১৫ জুন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতি by শরিফুল হাসান
রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল শহরে বইছে
তুমুল নির্বাচনী হাওয়া। সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা
ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও স্থানীয়
বিষয়গুলোর চেয়ে জাতীয় বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
ফলে চাপা পড়ে যাচ্ছে স্থানীয় সমস্যাগুলো।
চার সিটিতেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা তাঁদের গত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের নানা ইতিবাচক অর্জনের কথা তুলে ধরছেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা সাবেক মেয়র ও বর্তমান সরকারের নানা দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ব্যর্থতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও তুলছেন। তবে আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা বললেও বিএনপি এ বিষয়ে কিছুই বলছে না।
প্রার্থীরা নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হলেও সবাই বড় দুটি দলের নেতা। তাই তাঁরা নিজেদের ১৪-দলীয় জোট কিংবা ১৮-দলীয় জোটের একক প্রার্থী বলতে দ্বিধা করছেন না। এ নির্বাচন অবশ্য চার মহানগরেই সীমাবদ্ধ নেই। ১৪ দল ও ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন, তেমনি আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতারাও প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।
১৫ জুনের এ নির্বাচনকে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখছে দুই দলই। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। চারটিতেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি মনে করছে, এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে চার সিটিতেই তারা জয়ী হবে। এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে, জয় হবে তাদেরই। আর পরাজয় হলে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, আপাত দৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করলেও শেষ মুহূর্তে টাকার খেলা শুরু হতে পারে। কারণ, নির্বাচনগুলো হচ্ছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দলীয়ভিত্তিক। এখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। এসব কারণেই নির্বাচনী প্রচারণায় স্থানীয় সমস্যাগুলো গুরুত্ব হারিয়ে জাতীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। স্থানীয় উন্নয়নে এটি অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবেও আলোচিত। রাজশাহীর একজন ভোটারের মতে, দুই দলের প্রার্থীই বড় দুটি দলের নেতা। দু-একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলে এলাকার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হতো।
এ বিষয়ে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মেয়র নির্বাচনের পরেই যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো এখানে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। মূলত সে কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আসছে। আর এ নির্বাচনের ফলও জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।
রাজশাহীতে ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন নাগরিক ফোরামের প্রার্থী। তিনি সমর্থন পেয়েছেন ১৮ দলের।
খায়রুজ্জামান তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় গত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। বিশেষ করে রাজশাহীতে গ্যাস-সংযোগের কথা বারবার বলছেন তিনি। অন্যদিকে মোসাদ্দেক হোসেন সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি সরকারের সাম্প্রতিক হেফাজতবিরোধী নীতির সমালোচনা করছেন। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথাও জোরেশোরে তুলে ধরছেন তিনি।
খুলনায় অবশ্য জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল চালু হওয়া, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ও জয়-পরাজয়ে প্রভাব রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রতিপক্ষ এগুলোকে ‘লোক দেখানো’ বা ‘বাড়িয়ে বলা’ বলে প্রচার করছে।
খুলনায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মহানগর অওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান ঐক্যবদ্ধ নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। মনিরুজ্জামান মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
খুলনার নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের তাণ্ডবের বিষয়টি তুলে ধরছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম গত শনিবার খুলনায় দলের বর্ধিত সভায় বলেছেন, সারা দেশে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তা রুখে দাঁড়াতে হবে।
তালুকদার খালেক প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ গত পাঁচ বছরে এই সরকারের উন্নয়ন দেখেছে। খুলনার উন্নয়ন দেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ভোটের সময় মানুষ এ বিষয়গুলো বিবেচনা করবেই।
বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি। তবে সরকার হেফাজতের ওপর নিপীড়ন করেছে—এমন কথা তিনি মসজিদে গিয়ে বলে ভোটারদের উসকে দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে।
জাতীয় বিষয়গুলো নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ছোটখাটো যেকোনো নির্বাচনেই জাতীয় বিষয়গুলো উঠে আসে। সংসদ নির্বাচনের আগে মেয়র নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় বিষয় হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিও নির্বাচন করছেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করছেন। দুই নেতাই জরুরি অবস্থার সময় জেল খেটেছেন।
সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মীয় নানা বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলছেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, পরিবর্তন নয়, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় আওয়ামী লীগকেই আবার দরকার।
জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো নির্বাচনে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, জানতে চাইলে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশে দমন-পীড়নের মাধ্যমে যেভাবে ধর্মীয় বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছে, সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘উন্নয়নের স্বার্থে আমি সবার সমর্থন চাই।’
বরিশালে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। আর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করছেন।
এখানে নির্বাচনী প্রচারণায় শওকত হোসেন মূলত উন্নয়নের কথাই বলছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মেয়র থাকাকালে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, সেগুলোই ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছেন।
তবে বিএনপির প্রার্থী সরকারের নানা দুর্নীতি, নিপীড়ন ও ব্যর্থতার কথা বলছেন। বিশেষ করে তাঁর সঙ্গে থাকা সাবেক মেয়র মজিবর রহমান তাঁর বক্তব্যে সরকারের অপকর্ম, হেফাজতের ওপর পুলিশের হামলার কথা বলে ভোট চাইছেন।
সর্বশেষ গতকাল রোববার বরিশালে ১৮ দলের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও জানিয়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, নির্বাচন কমিশনের জন্যও এ নির্বাচন একটি পরীক্ষা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কমিশনের কর্মদক্ষতার প্রমাণ মিলবে। এ নির্বাচনকে ঘিরেই আবর্তিত হতে পারে আগামীর জাতীয় রাজনীতি।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশালের প্রতিনিধিরা}
চার সিটিতেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা তাঁদের গত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারের নানা ইতিবাচক অর্জনের কথা তুলে ধরছেন। অন্যদিকে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা সাবেক মেয়র ও বর্তমান সরকারের নানা দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ব্যর্থতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও তুলছেন। তবে আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা বললেও বিএনপি এ বিষয়ে কিছুই বলছে না।
প্রার্থীরা নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হলেও সবাই বড় দুটি দলের নেতা। তাই তাঁরা নিজেদের ১৪-দলীয় জোট কিংবা ১৮-দলীয় জোটের একক প্রার্থী বলতে দ্বিধা করছেন না। এ নির্বাচন অবশ্য চার মহানগরেই সীমাবদ্ধ নেই। ১৪ দল ও ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন, তেমনি আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতারাও প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।
১৫ জুনের এ নির্বাচনকে সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখছে দুই দলই। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। চারটিতেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। বিএনপি মনে করছে, এবার জাতীয় নির্বাচনের আগে চার সিটিতেই তারা জয়ী হবে। এর ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে আওয়ামী লীগ মনে করছে, জয় হবে তাদেরই। আর পরাজয় হলে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, আপাত দৃষ্টিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করলেও শেষ মুহূর্তে টাকার খেলা শুরু হতে পারে। কারণ, নির্বাচনগুলো হচ্ছে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দলীয়ভিত্তিক। এখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীও নেই। এসব কারণেই নির্বাচনী প্রচারণায় স্থানীয় সমস্যাগুলো গুরুত্ব হারিয়ে জাতীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাচ্ছে। স্থানীয় উন্নয়নে এটি অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতি প্রাধান্য পাওয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবেও আলোচিত। রাজশাহীর একজন ভোটারের মতে, দুই দলের প্রার্থীই বড় দুটি দলের নেতা। দু-একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বি থাকলে এলাকার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হতো।
এ বিষয়ে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মেয়র নির্বাচনের পরেই যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো এখানে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। মূলত সে কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আসছে। আর এ নির্বাচনের ফলও জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।
রাজশাহীতে ১৪ দল-সমর্থিত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন নাগরিক ফোরামের প্রার্থী। তিনি সমর্থন পেয়েছেন ১৮ দলের।
খায়রুজ্জামান তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় গত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। বিশেষ করে রাজশাহীতে গ্যাস-সংযোগের কথা বারবার বলছেন তিনি। অন্যদিকে মোসাদ্দেক হোসেন সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি সরকারের সাম্প্রতিক হেফাজতবিরোধী নীতির সমালোচনা করছেন। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথাও জোরেশোরে তুলে ধরছেন তিনি।
খুলনায় অবশ্য জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল চালু হওয়া, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ও জয়-পরাজয়ে প্রভাব রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে প্রতিপক্ষ এগুলোকে ‘লোক দেখানো’ বা ‘বাড়িয়ে বলা’ বলে প্রচার করছে।
খুলনায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মহানগর অওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন। এখানে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান ঐক্যবদ্ধ নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। মনিরুজ্জামান মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
খুলনার নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের তাণ্ডবের বিষয়টি তুলে ধরছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম গত শনিবার খুলনায় দলের বর্ধিত সভায় বলেছেন, সারা দেশে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তা রুখে দাঁড়াতে হবে।
তালুকদার খালেক প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ গত পাঁচ বছরে এই সরকারের উন্নয়ন দেখেছে। খুলনার উন্নয়ন দেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ভোটের সময় মানুষ এ বিষয়গুলো বিবেচনা করবেই।
বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি। তবে সরকার হেফাজতের ওপর নিপীড়ন করেছে—এমন কথা তিনি মসজিদে গিয়ে বলে ভোটারদের উসকে দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে।
জাতীয় বিষয়গুলো নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ছোটখাটো যেকোনো নির্বাচনেই জাতীয় বিষয়গুলো উঠে আসে। সংসদ নির্বাচনের আগে মেয়র নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় বিষয় হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিও নির্বাচন করছেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করছেন। দুই নেতাই জরুরি অবস্থার সময় জেল খেটেছেন।
সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মীয় নানা বিষয়ও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলছেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, পরিবর্তন নয়, দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় আওয়ামী লীগকেই আবার দরকার।
জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলো নির্বাচনে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, জানতে চাইলে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশে দমন-পীড়নের মাধ্যমে যেভাবে ধর্মীয় বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছে, সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘উন্নয়নের স্বার্থে আমি সবার সমর্থন চাই।’
বরিশালে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি সম্মিলিত নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। আর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহসান হাবিব জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদের ব্যানারে নির্বাচন করছেন।
এখানে নির্বাচনী প্রচারণায় শওকত হোসেন মূলত উন্নয়নের কথাই বলছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মেয়র থাকাকালে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, সেগুলোই ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছেন।
তবে বিএনপির প্রার্থী সরকারের নানা দুর্নীতি, নিপীড়ন ও ব্যর্থতার কথা বলছেন। বিশেষ করে তাঁর সঙ্গে থাকা সাবেক মেয়র মজিবর রহমান তাঁর বক্তব্যে সরকারের অপকর্ম, হেফাজতের ওপর পুলিশের হামলার কথা বলে ভোট চাইছেন।
সর্বশেষ গতকাল রোববার বরিশালে ১৮ দলের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও জানিয়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, নির্বাচন কমিশনের জন্যও এ নির্বাচন একটি পরীক্ষা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কমিশনের কর্মদক্ষতার প্রমাণ মিলবে। এ নির্বাচনকে ঘিরেই আবর্তিত হতে পারে আগামীর জাতীয় রাজনীতি।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশালের প্রতিনিধিরা}
No comments