জিয়ার বিচক্ষণতায় ৭ নভেম্বর দেশ রক্ষা পেয়েছে : তারেক রহমান
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের মেধা ও বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ তাহের-ইনুদের ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছে। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিন বুধবার আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন কয়সর এম আহমেদ।
তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা করা প্রয়োজন। কারণ, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি পাকিস্তানি নাগরিক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অবৈধ রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই দেখেননি। দেখেননি তাদের দুঃখ, কষ্ট ও বীরত্বগাঁথা। এ কারণে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ছেড়ে দেন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের।
তারেক রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের সঙ্গে শেখ মুজিব কখনোই সহজ হতে পারেননি। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদও তার রোষানল থেকে বাঁচতে পারেননি।
তিনি বলেন, সর্বহারা পার্টি নেতা সিরাজ সিকদারকে বিনা বিচারে হত্যা করে শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, কোথায় সেই সিরাজ সিকদার?।
তারেক রহমান বলেন, বিরোধী দলের একজন রাজনৈতিক দলের নেতাকে বিনা বিচারে হত্যা করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এভাবে দম্ভ করে জাতীয় সংসদকে কলংকিত করেছিলেন শেখ মুজিব। পিতার মতো অন্যায়ভাবে এখন সেই সংসদ বিনাভোটের কথিত এমপি দিয়ে দখল করে রেখেছেন রং হেডেড শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জনগণকে শেখ মুজিব বিশ্বাস করতে পারেননি। পিতার মতো জনগণের প্রতি শেখ হাসিনারও আস্থা নেই। তাই সংসদ কিংবা সরকার গড়তে তাদের জণগণের ভোট কিংবা সমর্থনের প্রয়োজন হয় না।
তারেক রহমান বলেন, জোর খাটিয়ে কিংবা রাজাকার আখ্যা দেয়ার ভয় দেখিয়ে শেখ মুজিবের পক্ষে যতোই মিথ্যা ইতিহাস রচনা করা হোক, প্রকৃত সত্য হচ্ছে- স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসটি শেখ মুজিব আনন্দের সঙ্গে উদযাপনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম বিজয় দিবসেই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সর্বহারা পার্টি আধাবেলা হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়। ৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও হরতাল ডাকে সর্বহারা পার্টি।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তন কিংবা ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান কোনো ঘটনাতেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতার লোভ দেখাননি। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান পরিণত হন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীকে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের অবৈধ তথ্যমন্ত্রী ৭৫ সময়কার জঙ্গি ইনুচক্র তখন ছিলো শেখ মুজিবের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাসদের গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে : অত্যাচারীর পতন অনিবার্য। শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বঙ্গভবনে বিজয়ীর বেশে শলাপরামর্শে অংশ নেন বর্তমান অবৈধ সরকারের অবৈধ তথ্যমন্ত্রী তৎকালীন জঙ্গি নেতা হাসানুল হক ইনু ও কর্ণেল তাহের। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, যে ইনু চক্র ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলো কিংবা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ইন্ধন যুগিয়েছিলো ক্ষমতার লোভে সেই জঙ্গি ইনু এখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক লাঠিয়াল প্রধান মুখপাত্র।
তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সঙ্গে ইনুদের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে খন্দকার মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে সেই সময় তাহের-ইনু বাহিনীর ভূমিকা কি ছিলো? খন্দকার মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররাফ অভ্যুত্থান করলে তাহের ইনুর ভূমিকা কার পক্ষে ছিলো, খন্দকার মোশতাক আহমেদ নাকি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ?
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের আরেক অবৈধ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দল ইউপিপি শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মুজিবের অপসারণে জনগণ উল্লসিত। তার মৃত্যু কারও মনে সামান্যতম সমবেদনা বা দুঃখ জাগায়নি, জাগাতে পারে না’।
তারেক রহমান বলেন, এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় শেখ মুজিব হত্যার দায় তৎকালীন জঙ্গি নেতা ইনু কিংবা মেননরা এড়াতে পারেন না।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, পিতার মতো শেখ হাসিনারও ভরসা এখন নিষ্ঠুর র্যাব। বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার শুধু অবৈধই নয়, কুইক রেন্টালের ভর্তুকির নামে শেখ হাসিনা জনগণের ৩৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। অথচ বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশ।
তারেক বলেন, এই দুর্নীতিবাজ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন- তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা এডভোকেট আসাদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য যুবদলেরর আহ্বায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নেওয়াজ, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাসির আহমেদ শাহীন, যুক্তরাজ্য জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী তরুণ দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরফরাজ শরফু প্রমুখ।
সভায় জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের সামগ্রিক দিক তুলে ধরে তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টা মাহদী আমীনের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য জাসাসের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানেরর ওপর লেখা একটি গানও প্রদর্শিত হয়। এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন।
No comments