মার্কিন সামরিক বাহিনীতে দুর্নীতি by আশরাফ হায়দার চৌধুরী
আলেক্সান্ডার নেকরাসভ রুশ সরকার ও ক্রেমলিনের একজন সাবেক উপদেষ্টা। সম্প্রতি তিনি আলজাজিরা অনলাইন সংস্করণে বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের নামে মার্কিন সামরিক বাহিনীতে বিদ্যমান দুর্নীতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য ওই প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছেন আশরাফ হায়দার চৌধুরী
আইএসআইএস যোদ্ধারা যখন সিরিয়া সীমান্ত দিয়ে দলে দলে ইরাকে প্রবেশ করছিল, তখন ইরাকি সেনাবাহিনী ছিল সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। আইএস যোদ্ধারা একের পর এক ইরাকি ভূখণ্ড দখল করে তাদের স্বঘোষিত ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠা করছিল। ফলে এই প্রশ্ন দেখা দেয়া ছিল খুবই স্বাভাবিক যেÑ মার্কিন প্রশিক্ষণ ও সমর্থনপুষ্ট ইরাকি সেনাবাহিনী তাহলে কী করছিল? বিপুল অর্থ ব্যয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাকিদের কী প্রশিক্ষণ দিয়েছে? প্রশ্ন উঠেছে বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের পেছনে বিপুল মার্কিন ডলার ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও। এ ক্ষেত্রে পেন্টাগন কতটা সফল হয়েছে তা নিয়েও সংশয় আর সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ান গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ব্যয় ২৬ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার। এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রশিক্ষিত একটি বাহিনী আইএস যোদ্ধাদের ঠেকাতে পারল না কেনÑ তা সত্যিই একটি রহস্য। তাহলে কি প্রশিক্ষণে অর্থ ব্যয়ের নামে দুর্নীতি হয়েছে? যার জন্য ব্যর্থ ইরাকি সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ইরাকে বিমান হামলা চালাতে হয়েছে।
গত জুনে প্রথমে মাত্র ৮০০ থেকে এক হাজার আইএস যোদ্ধা সিরিয়া থেকে ইরাকে প্রবেশ করে। এদের মোকাবেলায় গিয়ে ইরাকি বাহিনীর শত শত সদস্য প্রাণ হারায়। অনেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি সামরিক বাহিনী কর্তৃক প্রশিক্ষিত একদল সেনার এ ধরনের পরিণতি সত্যিই হাস্যকর ও অচিন্তনীয়। আইএস যোদ্ধা কারা? যারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার পরও লড়াইয়ে টিকে আছে। যত দূর জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আইএস যোদ্ধাদের। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাদ্দাম হোসেনের সামরিক বাহিনীর কমান্ডারেরা। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযানের সময় এরা সিরিয়া, ইরান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আইএসের কিন্তু বিমান হামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাদের যতটুকু সাফল্য তা হচ্ছে স্থলযুদ্ধে।
আইএসের কাছে ইরাকি বাহিনীর পরাজয়ে প্রশ্ন উঠেছেÑ পেন্টাগন কি তাহলে অর্থের অপচয় করছে? ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণের নামে যে বিপুল অর্থ তারা ঢেলে যাচ্ছে, তা কি অপাত্রে ঢালা হচ্ছে? আফগানিস্তানেও কি একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে?
রাশিয়ার একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর আর্থিক দুর্নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনীতে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অবাক করার মতো। যেমনÑ যুদ্ধের সময় পাঁচ ডলারের একটি ইলেকট্রিক মাল্টিপ্লাগ কেনা হয়েছে ৯০০ ডলারে। এ ছাড়া প্রতি মিটার ওয়্যারিংয়ের খরচ দেখানো হয়েছে ৮০ ডলার, যার প্রকৃত খরচ হওয়ার কথা মাত্র ১.৫ ডলার। দুর্নীতির চিত্রটি আরো স্পষ্টভাবে বের হয়ে আসে যখন দেখা যায় পেন্টাগন একটি মাত্র কোম্পানিকে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সব কাজের দায়িত্ব দিয়ে দেয়। মজার বিষয় হলো, ‘ফোনি আলাস্কা’ নামে ওই কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিষয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্রও নেই। অর্থাৎ ওই কাজের জন্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। তাহলে ধরে নেয়া যায় এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অবৈধ লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ ঘুষের বিনিময়ে ফোনি আলাস্কাকে ইরাকে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
একটি দুর্নীতি আরো দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করে। ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের জন্য ইলেকট্রিক সরঞ্জাম কেনা ও স্থাপন করা নিয়ে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে ইরাকি সৈন্যদের প্রশিক্ষণেও। সেখানে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার প্রমাণ আইএসের কাছে ইরাকি বাহিনীর পরাজয়। বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ইরাকে পেন্টাগনের ব্যর্থতা নতুন আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তা হলো, আফগানিস্তান। সেখান থেকে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনী তাদের সৈন্য এক লাখ ৪০ হাজার থেকে কমিয়ে ৫০ হাজারে নিয়ে আসার কথা ভাবছে। আফগান সেনাদের প্রশিক্ষিত করে ধীরে ধীরে ন্যাটো সৈন্য কমানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও যে ইরাক পরিস্থিতির পুরাবৃত্তি হবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?
বর্তমানে আফগানিস্তানে তাদের নিজস্ব সৈন্যসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এটি নিঃসন্দেহে একটি বিশাল বাহিনী। এর সাথে আরো ৬০ হাজার সৈন্য যোগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। এসব সেনাকে প্রশিক্ষণের জন্য চার হাজারেরও বেশি মার্কিন প্রশিক্ষক পাঠানো হচ্ছে। এদের পেছনে পেন্টাগন যে বিপুল অর্থ ব্যয় করবে তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কী পাবে? এতে তালেবানদের কি নিশ্চিহ্ন করা যাবে? মনে হয় না। কেননা ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতিতেই তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর যদি ন্যাটো তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে তো তালেবানদের ঠেকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা তালেবানদের সাথে আলোচনার কথাও ভাবছে। তাহলে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণের নামে কেন বিপুল অর্থ ব্যয় করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র? উত্তরটা খুবই সোজাÑ এই প্রজেক্টের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। ফোনি আলাস্কার মতো কোনো কোম্পানি হয়তো পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন প্রশিক্ষক পাঠাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ওই কোম্পানি তাদের লাভ তুলে নেবে।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার। তা হলোÑ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা। বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের নামে এই দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো তেমন সোচ্চার নয়। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু গণমাধ্যমে গুরুত্বহীনভাবে খবরগুলো এলেও তা তেমন কারো চোখে পড়ছে না।
ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক স্থানে মার্কিন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত সেনারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নাইজেরিয়াতে বিদ্রোহী বোকো হারামরা সরকারি বাহিনীকে প্রায়ই নাস্তানাবুদ করছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে তারা এতটাই সফল যে সম্প্রতি সেখানে তারা মিনি খেলাফত কায়েম করেছে। অথচ সেখানে নাইজেরিয়া সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষকেরা সেখানে কাজ করছে।
আইএসআইএস তালেবান বা বোকো হারাম যোদ্ধাদের সাফল্য প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে কাজে লাগেনি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশের চৌকস সেনাদের প্রশিক্ষণ কেন কাজে লাগছে না তা ভালোভাবে অনুসন্ধান করা দরকার। তা না হলে বিদেশী সেনাদের প্রশিক্ষণের নামে অর্থের অপচয় বাড়তেই থাকবে।
আত্মঘাতী হামলায় মহিলা : ইসরাইলি সেনাবাহিনী, দ্য রেড আর্মি বা তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীতে মহিলা সদস্যের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা। কিন্তু আইএসের মতো একটি ইসলামিক দলে মহিলা যোদ্ধাদের থাকা এবং সরাসরি রণাঙ্গনে অংশ নেয়া অনেককেই অবাক করেছে। পশ্চিমা মিডিয়া অবশ্য মহিলাদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার বিষয়টির চেয়ে তাদের কেলেঙ্কারির খবরই বেশি প্রচার করতে উৎসাহী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মহিলারা আইএসের পক্ষে বীরদর্পেই লড়াই করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেয়েরা আইএসে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অন্য দিকে কুর্দিরাও আইএসের বিরুদ্ধে নারী যোদ্ধাদের ব্যবহার করছে। সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফ ও দি ইনডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই আত্মঘাতী হামলায় নারীদের ব্যবহার করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের এ ধরনের অংশগ্রহণ অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।
রাশিয়ান গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক ব্যয় ২৬ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার। এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রশিক্ষিত একটি বাহিনী আইএস যোদ্ধাদের ঠেকাতে পারল না কেনÑ তা সত্যিই একটি রহস্য। তাহলে কি প্রশিক্ষণে অর্থ ব্যয়ের নামে দুর্নীতি হয়েছে? যার জন্য ব্যর্থ ইরাকি সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আবার ইরাকে বিমান হামলা চালাতে হয়েছে।
গত জুনে প্রথমে মাত্র ৮০০ থেকে এক হাজার আইএস যোদ্ধা সিরিয়া থেকে ইরাকে প্রবেশ করে। এদের মোকাবেলায় গিয়ে ইরাকি বাহিনীর শত শত সদস্য প্রাণ হারায়। অনেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে দামি সামরিক বাহিনী কর্তৃক প্রশিক্ষিত একদল সেনার এ ধরনের পরিণতি সত্যিই হাস্যকর ও অচিন্তনীয়। আইএস যোদ্ধা কারা? যারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার পরও লড়াইয়ে টিকে আছে। যত দূর জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আইএস যোদ্ধাদের। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে সাদ্দাম হোসেনের সামরিক বাহিনীর কমান্ডারেরা। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযানের সময় এরা সিরিয়া, ইরান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আইএসের কিন্তু বিমান হামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। অন্তত এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাদের যতটুকু সাফল্য তা হচ্ছে স্থলযুদ্ধে।
আইএসের কাছে ইরাকি বাহিনীর পরাজয়ে প্রশ্ন উঠেছেÑ পেন্টাগন কি তাহলে অর্থের অপচয় করছে? ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণের নামে যে বিপুল অর্থ তারা ঢেলে যাচ্ছে, তা কি অপাত্রে ঢালা হচ্ছে? আফগানিস্তানেও কি একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে?
রাশিয়ার একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে সম্প্রতি ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর আর্থিক দুর্নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন বাহিনীতে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অবাক করার মতো। যেমনÑ যুদ্ধের সময় পাঁচ ডলারের একটি ইলেকট্রিক মাল্টিপ্লাগ কেনা হয়েছে ৯০০ ডলারে। এ ছাড়া প্রতি মিটার ওয়্যারিংয়ের খরচ দেখানো হয়েছে ৮০ ডলার, যার প্রকৃত খরচ হওয়ার কথা মাত্র ১.৫ ডলার। দুর্নীতির চিত্রটি আরো স্পষ্টভাবে বের হয়ে আসে যখন দেখা যায় পেন্টাগন একটি মাত্র কোম্পানিকে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সব কাজের দায়িত্ব দিয়ে দেয়। মজার বিষয় হলো, ‘ফোনি আলাস্কা’ নামে ওই কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বিষয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্রও নেই। অর্থাৎ ওই কাজের জন্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। তাহলে ধরে নেয়া যায় এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অবৈধ লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ ঘুষের বিনিময়ে ফোনি আলাস্কাকে ইরাকে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
একটি দুর্নীতি আরো দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করে। ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের জন্য ইলেকট্রিক সরঞ্জাম কেনা ও স্থাপন করা নিয়ে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে ইরাকি সৈন্যদের প্রশিক্ষণেও। সেখানে বিপুল অর্থ ব্যয় করেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তার প্রমাণ আইএসের কাছে ইরাকি বাহিনীর পরাজয়। বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে ইরাকে পেন্টাগনের ব্যর্থতা নতুন আরেকটি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তা হলো, আফগানিস্তান। সেখান থেকে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন বাহিনী তাদের সৈন্য এক লাখ ৪০ হাজার থেকে কমিয়ে ৫০ হাজারে নিয়ে আসার কথা ভাবছে। আফগান সেনাদের প্রশিক্ষিত করে ধীরে ধীরে ন্যাটো সৈন্য কমানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও যে ইরাক পরিস্থিতির পুরাবৃত্তি হবে না, তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে?
বর্তমানে আফগানিস্তানে তাদের নিজস্ব সৈন্যসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এটি নিঃসন্দেহে একটি বিশাল বাহিনী। এর সাথে আরো ৬০ হাজার সৈন্য যোগ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। এসব সেনাকে প্রশিক্ষণের জন্য চার হাজারেরও বেশি মার্কিন প্রশিক্ষক পাঠানো হচ্ছে। এদের পেছনে পেন্টাগন যে বিপুল অর্থ ব্যয় করবে তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কী পাবে? এতে তালেবানদের কি নিশ্চিহ্ন করা যাবে? মনে হয় না। কেননা ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতিতেই তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর যদি ন্যাটো তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় তাহলে তো তালেবানদের ঠেকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা তালেবানদের সাথে আলোচনার কথাও ভাবছে। তাহলে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণের নামে কেন বিপুল অর্থ ব্যয় করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র? উত্তরটা খুবই সোজাÑ এই প্রজেক্টের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। ফোনি আলাস্কার মতো কোনো কোম্পানি হয়তো পেন্টাগনের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন প্রশিক্ষক পাঠাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ওই কোম্পানি তাদের লাভ তুলে নেবে।
আরেকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা দরকার। তা হলোÑ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা। বিদেশী সৈন্যদের প্রশিক্ষণের নামে এই দুর্নীতি ও আর্থিক অপচয়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো তেমন সোচ্চার নয়। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু গণমাধ্যমে গুরুত্বহীনভাবে খবরগুলো এলেও তা তেমন কারো চোখে পড়ছে না।
ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়া ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক স্থানে মার্কিন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত সেনারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। নাইজেরিয়াতে বিদ্রোহী বোকো হারামরা সরকারি বাহিনীকে প্রায়ই নাস্তানাবুদ করছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে তারা এতটাই সফল যে সম্প্রতি সেখানে তারা মিনি খেলাফত কায়েম করেছে। অথচ সেখানে নাইজেরিয়া সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষকেরা সেখানে কাজ করছে।
আইএসআইএস তালেবান বা বোকো হারাম যোদ্ধাদের সাফল্য প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে কাজে লাগেনি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশের চৌকস সেনাদের প্রশিক্ষণ কেন কাজে লাগছে না তা ভালোভাবে অনুসন্ধান করা দরকার। তা না হলে বিদেশী সেনাদের প্রশিক্ষণের নামে অর্থের অপচয় বাড়তেই থাকবে।
আত্মঘাতী হামলায় মহিলা : ইসরাইলি সেনাবাহিনী, দ্য রেড আর্মি বা তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীতে মহিলা সদস্যের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা। কিন্তু আইএসের মতো একটি ইসলামিক দলে মহিলা যোদ্ধাদের থাকা এবং সরাসরি রণাঙ্গনে অংশ নেয়া অনেককেই অবাক করেছে। পশ্চিমা মিডিয়া অবশ্য মহিলাদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার বিষয়টির চেয়ে তাদের কেলেঙ্কারির খবরই বেশি প্রচার করতে উৎসাহী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মহিলারা আইএসের পক্ষে বীরদর্পেই লড়াই করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মেয়েরা আইএসে যোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অন্য দিকে কুর্দিরাও আইএসের বিরুদ্ধে নারী যোদ্ধাদের ব্যবহার করছে। সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফ ও দি ইনডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই আত্মঘাতী হামলায় নারীদের ব্যবহার করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিম নারীদের এ ধরনের অংশগ্রহণ অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।
No comments