রিপাবলিকানদের জয়জয়কার বাংলাদেশ ককাসের সবাই জয়ী
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিরোধী দল রিপাবলিকানদের জয়জয়কার। ৪ঠা নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বাংলাদেশ ককাসের সকল সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং ইমিগ্রেশন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভূমিকায় তার জনপ্রিয়তায় যে ধস নামে তারই প্রতিফলন এই নির্বাচনের ফল। এর মধ্য দিয়ে আট বছর পর সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালো ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। আগেই রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এবার ডেমোক্র্যাটরা হারলো সিনেটেও। কংগ্রেসের উভয় হাউজই এখন রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ওবামা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত ৪ঠা নভেম্বরের নির্বাচনে সিনেটে রিপাবলিকানরা আসন পেয়েছেন ৫২টি। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ৪৫টি আসন। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ২৩৫টি। ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছেন ১৬১টি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারি দলের ভরাডুবি কোন বিষয় নয়। গত ৩৮টি নির্বাচনের মধ্যে ৩৫টি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীনদের পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। এর আগেও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের আমলে উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ পায় রিপাবলিকানরা। সেই সময় সমঝোতা করেই অনেক বিল পাস করা হয়েছে। দেখার বিষয় হলো, এবার সমঝোতা হবে কিনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সমঝোতা উভয় দলকেই করতে হবে। তা না হলে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। উভয় আসনে রিপাবলিকানরা যদি সমঝোতা না করে বিল পাস করেন এবং সেই বিলে প্রেসিডেন্ট সই না করেন সেক্ষেত্রে অচলাবস্থা নিশ্চিত। এ জন্যই উভয় দলের সমঝোতা দরকার। উভয় হাউজে রিপাবলিকানদের জয়ের ফলে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লষকদের মতে, এবারের বিস্ময়কর ফল হলো ডেমোক্র্যাটদের আসন আরাকানসাস, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, সাউথ ড্যাকোটা, মন্টানা, কলারাডো ও নর্থ ক্যারোলিনায় রিপাবলিকানদের জয়। ওদিকে কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলিসহ সবাই পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ৯০.১% ভোট পেয়ে। কংগ্রেসম্যান গ্রেস মেং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ডিস্ট্রিক্ট-৬ থেকে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। ৮৪ বছর বয়সী কংগ্রেসম্যান চার্লস র্যাঙ্গেল আবারও নির্বাচিত হয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট- ১৩ থেকে ৮৭.২% ভোট পেয়ে। এ আসনে তিনি ১৯৭১ সাল থেকেই নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ডিস্ট্রিক্ট-২ থেকে রিপাবলিকান পার্টির পিটার কিং জয়লাভ করেছেন। ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে ৯৬.৪% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসম্যান গ্যাগরি মিক্স। নিদিয়া ভ্যালেস্কুয়েজ ৮৮.৪% ভোট পেয়ে ডিস্ট্রিক্ট- ৭ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম কংগ্রেসম্যান হাকিম জাফরি ৯৬.৯% ভোট পেয়ে আবারও জয়ী হয়েছেন। ডিস্ট্রিক্ট-৯ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসম্যান ইভেট ডি ক্লার্ক। ডিস্ট্রিক্ট-১০ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন জেরাল্ড। ক্যারলিন ডে ম্যালনি নির্বাচিত হয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট-১২ থেকে। স্থানীয় সময় সোমবার রাত ২টার তথ্য অনুযায়ী স্টেট গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ২৭টি এবং ডেমোক্র্যাটরা ১৪টি আসনে জয়লাভ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ তথা প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে ১০৯টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাট। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ তথা ইউএস সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৬টির নির্বাচন হলো। এর ৩৩টি হচ্ছে নিয়মিত এবং ৩টিতে বিশেষ নির্বাচন। ২০১২ সালে নির্বাচনের পর ইউএস সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা জিতেছিল ৫৩ আসনে। অপরদিকে রিপাবলিকানরা পেয়েছিলেন ৪৫ আসন। ২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছিলেন। এবার ঘটলো ঠিক তার উল্টো। রিপাবলিকানরা জয়ী হয়েছেন ৫২ আসনে। ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয়েছেন ৪৫টিতে। উল্লেখ্য, ইউএস সিনেটের মেয়াদ ৬ বছর। একই সঙ্গে স্টেট গভর্নরের নির্বাচন হয় ৩৭টি স্টেটে।
No comments