষ জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী আর আমাদের মাঝে নেই। মৃত্যু তাকে কেড়ে নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। শনিবার রাত সোয়া ৮টায় বাংলামোটরে একটি মিনিবাস থেকে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এই বাংলামোটরেই আমাদের আরেক প্রিয় মানুষ কবি, সাংবাদিক ইউসুফ পাশাকে আমরা হারিয়েছি। তা-ও এই সড়কেই। কী নির্মম, কী মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি!
শুক্রবার সকালে চ্যানেল আইয়ের টকশো যুগান্তর সংবাদপত্রে বাংলাদেশ-এ অতিথি ছিলেন জগ্লুল ভাই। সম্ভবত এটিই তার সর্বশেষ লাইভ টকশো। ওই অনুষ্ঠানে আমি সঞ্চালক ছিলাম। শনিবার সারা সকাল-দুপুর যুগান্তর কার্যালয়ে যুগান্তর-যমুনা টিভি ও নিসচার উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে গোলটেবিল হল। সেখানেও ছিলাম। কিন্তু একবারও কি ভাবতে পেরেছি, শুক্রবার যার সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলাম, শনিবার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এত আলোচনায় ছিলাম- সেই সড়কই কেড়ে নেবে আমাদের প্রিয় মানুষ জগ্লুল ভাইকে।
জগ্লুল ভাই আর কোনো টকশোতে যাবেন না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আর কোনো বিশ্লেষণধর্মী চমৎকার লেখা লিখবেন না। এটাই সত্য। কিন্তু এই সত্য কি আমরা সহজে মেনে নিতে পারি! আর কোনোদিন তিনি ফিরবেন না। সংবাদপত্র জগতে আমাদের স্বপ্নের এই রাজপুত্র একেবারেই হারিয়ে গেছেন!
অনেক স্মৃতি জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে। দেশে, দেশের বাইরে- একসঙ্গে কত দিন-রাত কেটেছে আমাদের। রক্তের সম্পর্ক নেই; কিন্তু এত আপন, এত উঁচু মাপের মানুষ কিন্তু এতটাই কাছাকাছি, এতটাই সহজ, সাধারণ, নির্মোহ যে ভাবতেই পারি না। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠান শেষে যখন বিদায় নিচ্ছেন, বললাম, কোথায় যাবেন, গাড়ি কই?
উত্তরে বললেন, বাসায় যাব। হেঁটেই চলে যাব। এমন অনেকদিন হয়েছে, সিদ্ধেশ্বরীতে যখন চ্যানেল আই স্টুডিও তখনও সেখানে হেঁটে আসতেন, হেঁটে যেতেন। তেজগাঁও স্টুডিওতে মাঝে-মধ্যে হেঁটে আসতেন। প্রশ্ন করলে বলতেন, সকালের হাঁটাটা হয়ে গেল। পাক্বা ৪০ মিনিট। খুব জানতে ইচ্ছে করে, জগ্লুল ভাই কি এখনও পথ হাঁটছেন?
পৃথিবীতে কত অসম্ভব আজ সম্ভব হয়। এমনটা কি হতে পারে না, কোনো একদিন রাজধানীর কোনো এক সড়কে জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! এই চিন্তা মূলত ননমেটাফিজিক্যাল। তবু মহৎ ভাবাবেগের মধ্যে যা কিছু সূক্ষ্ম অনুভূতির আর শক্তিশালী, সেই বোধ আমাকে তাড়িত করছে। কই, জগ্লুল ভাই, শনিবার রাতে চলে গেলেন, শুক্রবারও তো বললেন না, এই শেষ দেখা। আর দেখা হবে না!
সাইফুল আলম : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর
আমাদের প্রিয় মুখ কাছের মানুষ জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরী আর আমাদের মাঝে নেই। মৃত্যু তাকে কেড়ে নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। শনিবার রাত সোয়া ৮টায় বাংলামোটরে একটি মিনিবাস থেকে নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এই বাংলামোটরেই আমাদের আরেক প্রিয় মানুষ কবি, সাংবাদিক ইউসুফ পাশাকে আমরা হারিয়েছি। তা-ও এই সড়কেই। কী নির্মম, কী মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি!
শুক্রবার সকালে চ্যানেল আইয়ের টকশো যুগান্তর সংবাদপত্রে বাংলাদেশ-এ অতিথি ছিলেন জগ্লুল ভাই। সম্ভবত এটিই তার সর্বশেষ লাইভ টকশো। ওই অনুষ্ঠানে আমি সঞ্চালক ছিলাম। শনিবার সারা সকাল-দুপুর যুগান্তর কার্যালয়ে যুগান্তর-যমুনা টিভি ও নিসচার উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে গোলটেবিল হল। সেখানেও ছিলাম। কিন্তু একবারও কি ভাবতে পেরেছি, শুক্রবার যার সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলাম, শনিবার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এত আলোচনায় ছিলাম- সেই সড়কই কেড়ে নেবে আমাদের প্রিয় মানুষ জগ্লুল ভাইকে।
জগ্লুল ভাই আর কোনো টকশোতে যাবেন না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আর কোনো বিশ্লেষণধর্মী চমৎকার লেখা লিখবেন না। এটাই সত্য। কিন্তু এই সত্য কি আমরা সহজে মেনে নিতে পারি! আর কোনোদিন তিনি ফিরবেন না। সংবাদপত্র জগতে আমাদের স্বপ্নের এই রাজপুত্র একেবারেই হারিয়ে গেছেন!
অনেক স্মৃতি জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে। দেশে, দেশের বাইরে- একসঙ্গে কত দিন-রাত কেটেছে আমাদের। রক্তের সম্পর্ক নেই; কিন্তু এত আপন, এত উঁচু মাপের মানুষ কিন্তু এতটাই কাছাকাছি, এতটাই সহজ, সাধারণ, নির্মোহ যে ভাবতেই পারি না। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠান শেষে যখন বিদায় নিচ্ছেন, বললাম, কোথায় যাবেন, গাড়ি কই?
উত্তরে বললেন, বাসায় যাব। হেঁটেই চলে যাব। এমন অনেকদিন হয়েছে, সিদ্ধেশ্বরীতে যখন চ্যানেল আই স্টুডিও তখনও সেখানে হেঁটে আসতেন, হেঁটে যেতেন। তেজগাঁও স্টুডিওতে মাঝে-মধ্যে হেঁটে আসতেন। প্রশ্ন করলে বলতেন, সকালের হাঁটাটা হয়ে গেল। পাক্বা ৪০ মিনিট। খুব জানতে ইচ্ছে করে, জগ্লুল ভাই কি এখনও পথ হাঁটছেন?
পৃথিবীতে কত অসম্ভব আজ সম্ভব হয়। এমনটা কি হতে পারে না, কোনো একদিন রাজধানীর কোনো এক সড়কে জগ্লুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল! এই চিন্তা মূলত ননমেটাফিজিক্যাল। তবু মহৎ ভাবাবেগের মধ্যে যা কিছু সূক্ষ্ম অনুভূতির আর শক্তিশালী, সেই বোধ আমাকে তাড়িত করছে। কই, জগ্লুল ভাই, শনিবার রাতে চলে গেলেন, শুক্রবারও তো বললেন না, এই শেষ দেখা। আর দেখা হবে না!
সাইফুল আলম : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক যুগান্তর
No comments