স্বামীর সঙ্গে বান্ধবীর পরিচয় করানোই কাল হলো আরজুর
কলেজজীবনের বান্ধবীকে এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর স্ত্রীর বান্ধবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। এক সময় তা প্রেম পর্যন্ত গড়ায়। দাম্পত্যজীবনে শুরু হয় কলহ। এক বছর পর সন্তানসহ প্রাণ দিতে হলো ওই স্ত্রীকে। গত বুধবার সন্ধ্যায় মধ্য পাইকপাড়ার ৬৭/এ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলা থেকে গৃহবধু আইরিন আক্তার আরজু ও তার সাত বছর বয়সি পুত্র সন্তান সাবিদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত আরজুর স্বামী আমান উল্লাহ ও তার কথিত প্রেমিকা সুবর্ণাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত আরজুর চাচা মোহাম্মদ ইউনুস আলী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় মূল অভিযুক্ত আমান উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যায় ইন্ধনদাতা হিসেবে তার প্রেমিকা সুবর্ণাকেও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কিন্তু আমান জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। সুবর্ণাও তার সঙ্গে আমানের প্রেমের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছেন। মিরপুর বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) নিসারুল আরিফ নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, তদন্তে আমাদের ধারণা পরকীয়ার জের ধরেই স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেছেন আমান। তাকে হত্যায় প্ররোচিত করেছেন প্রেমিকা সুবর্না। যদিও ধূর্ত আমান এখন পর্যন্ত হত্যার দায় স্বীকার করেননি। সুবর্ণাও সম্পর্কের বিষয় অস্বীকার করছেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার পুত্র সাবিদকে সঙ্গে নিয়ে জুমআর নামাজ পড়তে গিয়ে সুবর্ণার সঙ্গে দেখা করে আমান। বাবার সঙ্গে সুবর্ণার কথা বলা পছন্দ হয়নি সাবিদের। এরপর বাসায় ফিরে মা আরজুকে বাবার সাক্ষঅতের কথা জানিয়ে দেয় সাবিদ। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আমান তার শিশুপুত্রকে পেটান। স্ত্রী তাতে বাধা দিতে গেলে তাকেও পেটানো হয়। অনেক আগ থেকে আমানের পরকিয়ার কথা জনাতেন তার স্ত্রী আরজুর পরিবার। পারিবারিক কলহ চরম পর্যায়ে গেলে আরজুর মায়ের পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নেয় তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা। মারা যাওয়ার আগের দিন মঙ্গলবার আরজু তার মাকে ফোন করে জানান তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনিও একমত। এরপরই গত বুধবার বিকেলে বড় ছেলেসহ আরজু খুন হয়। সুবর্ণা-আমানের পরকিয়া নিহত আরজুর চাচা মামলার বাদি মো. ইউনুছ হাওলাদার বলেন, ২০০৪ সালে প্রেমের সম্পর্ক থেকে আরজুকে বিয়ে করেন আমান। তখন আরজু ইডেন কলেজের ছাত্রী। তার কলেজজীবনের বান্ধবী সুবর্ণার সঙ্গে স্বামীকে এক বছর আগে পরিচয় করিয়ে দেন আরজু। এরপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি এক সময় আরজু জেনে যায়। এই নিয়ে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। সূবর্ণা গুলশানে একটি বায়িং হাউসে চাকরি করেন। তারও স্বামী-সংসার আছে। পরকিয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তার সংসারেও কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে সুবর্ণার সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এর ফলে স্বামীকে ছেড়ে মিরপুর টোলারবাগ কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে গিয়ে বান্ধবীদের কক্ষে থাকা শুরু করেন সুবর্ণা। আমান ও সুবর্না একসঙ্গে ঢাকার বাইরেও ঘুরতে যান। এ বিষয়টিও আরজু জেনে যায়। অসুস্থ ছোট ছেলে সানভীর মা ও খেলার সাথী বড় ভাই সাবিদের মৃত্যুর পর ছোট্ট সানভিরকে দক্ষিণ পাইকপাড়ার বাসিন্দা ইউনুস আলীর (আরজুর চাচা) ৪৫৫/ বি নম্বর বাসায় রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় মায়ের জন্য সানভীর কান্নাকাটি করছে। সানভীরের দেখভাল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ইউনুস আলী বলেন, মায়ের বুকের দুধ খেতো সানভীর। এখন মা নেই। সব সময় মায়ের জন্য কান্নাকাটি করে। কিছু খেতে চায় না। কৌটার দুধ খাইয়ে তাকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে পরিবারের সবাই ওকে আলাদা যত্ন নিচ্ছে। কিন্তু এরপরও মায়ের অভাব পূরন হচ্ছে না। শুধুই কান্নাকাটি করছে। ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, সূর্বণার সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরেই আরজু ও তার সন্তানকে খুন করেছেন আমান । এই নিয়ে সন্দেহ থাকার কোনো কারণই নেই। আমান বাঁচার জন্য পুলিশের কাছে মিথ্যা বলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সুবর্ণার সঙ্গ ত্যাগ করতে পারিবারিকভাবে আমানকে বোঝানো হয়েছিল। এর পাশাপাশি দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সালিস বৈঠকও হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো আরজুর ওপর মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন আমান। নিহত আরজু ইডেন কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। আমান উল্লাহ পূবালী ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখার সিনিয়র অফিসার। হত্যার কথা স্বীকার না করলে শুক্রবার আমানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
No comments