বাড়বে দাম, না লোডশেডিং? by অরুণ কর্মকার
আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে
সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৪
শতাংশ ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ বাড়তি ভর্তুকি থাকার পরও এই
খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বিপুল পরিমাণ লোকসান দিচ্ছে।
এ
অবস্থায় ভর্তুকি কমিয়ে এই খাতের ব্যয় কীভাবে মেটানো হবে জানতে চাইলে সরকারি
সূত্রগুলো জানায়, ব্যয় মেটানোর জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হতে
পারে। এর বিকল্প হতে পারে বিদ্যুতের উৎপাদন ও জ্বালানির সরবরাহ কমিয়ে
লোডশেডিং বাড়ানো।
চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি ধরা আছে মোট ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি খাতের জন্য ১৫ হাজার ২৩০ কোটি এবং বিদ্যুৎ খাতের জন্য পাঁচ হাজার ১৭০ কোটি টাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু এই পরিমাণ ভর্তুকির পরও এই খাতে বিপুল লোকসানজনিত ঘাটতি রয়েছে।
আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য এই খাতে ভর্তুকি প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সাত হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের প্রায় অর্ধেক। লোকসানজনিত বিপুল ঘাটতি সত্ত্বেও ভর্তুকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনে এই খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরটি নির্বাচনের। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কিংবা লোডশেডিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে নির্বাচন তো আগামী জানুয়ারির মধ্যেই হয়ে যাবে। তারপর এর যেকোনো একটি পদক্ষেপ আগামী সরকারকে নিতেই হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, আইএমএফের কাছ থেকে সম্প্রসারিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফ) আওতায় অর্থ পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে মূল্য সমন্বয়ের নামে জ্বালানির দাম বাড়ানো। ওই ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১৩ মে আইএমএফের সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে জ্বালানির দাম বাড়ানোসহ অন্যান্য শর্ত পূরণের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ভর্তুকি কমানো হলেও বিদ্যুতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ভর্তুকি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এ বছর বিদ্যুতে নির্ধারিত ভর্তুকি হচ্ছে পাঁচ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে এই বর্ধিত ভর্তুকি দিয়েও বিদ্যুৎ খাতের, বিশেষ করে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না।
এ অবস্থায় হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, না হলে তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালিয়ে লোলশেডিং বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য বিকল্প হচ্ছে দাম বাড়ানো। তবে আগামী নির্বাচনের আগে সরকার বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি কোনোটির ক্ষেত্রেই দাম বাড়ানোর পথে না-ও যেতে পারে। ফলে বিষয়টি মেটানোর দায় পরবর্তী সরকারের ওপর ন্যস্ত হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকারের অরেকটি বিবেচনা হচ্ছে অর্থনীতির চাকা ঘোরানো। একটি ব্যাপার সরকারের কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে বিদ্যুৎ না থাকা কিংবা অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের তুলনায় বেশি দামের বিদ্যুৎ অর্থনীতির জন্য ভালো। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি গবেষণায়ও এই সত্য উঠে এসেছে, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নের পথনকশা: অগ্রগতির ধারা শীর্ষক পুস্তিকায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
সেখানে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বাড়লে সামষ্টিক পর্যায়ে অর্থনীতিতে উৎপাদন বাড়ে ক্ষেত্রবিশেষে চার কোটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা (১৯৯৫-৯৫ সালের মূল্যকে স্থির ধরে)। ধারণা করা যায়, কেবল ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের অবদান প্রায় ২৩ হাজার ৩১২ কোটি থেকে এক লাখ ২১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পর্যন্ত (২০১১-১২ অর্থবছরের মূল্য বিবেচনায়)।
বলা হয়েছে, ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে খাতভিত্তিক হ্রাসকৃত উৎপাদন এবং নিম্ন দেশজ উৎপাদনের ফলে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমত। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচক এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত খাতভিত্তিক সূচকে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারত।
ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে যত কম সময়ে যত বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেছে, বিদ্যমান কেন্দ্রগুলো মেরামত, সংরক্ষণ বা আধুনিকায়ন করে ওই সময়ে এতটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতো না।
চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি ধরা আছে মোট ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানি খাতের জন্য ১৫ হাজার ২৩০ কোটি এবং বিদ্যুৎ খাতের জন্য পাঁচ হাজার ১৭০ কোটি টাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু এই পরিমাণ ভর্তুকির পরও এই খাতে বিপুল লোকসানজনিত ঘাটতি রয়েছে।
আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য এই খাতে ভর্তুকি প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে সাত হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের প্রায় অর্ধেক। লোকসানজনিত বিপুল ঘাটতি সত্ত্বেও ভর্তুকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনে এই খাতের ব্যয় মেটানোর জন্য সরকারকে অবশ্যই জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরটি নির্বাচনের। এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কিংবা লোডশেডিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তবে নির্বাচন তো আগামী জানুয়ারির মধ্যেই হয়ে যাবে। তারপর এর যেকোনো একটি পদক্ষেপ আগামী সরকারকে নিতেই হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, আইএমএফের কাছ থেকে সম্প্রসারিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফ) আওতায় অর্থ পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে মূল্য সমন্বয়ের নামে জ্বালানির দাম বাড়ানো। ওই ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১৩ মে আইএমএফের সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে জ্বালানির দাম বাড়ানোসহ অন্যান্য শর্ত পূরণের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ভর্তুকি কমানো হলেও বিদ্যুতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ভর্তুকি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এ বছর বিদ্যুতে নির্ধারিত ভর্তুকি হচ্ছে পাঁচ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে এই বর্ধিত ভর্তুকি দিয়েও বিদ্যুৎ খাতের, বিশেষ করে ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে না।
এ অবস্থায় হয় ভর্তুকি বাড়াতে হবে, না হলে তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো কম চালিয়ে লোলশেডিং বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য বিকল্প হচ্ছে দাম বাড়ানো। তবে আগামী নির্বাচনের আগে সরকার বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানি কোনোটির ক্ষেত্রেই দাম বাড়ানোর পথে না-ও যেতে পারে। ফলে বিষয়টি মেটানোর দায় পরবর্তী সরকারের ওপর ন্যস্ত হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সরকারের অরেকটি বিবেচনা হচ্ছে অর্থনীতির চাকা ঘোরানো। একটি ব্যাপার সরকারের কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে বিদ্যুৎ না থাকা কিংবা অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের তুলনায় বেশি দামের বিদ্যুৎ অর্থনীতির জন্য ভালো। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি গবেষণায়ও এই সত্য উঠে এসেছে, যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নের পথনকশা: অগ্রগতির ধারা শীর্ষক পুস্তিকায় অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
সেখানে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বাড়লে সামষ্টিক পর্যায়ে অর্থনীতিতে উৎপাদন বাড়ে ক্ষেত্রবিশেষে চার কোটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা (১৯৯৫-৯৫ সালের মূল্যকে স্থির ধরে)। ধারণা করা যায়, কেবল ২০১১-১২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের অবদান প্রায় ২৩ হাজার ৩১২ কোটি থেকে এক লাখ ২১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা পর্যন্ত (২০১১-১২ অর্থবছরের মূল্য বিবেচনায়)।
বলা হয়েছে, ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে খাতভিত্তিক হ্রাসকৃত উৎপাদন এবং নিম্ন দেশজ উৎপাদনের ফলে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমত। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচক এবং কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণ-সংক্রান্ত খাতভিত্তিক সূচকে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারত।
ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র থেকে যত কম সময়ে যত বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেছে, বিদ্যমান কেন্দ্রগুলো মেরামত, সংরক্ষণ বা আধুনিকায়ন করে ওই সময়ে এতটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতো না।
No comments