অর্থ-সম্পদের জন্যই খুন কালা হুজুর by জুবেল আহমদ সেকেল
সিলেটের বালাগঞ্জ মসজিদের ইমাম আবদুল হামিদ ওরফে কালা হুজুর ও অটোরিকশাচালক আরশ আলী হত্যা নিয়ে রহস্য বাড়ছে। শ্যালিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য নাকি বিপুল অর্থ-সম্পদের লোভেই খুন করা হয়েছে- তা নিয়ে বালাগঞ্জজুড়ে চলছে তোলপাড়। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অরুপ কুমার চৌধুরী এ তথ্য দিয়েছেন।
কালা হুজুরের শ্যালিকা আফিয়া বেগম ও তার ছেলে শিমুল পুলিশকে দেয়া জবানবন্দিতে ‘অনৈতিক কারণে’ তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে স্থানীয়রা তা মনে করেন না। তাদের মতে, বিপুল অর্থ-সম্পত্তিই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল কালা হুজুরের। ফলে লাশ উদ্ধারের ১৫ দিন কেটে গেলেও কোনোখানেই আলোচনা থামেনি।
দু’জন পুরুষকে শুধু এক নারী ও এক পুরুষ মিলে হত্যা করার বিষয়টি নিহতদের পরিবার ও বালাগঞ্জের সচেতন মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, হত্যার পর পরই দুই লাশ বাথরুমের নিচে মাটি চাপা দেয়া; সে স্থান বালি-পাথর-ইট দিয়ে পাকা করে দেয়া, ঘাতক শিমুল অটোরিকশা চালানো জানে না; কিন্তু অটোরিকশাটি ঘটনাস্থল থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দুরে নেয়া- ইত্যাদি প্রমাণ করে মিশনটি বেশ কয়েকজনের সংঘবদ্ধ চক্র ঘটিয়েছে।
তবে বালাগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে, তদন্তে এর সঙ্গে জড়িত অন্য কাউকে এখনও তারা শনাক্ত করতে পারেনি। পুলিশের এ ভূমিকাকে নিহতদের পরিবার পক্ষপাতমূলক ও প্রশ্নবিদ্ধ দাবি করছে। তারা বলছেন, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে এবং মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করা হয়েছে।
আফিয়া বেগমের পাশের বাড়ির এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, ১৮ অক্টোবর রাত ১২টার দিকে তিনি স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফিরেন। এ সময় আফিয়ার বাড়ির সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি। ওই রাতে প্রায় সারা রাত শিমুলদের ঘরের পানির পাম্প চলছিল। মা (ওই যুবকের) রাতে একবার শিমুলের মাকে ডেকে পানির পাম্পটি বন্ধ করার জন্য বলেন, কিন্তু তারপরও তারা পানির পাম্প বন্ধ করেনি। রাত দেড়টার দিকে শিমুলদের বাড়ি থেকে অটোরিকশাটি চলে যাওয়ার শব্দ শুনেন তিনি। যুবকটি আরও বলেন, পরদিন সকালে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন- শিমুলের এক চাচা বাঁশ কাটছেন, চাচাতো ভাইসহ কয়েকজন পাকা করার মসলা বানাচ্ছেন।
অন্য সূত্র জানায়, বাথরুমে মাটি চাপা দেয়ার পর সেখানে পাকা কাজের সঙ্গে বালাগঞ্জের নুরপুর গ্রামের অজ্ঞাতনামা তিন পুরুষ জড়িত রয়েছে। আরেক সূত্র দাবি করে, শিমুলের চাচাতো ভাই শেবুল মিয়া ঘটনার পর থেকে মসজিদে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। লাশ উদ্ধারের পর থেকে সে পলাতক। আফিয়ার বাড়ি থেকে আরশ আলীর অটোরিকশাটি কালা হুজুরের এক চাচা শ্বশুর ও আরেক আÍীয় চালিয়ে লামাপাড়ায় ফেলে রেখে আসে। স্থানীয়রা দাবি করেন, এসব সূত্র ধরে পুলিশ যদি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে তাহলে এ জোড়া খুনের প্রকৃত কারণ কী, কারা জড়িত- সবই বেরিয়ে আসবে। বালাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মাসুম আহমদ বলেন, কালা হুজুর অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তার অনেক টাকা-পয়সা ছিল, এ কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে। কালা হুজুর সৎ লোক ছিলেন দাবি করে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক জুনেদ মিয়া মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি। একই দাবি বালাগঞ্জ সদর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মতিনেরও। বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া বলেন, কালা হুজুর এলাকায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন।
No comments