আমরা নড়িব না

২০০৬ থেকে ২০১৩। প্রায় ৭ বছর। সময়টা কিন্তু একেবারেই কম নয়। দুনিয়ায় কত কিছু ঘটে গেল এই সময়ে। বাংলাদেশে ঘটেনি তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশেও ওলট-পালট হয়েছে কত কিছু। কিন্তু বদলায়নি বাংলাদেশী রাজনীতির চেহারা। বরং খারাপ হয়েছে।
২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৩-তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবর্তন এটুকুই। তবে মাঝখানে রাজনীতিতে ভূমিকম্প হয়ে গেছে। ওয়ান ইলেভেন এসেছে। দুই নেত্রী জেলে গেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী। অপরজন বিরোধী নেত্রী। রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোন পরিবর্তন হয়নি। নির্বাচন নিয়ে সেই জট। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না। প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আর খাল কেটে কুমির আনা হবে না’। ওই সময়ে বিচারপতি কেএম হাসানের জন্য নির্বাচনে যেতে চাননি শেখ হাসিনা। অভিযোগ, কোনকালে হাসান সাহেব বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন শেখ হাসিনা বলছেন তার অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। তিনি একাধারে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বেগম জিয়ার আপত্তি সেখানেই। অচল অবস্থা। হরতাল হচ্ছে, অবরোধ হচ্ছে। মানুষের প্রাণ যাচ্ছে অকাতরে। বাংলাদেশী পুলিশ গাদ্দাফি কিংবা আসাদের পুলিশের মতো পাইকারিভাবে গুলি করছে। গুলির সংস্কৃতি চালু হয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদায় নিয়েছে। এর মধ্যে আবার সভা-সমাবেশ, এমনকি মানববন্ধনও বন্ধ। রিমান্ড আতঙ্ক চারদিকে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জেলে নেয়ার ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রায় ১৫ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী এখন জেলখানায়। নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাস চরম রূপ নিয়েছে। হেফাজত চমক সৃষ্টি করে আপাতত নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের আওয়াজও থেমে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। রায় কার্যকর নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ, নানা সংশয়। নির্বাচন সামনে, জট খুলছে না। বিরোধীরা তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। সরকার তো নড়বেই না। বরং নতুন করে সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। সরকার ভাবছেন বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত কিছুই করতে পারবে না। তাই পুরনো রাজনৈতিক কৌশল অর্থাৎ বিরোধীদের বাদ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়া। ১৯৮৮ কিংবা ’৯৬-এর পথ ধরে নির্বাচনে যেতে চান শেখ হাসিনা। এই পথ সহজ মনে হলেও সহজ নয়। শক্তির লড়াই রাজপথে হয়েছে বন্দুকের সঙ্গে। সাময়িকভাবে বন্দুক হয়তো জয়লাভ করেছে। তাই বলে চূড়ান্ত হিসাব মেলানো কি ঠিক হবে? অভিজ্ঞতা কি বলে? আখেরে জিতে জনগণ। তাই সময় থাকতে সমঝোতার পথে আসা উচিত। এই যুক্তি কে শোনে। জাতিসংঘ যুক্ত হয়েছে। দেশে দেশে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ ভাল বার্তা দেয় না। দুই নেত্রী এটা যে জানেন না তা নয়। জেনেও তারা বলছেন সবকিছু নড়ে যাক, আমরা নড়িব না। একজন সংবিধান নিয়ে, অন্যজন ব্যক্তি পরিবর্তনের জন্য মরিয়া।

No comments

Powered by Blogger.