আফতাব দখল করেন দৈনিক সংগ্রাম
যুদ্ধশেষে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ঢাকায় চলে দখলের মহোৎসব। সিরাজপন্থী ছাত্রলীগের নেতা আফতাবউদ্দিন আহমদ (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি) দখল করেন পুরান ঢাকার র্যাংকিন স্ট্রিটে অবস্থিত জনতা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেসের অফিস। এখান থেকে প্রকাশিত হতো জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম। আর শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ মনি দখল করলেন মতিঝিলে উর্দু দৈনিক পাসবান অফিস। সেখান থেকে ছাপতে থাকলেন সাপ্তাহিক বাংলার বাণী। মহিউদ্দিন আহমদের সদ্য প্রকাশিত ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বইতে বিষয়টি প্রকাশ করা হয় এভাবে; “সিরাজপন্থী ছাত্রলীগের একদল কর্মী একাত্তরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে পুরান ঢাকার র্যাংকিন স্ট্রিটে অবস্থিত জনতা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেসের দখল নিলেন।এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা ও মুজিববাহিনীর সদস্য আফতাবউদ্দিন আহমদ। ওই প্রেস থেকে জামায়াতে ইসলামীর দৈনিক পত্রিকা সংগ্রাম ছাপা হতো। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ওই ছাপাখানা থেকে আফতাব একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করলেন। আফতাবের প্রধান সহযোগী ছিলেন রায়হান ফেরদৌস মধু। পত্রিকার নাম ‘গণকণ্ঠ’। সম্পাদক হিসেবে কবি আল মাহমুদের নাম ছাপা হলো। তিনি তখনো কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেননি। পত্রিকার একটি ডিক্লারেশনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হলো। আবেদনপত্রে পত্রিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তাফার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। একাত্তর সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে শেখ ফজলুল হক মনি কিছু লোক নিয়ে মতিঝিলে দৈনিক বাংলা-মর্নিং নিউজ অফিস দখল করতে যান। ওই সময় ভবনটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত তথ্যসচিব বাহাউদ্দিন চৌধুরী। তিনি শেখ মনিকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘খবরদার , আমি যতক্ষণ আছি আর এক পা-ও এদিকে নয়। শেখ মনি তখন দলবল নিয়ে মতিঝিলে উর্দু দৈনিক পাসবান অফিসের দখল নিলেন এবং ‘মধুমতি মুদ্রণালয়’ নামে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সেখান থেকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী ছাপাতে লাগলেন। ছাত্রলীগের সিরাজপন্থীদের বসার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা ছিল না। দিনের বেলা জহুরুল হক হলের ক্যান্টিন কিংবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আহসানউল্লাহ হল অথবা ছাত্র সংসদের অফিস এবং সন্ধ্যার পর নীলক্ষেতে আনোয়ার রেস্টুরেন্টে তাঁরা সচরাচর বসতেন এবং আলাপ-আলোচনা করতেন। এখন তাঁদের যোগাযোগের নতুন কেন্দ্র হলো গণকণ্ঠ অফিস। জনতা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেড ছিল একটা ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’। ছাত্রলীগের সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম এর ‘প্রশাসক’ নিযুক্ত হন। পাঁচজনের যৌথ মালিকানায় গণকণ্ঠ নিবন্ধিত হয়। এই পাঁচজন হলেন আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম ও আফতাবউদ্দিন আহমদ। আফতাব নির্বাহী সম্পাদক ও কাজী আরেফ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নিযুক্ত হন। নাজিমুদ্দিন মানিক বার্তা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন মোহাম্মদ তোহা খান, আলাউদ্দিন আহমদ, রমেন দত্ত, আবুল হাসান ও নির্মলেন্দু গুণ। আবু কায়সার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রফিকুন নবী অনেকগুলো দৃষ্টিনন্দন টাইটেল ও স্কেচ এঁকে দেন। গণকণ্ঠ টাইটেলটা করে দিয়েছিলেন কালাম মাহমুদ।
No comments