বুদ্ধি পরীক্ষা! by নুসরাত শ্রাবণী
আসলাম সাহেবের মনে শান্তি নেই। নতুন একটা কোম্পানি দাঁড় করিয়েছেন। পরীক্ষা দিয়ে দেশের সবচেয়ে মেধাবী লোকগুলোকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু এদের দিয়ে কাজ করিয়ে স্বস্তি পান না তিনি। যখনই মনে হয়, নিজের ওপর থেকে কাজের চাপ কমাবেন তখনই তার মনে হয়, সব একেকটা বোকার হদ্দ! কোম্পানির জন্য একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারে না! কোম্পানির কোনো কাজের ব্যাপারে কর্মচারীদের কারো মতামত তার পছন্দ হয় না। বাধ্য হয়ে সব তাকেই দেখতে হচ্ছে। কোম্পানির চিন্তায় আসলাম সাহেবের জীবনের সব আরাম হারাম হয়ে যেতে থাকে।
কিছু দিন পরে আসলাম সাহেব গেছেন ব্যবসায়ীদের একটা কনফারেন্সে। কনফারেন্স শেষে বের হচ্ছেন, তখন দেখা হয়ে গেল তার বাল্যবন্ধু তারেকের সাথে। তারেক এখন বিশাল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী মহলের সবাই তারেককে চেনে। তারেককে দেখে আসলাম সাহেবের মনে একটু হিংসাই হয়। এই তারেককে তিনি একমসয় করুণার চোখে দেখতেন, আর আজ সে কি না আসলাম সাহেবকে টক্কর দেয়! যাই হোক, শত হলেও বন্ধু তো, অনেকক্ষণ সুখদুঃখের গল্প করেন তারা। শেষমেষ আসলাম সাহেব তারেককে জিজ্ঞেস করলেন,
কিছু দিন পরে আসলাম সাহেব গেছেন ব্যবসায়ীদের একটা কনফারেন্সে। কনফারেন্স শেষে বের হচ্ছেন, তখন দেখা হয়ে গেল তার বাল্যবন্ধু তারেকের সাথে। তারেক এখন বিশাল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী মহলের সবাই তারেককে চেনে। তারেককে দেখে আসলাম সাহেবের মনে একটু হিংসাই হয়। এই তারেককে তিনি একমসয় করুণার চোখে দেখতেন, আর আজ সে কি না আসলাম সাহেবকে টক্কর দেয়! যাই হোক, শত হলেও বন্ধু তো, অনেকক্ষণ সুখদুঃখের গল্প করেন তারা। শেষমেষ আসলাম সাহেব তারেককে জিজ্ঞেস করলেন,
-তুই এত অল্প সময়ে ব্যবসা এত বড় কিভাবে করলি?
-আরে দোস্ত, ব্যবসা চালাতে হলে বুদ্ধিমান লোক নিতে হয়।
-হুম, তা ঠিক বলেছিস। কিন্তু সবাই তো পরীক্ষায় পাস করেই যায়। বুদ্ধি কার আছে তা কেমনে বুঝব?
-আচ্ছা দেখো, বলে তারেক শিমুলকে ডাকল। শিমুল আসলাম সাহেবের পার্সোনাল সেক্রেটারি। শিমুলকে ডেকে তারেক বলল,
-আচ্ছা, বলেন তো শিমুল সাহেব, আপনার বাবা-মায়ের সন্তান, সে আপনার ভাইও না, বোনও না। তাহলে সে কে?
শিমুল বেশ চটপটে ছেলে। সে হেসে বলল, স্যার আমি। তারেক আসলাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
-দেখলি তো, এমন ছোটখাটো বুদ্ধিমত্তার প্রশ্ন করলেই বোঝা যায় কে বুদ্ধিমান।
আসলাম সাহেব তো ভীষণ খুশি। বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি চলে এলেন। পরদিন অফিসে গিয়ে, প্রথমেই ডেকে পাঠালেন তার প্রধান উপদেষ্টা, ইমামকে। আসলাম সাহেব ইমামকে বললেন,
-বলো তো ইমাম, তোমার বাবা-মায়ের সন্তান, সে তোমার ভাইও না, বোনও না। তাহলে সে কে?
ইমাম মাথা চুলকাতে লাগল। কিছুক্ষণ ভেবে বলল, স্যার বুঝতে পারছি না। আসলাম সাহেব রেগে আগুন হয়ে গেলেন। এইটুকু বলতে পার না তুমি! তোমাকে চাকরি দিলো কে? খালি খালি বেতন নেও তোমরা! যাও আমার সামনে থেকে!
ইমাম দ্রুত বসের সামনে থেকে সরে আসে। উফ্ বাঁচা গেল! বসের যে কী হইল আজকে, মনে মনে ভাবে সে। সুমি ইমামের পাশের টেবিলে বসে। সে ইমামকে দেখে বলে,
-কী হয়েছে ইমাম ভাই? আপনাকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন?
সুমি তার জুনিয়র। বসের কাছে অপমানিত হওয়ার গল্পটুকু জুনিয়র কলিগকে বলতে ইচ্ছ করল না ইমামের। সে একটা ঢোক গিলে বলল,
-আচ্ছা সুমি, বলো তো তোমার বাবা-মায়ের সন্তান, সে তোমার ভাইও না, বোনও না। তাহলে সে কে?
-আমার বাবা-মায়ের সন্তান, সে আমার ভাইও না, বোনও না। তাহলে সে কে? সে তো আমি!
ইমাম একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল, ওহ্ হ্যাঁ। তাই তো! আচ্ছা আমি এক্ষুনি আসছি। বলে সে আবার বসের কেবিনে ছুটল। বসের সামনে গিয়ে দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বলল,
-স্যার, স্যার, আমি উত্তরটা পেয়ে গেছি। আমার বাবা-মায়ের সন্তান, সে আমার ভাইও না, বোনও না। তাহলে সে কে? সে হচ্ছে সুমি।
আসলাম সাহেব আরেক দফা অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন, -আরে গাধা, এই ভাবলা এতক্ষণে? সেটা সুমি হবে কেন? সেটা তো শিমুল!
No comments