অনলাইন থেকে-দামেস্কের প্রজাপতিগুলো
১৯৩৬ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় একটি
সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ৮২ জন মরোক্কান, ৫৩ জন ইতালীয়, ৪৮ জন
রুশ, ৩৪ জন জার্মান, ১৭ জন ইংরেজ, ১৩ জন আমেরিকান ও আটজন ফরাসি নিহত হয়েছে।
একজন স্পেনীয়ও আছে।
মাদ্রিদের জনগণ তখন মন্তব্য করেছে, সঠিক কাজ হয়েছে, কেন ওরা ওই সময় নাক গলাতে গিয়েছিল।
একই কথা এখন বলা যেতে পারে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে। গোটা মুসলিম জগৎ থেকে শিয়ারা স্রোতের মতো এসে সিরিয়ায় ঢুকছে বাশার আল আসাদকে রক্ষা করতে। আর বিভিন্ন দেশ থেকে সুন্নিরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে। সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে সীমানার বাইরেও। এ অঞ্চলব্যাপী, হয়তো বিশ্বব্যাপী এটি একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো পরাজিত অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। উপনিবেশ গত হওয়ার পর সেলফ ডিটারমিনেশন এসে হাজির হয়। সৃষ্টি হয় নতুন আরেক উপনিবেশ। ইউরোপের স্টাইলের জাতীয়তাবাদ আরব জাতিগুলোকে দখল করে ফেলে। মুসলিম উম্মাহর অতীতের ধারণাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। বাথ পার্টি এবং মিসরের গামাল আবদুল নাসেরের প্যান-আরব সুপার স্টেটের ধারণা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয় এবং তা ব্যর্থ হয়। সিরিয়ান জাতীয়তা, ইরাকি জাতীয়তা, মিসরের জাতীয়তা ও ফিলিস্তিনের জাতীয়তা বিজয়ী হয়। কিন্তু এটা ছিল সন্দেহজনক বিজয়। দামেস্কের একজন জাতীয়তাবাদী সিরিয়ান একই সঙ্গে আরব, একজন বৈশ্বিক এবং সুন্নি সম্প্রদায়ের সদস্য। এই বহুমুখী আনুগত্য কখনোই বাছবিচার করে সঠিক পরিচয় গ্রহণ করা হয়নি।
ইউরোপের বিষয়টি ছিল ভিন্ন। সেখানকার জাতীয়তা কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি। একজন আধুনিক জার্মান হতে পারেন একই সঙ্গে ব্যাভারিয়ার অধিবাসী এবং ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তাঁর প্রথম ও প্রধান পরিচয়, তিনি একজন জার্মান। শেষ কয়েক দশকে আরব বিশ্বের স্থানীয় জাতীয়তা সুনিশ্চিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কিছুদিন টিকে থাকার পর ১৯৬১ সালে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক ভেঙে যায়। ফলে সিরিয়ানরা গর্বের সঙ্গে নিজেদের পাসপোর্ট গ্রহণ করে এবং আরব জাতিরাষ্ট্র প্রকট হয়ে ওঠে।
কিন্তু তা এখন আর নেই। বর্তমান বিশাল পরিবর্তনের বিশেষ গুরুত্ব বুঝতে হলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। দুই হাজার বছর আগে আধুনিক জাতিসত্তার কথা কল্পনাও করা যেত না। সর্বত্র দেখা যেত ধর্মীয় গোষ্ঠী সম্প্রদায়। কোনো সম্প্রদায় ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা নির্ধারিত হতো না। আলেকজান্দ্রিয়ার একজন ইহুদি বিয়ে করতে পারত ব্যাবিলনের ইহুদিকে, কিন্তু পাশের বাড়ির খ্রিস্টান মেয়েটিকে নয়।
লেখক : ইউরি আভনেরি। ভারতের আউটলুক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের কিছু অংশ। ভাষান্তর : ম.হা.
একই কথা এখন বলা যেতে পারে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে। গোটা মুসলিম জগৎ থেকে শিয়ারা স্রোতের মতো এসে সিরিয়ায় ঢুকছে বাশার আল আসাদকে রক্ষা করতে। আর বিভিন্ন দেশ থেকে সুন্নিরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে। সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে সীমানার বাইরেও। এ অঞ্চলব্যাপী, হয়তো বিশ্বব্যাপী এটি একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো পরাজিত অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। উপনিবেশ গত হওয়ার পর সেলফ ডিটারমিনেশন এসে হাজির হয়। সৃষ্টি হয় নতুন আরেক উপনিবেশ। ইউরোপের স্টাইলের জাতীয়তাবাদ আরব জাতিগুলোকে দখল করে ফেলে। মুসলিম উম্মাহর অতীতের ধারণাকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। বাথ পার্টি এবং মিসরের গামাল আবদুল নাসেরের প্যান-আরব সুপার স্টেটের ধারণা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয় এবং তা ব্যর্থ হয়। সিরিয়ান জাতীয়তা, ইরাকি জাতীয়তা, মিসরের জাতীয়তা ও ফিলিস্তিনের জাতীয়তা বিজয়ী হয়। কিন্তু এটা ছিল সন্দেহজনক বিজয়। দামেস্কের একজন জাতীয়তাবাদী সিরিয়ান একই সঙ্গে আরব, একজন বৈশ্বিক এবং সুন্নি সম্প্রদায়ের সদস্য। এই বহুমুখী আনুগত্য কখনোই বাছবিচার করে সঠিক পরিচয় গ্রহণ করা হয়নি।
ইউরোপের বিষয়টি ছিল ভিন্ন। সেখানকার জাতীয়তা কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়নি। একজন আধুনিক জার্মান হতে পারেন একই সঙ্গে ব্যাভারিয়ার অধিবাসী এবং ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। কিন্তু তাঁর প্রথম ও প্রধান পরিচয়, তিনি একজন জার্মান। শেষ কয়েক দশকে আরব বিশ্বের স্থানীয় জাতীয়তা সুনিশ্চিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কিছুদিন টিকে থাকার পর ১৯৬১ সালে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক ভেঙে যায়। ফলে সিরিয়ানরা গর্বের সঙ্গে নিজেদের পাসপোর্ট গ্রহণ করে এবং আরব জাতিরাষ্ট্র প্রকট হয়ে ওঠে।
কিন্তু তা এখন আর নেই। বর্তমান বিশাল পরিবর্তনের বিশেষ গুরুত্ব বুঝতে হলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। দুই হাজার বছর আগে আধুনিক জাতিসত্তার কথা কল্পনাও করা যেত না। সর্বত্র দেখা যেত ধর্মীয় গোষ্ঠী সম্প্রদায়। কোনো সম্প্রদায় ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা নির্ধারিত হতো না। আলেকজান্দ্রিয়ার একজন ইহুদি বিয়ে করতে পারত ব্যাবিলনের ইহুদিকে, কিন্তু পাশের বাড়ির খ্রিস্টান মেয়েটিকে নয়।
লেখক : ইউরি আভনেরি। ভারতের আউটলুক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের কিছু অংশ। ভাষান্তর : ম.হা.
No comments