একদিকে রাজপথের লড়াই, অন্যদিকে কথার যুদ্ধ
পাকিস্তানে আজ রোববার থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে একদিকে চলছে রাজপথের লড়াই, অন্যদিকে চলছে বাগ্যুদ্ধ। খবর ডনের। রাজধানী ইসলামাবাদের পথে আজাদি মার্চের নতুন কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম করার চেষ্টা চালাচ্ছে পিটিআই। ইমরানের সমর্থকেরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। অন্যদিকে কর ফাঁকি নিয়ে কথার লড়াইয়ে মেতেছেন ইমরান ও তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ। ইমরান খান গত বৃহস্পতিবার লাহোরে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) নেতা প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে দেশের সবচেয়ে বড় কর ফাঁকিবাজ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, নওয়াজ শরিফের মতো ধনী ব্যক্তি মাত্র পাঁচ হাজার রুপি কর দেন। সভ্য সমাজ হলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ৭০ শতাংশেরও বেশি সদস্য করখেলাপি হিসেবে কারাগারে যেতেন। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ। ইমরানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের চিনিকলগুলো ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সরকারকে ২৪৪ কোটি রুপি কর দিয়েছে। আর ২০০৭ সালে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পর নওয়াজ ব্যক্তিগতভাবেই কর দিয়েছেন তিন কোটি ২০ লাখ রুপির বেশি। পাশাপাশি কৃষি কর হিসেবে দিয়েছেন ৬৬ লাখ রুপির বেশি। ইমরানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির পাল্টা অভিযোগ তুলে মন্ত্রী বলেন, তিনি বছরে দুই লাখ রুপিরও কম দেন। তিনি আরও বলেন, ইমরান খান নিজের আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, তিনি পাকিস্তানের বাইরের একজন মক্কেলকে ‘কিছু সেবা’ দিয়ে ৮৪ লাখ রুপি গ্রহণ করেছেন।
আসলে তিনি কী সেবা দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। তা না হলে তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে লোকজন সন্দেহ করবে। পরে ইমরান খান এক সংবাদ সম্মেলন করলেও কর ফাঁকির বিষয়টি আর তোলেননি। এ সময় তিনি সরকারবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতেই বেশি মনোযোগী হন। পিটিআই নেতা ২০১৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ‘স্থূল কারচুপি’র নানা খতিয়ান তুলে ধরে সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার অভিযোগ পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশনে তুলে ধরেছি। কিন্তু কেউই তা শোনেনি। তাই রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’ ২০১৩ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে গত আগস্ট মাসে ‘আজাদি মার্চ’ শুরু করে পিটিআই। পরে ইসলামাবাদে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে দলটি নওয়াজ শরিফের সরকার হটানোর চেষ্টা করে। সে যাত্রায় আন্দোলন সফল না হলেও পরে ইমরান বিভিন্ন এলাকা সফর করে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙা করেন এবং ৩০ নভেম্বর নওয়াজবিরোধী আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত ধাপ’ শুরুর ঘোষণা দেন। নির্বাচনে জালিয়াতির এ পর্যন্ত পিটিআই যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার সর্বশেষটি হচ্ছে মোট ভোটারের চেয়েও অনেক বেশি ব্যালট পেপার ছাপানো। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে এর সপক্ষে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরা হয়। এ সময় বলা হয় লাহোর, করাচি ও ইসলামাবাদের ছাপাখানায় যত ব্যালট-পেপার ছাপা হয়েছে, তা নিবন্ধিত মোট ভোটারের চেয়ে ৫০ লাখ বেশি। বাড়তি এসব ব্যালট-পেপার ফল পাল্টে দিতে ব্যবহার করা হয়েছে। পিএমএল-এন আইনপ্রণেতা পিটিআইয়ে: প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের দলের আইনপ্রণেতা আইজাজ চৌধুরী গতকাল ইমরানের পিটিআইয়ে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইজাজ বলেন, তিনি তাঁর আসন থেকে পদত্যাগ করে ইমরানের ‘দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে’ যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
No comments