সরকারের কর্মকাণ্ডঃ বাকশালের নামান্তর মাত্র by আবদুল্লাহ্ আল মেহেদী
ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে একটি সম্প্রদায়
ছিল, যারা পৃথিবীতে চার্বাক নামে পরিচিত। তারা বেদ বিরোধী তাই তাদের
নাস্তিক বলে আখ্যা দেয়া হয়। মূলত তারা ছিল লোকজ। তারা পরলোকে তথা পরকালের
প্রতি কিংবা ঈশ্বরের প্রতিও বিশ্বাসী ছিল না।
তারা মনে
করত জগত্ ভোগ ও বিলাসের স্থান, যত খুশি ভোগ ও অর্জনে নিজকে ব্যস্ত রাখো।
তারা বলত প্রয়োজনে ঋণ করে ঘি খাও। তাদের ভাষ্য দুনিয়াটা একটি বিশাল
রঙ্গমঞ্চ আর আমরা এ মঞ্চের অভিনেতা-অভিনেত্রী। ঠিক বর্তমানে আমরা তাই
প্রত্যক্ষ করছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দৈন্দিন আচরণে।
দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চে মানুষ দুদিনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন আবার দুদিন পরে ক্ষমচুত্য হন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীনরা স্বৈরাচারী ও ক্ষমতার দাপটে শক্তিশালী হয়ে থাকে। ক্ষমতা গ্রহণের আগে তারা মানবতার জয়গান জোর গলায় বলে, ক্ষমতার দম্ভে পরে ভুলে যায় আবার। যখন সময় শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজে তখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিষ্ঠুর আচরণ শুরু করে। ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তখন বিরোধী তাঁবু তথা শিবির থেকে আসে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। ক্ষমতাসীনরা এ কথা মোটেও কর্ণপাত করেন না যে তারা এক সময় বিরোধী শিবিরে ছিল বা ভবিষ্যতে আবার যেতে হবে।
অতিরঞ্জিত মনে হলেও কথাগুলো যথাসত্য ও বাস্তবসম্মত। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার মোহে এতই ব্যতিব্যস্ত যে তারা যা করেন তাই সঠিক ও কার্যকর বলে মনে করেন। আর মদতপুষ্ট কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ রাঘব-বোয়ালরা আমতা আমতা করেন। এ দেশের স্বাধীনতার পর চলমানকাল পর্যন্ত কমবেশি সরকার বাহাদুররা অনেক ধরনের নিচু-হীন কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছেন ও দিয়েছেন। তবে কোনো সরকারই গণতান্ত্রিকভাবে একাধারে অধিক সময় ক্ষমতার মসনদ চালাতে পারেননি। ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে।
এ দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য এখনও প্রতিটি সাধারণ মানুষকে যুক্ত করাতে পারেনি সরকার। যা জাতি হিসেবে সত্যি দুর্ভাগ্য ও হতাশাব্যঞ্জক। যদিও আওয়ামী সরকার সব ক্ষমতার দাবিদার হিসেবে নাগরিকদেরই মান্য করে। দেশে এখন জাতিকে বিভক্ত করার কঠিন প্রচেষ্টা চলছে। মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিকও ভাবে আমি একজন নাগরিক, আমার অধিকার কেবল আমারই, আমার প্রাপ্যের দাবিদার আমিই। আমি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিনিধি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরবর্তী নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অনির্বাচিত প্রার্থীরা সাহস করে গর্ব করে বলতে পারেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আমারই প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আমাদের দেশ তার বিপরীত।
সরকার ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণেই কার্যকর হয়ে ওঠে গণতন্ত্র। উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক হলেও আমাদের দেশে গণতন্ত্র বাস্তবে অকার্যকর হওয়ার পেছনে এই দুইপক্ষের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক না থাকার অবদান সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। বিরোধী দলকে ক্ষমতাসীনদের শত্রু গণ্য করাও নতুন নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে সরকারের ভূমিকাই যে প্রধান, সেটাও সবার জানা। সরকার পক্ষ যদি বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে তবে পরিস্থিতির চাপ অস্বীকার করে একলা চলা বিরোধী দলের পক্ষে বেশি দিন সম্ভব হয় না। গণতান্ত্রিক দেশে এমনটাই দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার বিরোধী দলের ওপর কীভাবে চড়াও হয় সেটা প্রকাশ্যেই দেখা যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সেটা আবারও প্রমাণ করেছে। তিনি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে হামলা-মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টার অভিযোগই আবারও প্রকট হয়ে উঠল। বিরোধী দল সরকারের ভুলভ্রান্তি, ব্যর্থতার প্রতিবাদ করবে, দাবি তুলবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার এ নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের রয়েছে নিজস্ব দায়িত্ব। যেমন দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবারই তার সফলতা দাবি করলেও বাস্তবে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। গ্রিন রোডে নিজ বেডরুমে খুন হলেন এক সরকারদলীয় ঠিকাদার, তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। রাজবাড়ীতে যুবদল নেতাকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। দেশজুড়ে এমন ঘটনা মোটেই নতুন নয়। অপরাধী দমনে আইন রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন তাদের মধ্যেও অপরাধপ্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজধানীর একটি থানার কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়া থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করা যায়। কিছুদিন আগে পুলিশের ধাক্কায় এক বিরোধীদলের নেতার মৃত্যু হলো রাজধানীতে।
বিরোধীদলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ১৮ দলীয় জোটের ২৯ নেতার বিরুদ্ধে আদালতের অভিযোগপত্র গ্রহণের ঘটনাও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ মামলার এজাহারে উল্লিখিত দুই মোটরসাইকেল আরোহী, যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে, তাদর শনাক্ত না করেই সহযোগী হিসেবে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়া গ্রহণযোগ্য কিনা, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। এভাবে একের পর এক মামলায় বিরোধী নেতাদের জড়িয়ে তাদের রাজনীতির মাঠ থেকেই শুধু নয়, নির্বাচন থেকেও দূরে রাখাই সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা, তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের তরফ থেকে জামায়াত-শিবির নিধনের নামে সন্দেহভাজন জনসাধারণকে ধরে নিয়ে গ্রেফতারবাণিজ্য চলছে হামেশাই। প্রতিদিন থানার সামনে স্বজনরা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে হাতে অর্থ-পয়সা নিয়ে। ২ থেকে ২৫ বা ৩০ হাজার দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। নচেত্ মিথ্যা হত্যা, বিস্ফোরক ও অস্র মামলা জুটবে কপালে। শাহবাগে পুলিশি তিনস্তর প্রহরায় সরকারি আদর ও আপ্যায়নে ভূষিত হলো তথাকথিত গণজাগরণের পদভ্রষ্টরা, অন্যদিকে আলেম-ওলামাদের পল্টন সমাবেশ, হেফাজতে ইসলামীসহ ইসলামী আন্দোলনের সব দলের ওপর চলছে সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতন। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এ কোন আচরণ? প্রধানমন্ত্রী একদিন বড় গলায় বলেছিলেন, বাকশাল ছিল দুঃখী মানুষের গণতন্ত্র। আওয়ামী লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের অধিকার পূর্ণপ্রতিষ্ঠা। তিনি কি এখন আবার সেই দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত?
বর্তমান বাংলাদেশে প্রশাসনযন্ত্র নেই বললেই চলে। মানুষ এখন পুলিশ ও আদালতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, পুলিশকে খুব ভয় পায়। বিপদে পড়লেও এখন পুলিশের সহায়তা নেয় না। মানুষ এখন আওয়ামী লীগের ক্যাডার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর পুলিশকে একই দলভুক্ত অত্যাচারী মনে করে। পুলিশের পেছনে ছাত্রলীগ অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন ছবি আসছে সংবাদপত্রের পাতায়। ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে গাল-মন্দ, মিথ্যা অপবাদ,কটূক্তি, বাজে কথা উচ্চারণ করছেন উঁচু সুরেই। তারা নিজদের কখনও দায়বদ্ধ ভাবেন না। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে ক্ষেপিয়ে তোলায় ফল কী হতে পারে, সেটা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট যে কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সাধারণ নির্বাচন দরজায় যখন কড়া নাড়ছে।
আওয়ামী মহাজোট সরকারের নেতারা সে চিন্তা থেকেই কি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন? তারা ইতিহাস থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনমূলক আচরণে অসন্তুষ্ট খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তাদের ভাষ্য এই শেষ মুহুর্তে এবং নির্বাচনী সময়ে দমন-পীড়ন কর্মকাণ্ড মোটেও শুভ নয়। এতে নির্বাচনের সময় বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এমনিতেই সরকারের ব্যর্থতার ফর্দ অনেক লম্বা। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী, রেল দুর্নীতি, সোনালী ব্যাংক হরিলুট, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সংবাদিক দম্পতি খুনসহ আলেমদের ওপর খড়গ হস্ত, গণমাধ্যম কণ্ঠ চেপে ধরা, দলীয় লোকদের দখলবাজি, টেন্ডরবাজি, সরকারি সম্পদ আত্মসাত্, মন্ত্রীদের অসহনীয় ব্যর্থতা, এমপিদের অসংলগ্ন বক্তব্য ইত্যাদির জন্য সরকারের জনপ্রিয়তা বেশ হ্রাসের দিকে। এই মুহূর্তে সরকারের এই আচরণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার পালাবদল হলে অবস্থা শোচনীয় হতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হয়েছে-‘কমিউনিস্ট সেক্যুলার ও ভারতপন্থীরা সরকার ও দলে খবরদারি করছে। প্রাচীন দলটি এখন ধ্বংসের মুখে।’ তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। গ্রামভিত্তিক রাজনীতি স্থবিরতার পথে। ইউনিয়ন কাউন্সিল এখনও সব জায়গায় হয়নি। যোগ্য নেতারা পদ পায়নি।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বছরজুড়ে ঘটা করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা তুলে ধরেছে তাদের বিবরণীতে। এতে ঠাঁই পেয়েছে ডজনখানেক ঘটনা। তাদের শিরোনাম ছিল-বাংলাদেশে বিনাবিচারে হত্যা ও গুম চলছেই। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিনা বিচারে ৩০ জনকে হত্যা, ১০ জনকে গুম এবং অনেকগুলো নির্যাতনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, কারখানায় আগুন, শ্রমিক নির্যাতন, ভবন ধস, আদিবাসীদের রক্ষায় ব্যর্থতা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, মন্দির ভাংচর, ব্যবসাকেন্দ্র ভাংচুর ঘটনার বিবরণ আসে প্রতিবেদনে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে তিনি, লাইফ সাপোর্টে তিনি আছেন। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে তিনি সঙ্কটাপন্ন। বারডেমে আছেন এই মাওলানা। পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে রিমান্ডের নির্যাতনে। এটা কি সভ্য দেশের সভ্য সরকারের কাজ হতে পারে? কত নির্মম এই নির্যাতন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী ও ডিফেন্স টিমের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন। বাসা থেকে পল্টনে তার চেম্বারে যাওয়ার পথে তার ওপর হামলা চালায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী জহির উদ্দিন জালাল। পুলিশ হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ওসির বর্বর নির্যাতনে শামিম রেজা নামে এক যুবকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। নিহতের বাবা আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, পুলিশ তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা উেকাচ নিয়েও শামিমকে নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। এরপর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশি তদন্তেও শামিমকে হত্যার জন্য তিন পুলিশ কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) অরূপ তরফদার, এসআই পল্টু ঘোষ এবং এএসপি উত্তম প্রসাদকে দায়ী করা হয়েছে। পুলিশি বর্বরতার সর্বশেষ খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক। এতে দেখা যায়, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার এক নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে ধরে এনে ব্যাপক নির্যাতন করে তার কাছ থেকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় ডিসি ডিবির অনুগত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কাজে তদবির করেন- এটি পুরনো তথ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা মাত্রা ছাড়িয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেতে অনেক সদস্য সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছেন। অন্ধকারে রাখা হচ্ছে পুলিশ সদর দফতরকে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের এমন অনেক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে তদন্তে। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। ক্ষমতাসীন সরকারের শেষ সময়ে এসে অবহেলিত ও বিশেষ সুবিধাভোগী পুলিশের মধ্যকার ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। অবহেলিত পুলিশ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিনের খেদ মেটাতে নিজেদের এখন শুধু রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর এ কারণে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশ বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে, আওয়ামী সমর্থিত অন্যান্য জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা এক পক্ষ এবং ‘বিশেষ জেলার’ কর্মকর্তারা আরেক পক্ষে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা নাজুক এ পরিস্থিতির কথা মুখে স্বীকার না করলেও এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে চরম উদ্বেগ রয়েছে। এ অবস্থায় চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী করে পুলিশের নিষ্ক্রিয় কর্মকর্তা ও সদস্যদের কীভাবে চাঙ্গা করা যায়, তার কৌশল নির্ধারণে সরকার তত্পর।
দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চে মানুষ দুদিনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন আবার দুদিন পরে ক্ষমচুত্য হন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীনরা স্বৈরাচারী ও ক্ষমতার দাপটে শক্তিশালী হয়ে থাকে। ক্ষমতা গ্রহণের আগে তারা মানবতার জয়গান জোর গলায় বলে, ক্ষমতার দম্ভে পরে ভুলে যায় আবার। যখন সময় শেষ হওয়ার ঘণ্টা বাজে তখন ক্ষমতা হারানোর ভয়ে নিষ্ঠুর আচরণ শুরু করে। ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তখন বিরোধী তাঁবু তথা শিবির থেকে আসে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। ক্ষমতাসীনরা এ কথা মোটেও কর্ণপাত করেন না যে তারা এক সময় বিরোধী শিবিরে ছিল বা ভবিষ্যতে আবার যেতে হবে।
অতিরঞ্জিত মনে হলেও কথাগুলো যথাসত্য ও বাস্তবসম্মত। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার মোহে এতই ব্যতিব্যস্ত যে তারা যা করেন তাই সঠিক ও কার্যকর বলে মনে করেন। আর মদতপুষ্ট কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ রাঘব-বোয়ালরা আমতা আমতা করেন। এ দেশের স্বাধীনতার পর চলমানকাল পর্যন্ত কমবেশি সরকার বাহাদুররা অনেক ধরনের নিচু-হীন কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছেন ও দিয়েছেন। তবে কোনো সরকারই গণতান্ত্রিকভাবে একাধারে অধিক সময় ক্ষমতার মসনদ চালাতে পারেননি। ইতিহাস এটাই প্রমাণ করে।
এ দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য এখনও প্রতিটি সাধারণ মানুষকে যুক্ত করাতে পারেনি সরকার। যা জাতি হিসেবে সত্যি দুর্ভাগ্য ও হতাশাব্যঞ্জক। যদিও আওয়ামী সরকার সব ক্ষমতার দাবিদার হিসেবে নাগরিকদেরই মান্য করে। দেশে এখন জাতিকে বিভক্ত করার কঠিন প্রচেষ্টা চলছে। মালয়েশিয়ায় একজন শ্রমিকও ভাবে আমি একজন নাগরিক, আমার অধিকার কেবল আমারই, আমার প্রাপ্যের দাবিদার আমিই। আমি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিনিধি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পরবর্তী নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে অনির্বাচিত প্রার্থীরা সাহস করে গর্ব করে বলতে পারেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আমারই প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আমাদের দেশ তার বিপরীত।
সরকার ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণেই কার্যকর হয়ে ওঠে গণতন্ত্র। উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাভাবিক হলেও আমাদের দেশে গণতন্ত্র বাস্তবে অকার্যকর হওয়ার পেছনে এই দুইপক্ষের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক না থাকার অবদান সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। বিরোধী দলকে ক্ষমতাসীনদের শত্রু গণ্য করাও নতুন নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে সরকারের ভূমিকাই যে প্রধান, সেটাও সবার জানা। সরকার পক্ষ যদি বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে তবে পরিস্থিতির চাপ অস্বীকার করে একলা চলা বিরোধী দলের পক্ষে বেশি দিন সম্ভব হয় না। গণতান্ত্রিক দেশে এমনটাই দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার বিরোধী দলের ওপর কীভাবে চড়াও হয় সেটা প্রকাশ্যেই দেখা যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য সেটা আবারও প্রমাণ করেছে। তিনি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর হুমকি দিয়েছেন। এর ফলে হামলা-মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টার অভিযোগই আবারও প্রকট হয়ে উঠল। বিরোধী দল সরকারের ভুলভ্রান্তি, ব্যর্থতার প্রতিবাদ করবে, দাবি তুলবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার এ নিয়ে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের রয়েছে নিজস্ব দায়িত্ব। যেমন দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবারই তার সফলতা দাবি করলেও বাস্তবে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। গ্রিন রোডে নিজ বেডরুমে খুন হলেন এক সরকারদলীয় ঠিকাদার, তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য। রাজবাড়ীতে যুবদল নেতাকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। দেশজুড়ে এমন ঘটনা মোটেই নতুন নয়। অপরাধী দমনে আইন রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন তাদের মধ্যেও অপরাধপ্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রাজধানীর একটি থানার কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়া থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করা যায়। কিছুদিন আগে পুলিশের ধাক্কায় এক বিরোধীদলের নেতার মৃত্যু হলো রাজধানীতে।
বিরোধীদলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ ১৮ দলীয় জোটের ২৯ নেতার বিরুদ্ধে আদালতের অভিযোগপত্র গ্রহণের ঘটনাও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ মামলার এজাহারে উল্লিখিত দুই মোটরসাইকেল আরোহী, যারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে, তাদর শনাক্ত না করেই সহযোগী হিসেবে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। মূল আসামিদের বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়া গ্রহণযোগ্য কিনা, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। এভাবে একের পর এক মামলায় বিরোধী নেতাদের জড়িয়ে তাদের রাজনীতির মাঠ থেকেই শুধু নয়, নির্বাচন থেকেও দূরে রাখাই সরকারের সিদ্ধান্ত কিনা, তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের তরফ থেকে জামায়াত-শিবির নিধনের নামে সন্দেহভাজন জনসাধারণকে ধরে নিয়ে গ্রেফতারবাণিজ্য চলছে হামেশাই। প্রতিদিন থানার সামনে স্বজনরা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে হাতে অর্থ-পয়সা নিয়ে। ২ থেকে ২৫ বা ৩০ হাজার দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। নচেত্ মিথ্যা হত্যা, বিস্ফোরক ও অস্র মামলা জুটবে কপালে। শাহবাগে পুলিশি তিনস্তর প্রহরায় সরকারি আদর ও আপ্যায়নে ভূষিত হলো তথাকথিত গণজাগরণের পদভ্রষ্টরা, অন্যদিকে আলেম-ওলামাদের পল্টন সমাবেশ, হেফাজতে ইসলামীসহ ইসলামী আন্দোলনের সব দলের ওপর চলছে সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতন। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এ কোন আচরণ? প্রধানমন্ত্রী একদিন বড় গলায় বলেছিলেন, বাকশাল ছিল দুঃখী মানুষের গণতন্ত্র। আওয়ামী লক্ষ্য ছিল দুঃখী মানুষের অধিকার পূর্ণপ্রতিষ্ঠা। তিনি কি এখন আবার সেই দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত?
বর্তমান বাংলাদেশে প্রশাসনযন্ত্র নেই বললেই চলে। মানুষ এখন পুলিশ ও আদালতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, পুলিশকে খুব ভয় পায়। বিপদে পড়লেও এখন পুলিশের সহায়তা নেয় না। মানুষ এখন আওয়ামী লীগের ক্যাডার, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর পুলিশকে একই দলভুক্ত অত্যাচারী মনে করে। পুলিশের পেছনে ছাত্রলীগ অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন ছবি আসছে সংবাদপত্রের পাতায়। ক্ষমতাসীনরা প্রতিপক্ষকে গাল-মন্দ, মিথ্যা অপবাদ,কটূক্তি, বাজে কথা উচ্চারণ করছেন উঁচু সুরেই। তারা নিজদের কখনও দায়বদ্ধ ভাবেন না। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে ক্ষেপিয়ে তোলায় ফল কী হতে পারে, সেটা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট যে কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় সাধারণ নির্বাচন দরজায় যখন কড়া নাড়ছে।
আওয়ামী মহাজোট সরকারের নেতারা সে চিন্তা থেকেই কি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন? তারা ইতিহাস থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনমূলক আচরণে অসন্তুষ্ট খোদ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তাদের ভাষ্য এই শেষ মুহুর্তে এবং নির্বাচনী সময়ে দমন-পীড়ন কর্মকাণ্ড মোটেও শুভ নয়। এতে নির্বাচনের সময় বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এমনিতেই সরকারের ব্যর্থতার ফর্দ অনেক লম্বা। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী, রেল দুর্নীতি, সোনালী ব্যাংক হরিলুট, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সংবাদিক দম্পতি খুনসহ আলেমদের ওপর খড়গ হস্ত, গণমাধ্যম কণ্ঠ চেপে ধরা, দলীয় লোকদের দখলবাজি, টেন্ডরবাজি, সরকারি সম্পদ আত্মসাত্, মন্ত্রীদের অসহনীয় ব্যর্থতা, এমপিদের অসংলগ্ন বক্তব্য ইত্যাদির জন্য সরকারের জনপ্রিয়তা বেশ হ্রাসের দিকে। এই মুহূর্তে সরকারের এই আচরণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার পালাবদল হলে অবস্থা শোচনীয় হতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হয়েছে-‘কমিউনিস্ট সেক্যুলার ও ভারতপন্থীরা সরকার ও দলে খবরদারি করছে। প্রাচীন দলটি এখন ধ্বংসের মুখে।’ তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। গ্রামভিত্তিক রাজনীতি স্থবিরতার পথে। ইউনিয়ন কাউন্সিল এখনও সব জায়গায় হয়নি। যোগ্য নেতারা পদ পায়নি।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বছরজুড়ে ঘটা করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা তুলে ধরেছে তাদের বিবরণীতে। এতে ঠাঁই পেয়েছে ডজনখানেক ঘটনা। তাদের শিরোনাম ছিল-বাংলাদেশে বিনাবিচারে হত্যা ও গুম চলছেই। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিনা বিচারে ৩০ জনকে হত্যা, ১০ জনকে গুম এবং অনেকগুলো নির্যাতনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, কারখানায় আগুন, শ্রমিক নির্যাতন, ভবন ধস, আদিবাসীদের রক্ষায় ব্যর্থতা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, মন্দির ভাংচর, ব্যবসাকেন্দ্র ভাংচুর ঘটনার বিবরণ আসে প্রতিবেদনে। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে তিনি, লাইফ সাপোর্টে তিনি আছেন। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে তিনি সঙ্কটাপন্ন। বারডেমে আছেন এই মাওলানা। পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে রিমান্ডের নির্যাতনে। এটা কি সভ্য দেশের সভ্য সরকারের কাজ হতে পারে? কত নির্মম এই নির্যাতন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আইনজীবী ও ডিফেন্স টিমের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন। বাসা থেকে পল্টনে তার চেম্বারে যাওয়ার পথে তার ওপর হামলা চালায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী জহির উদ্দিন জালাল। পুলিশ হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ওসির বর্বর নির্যাতনে শামিম রেজা নামে এক যুবকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। নিহতের বাবা আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, পুলিশ তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা উেকাচ নিয়েও শামিমকে নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়। এরপর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশি তদন্তেও শামিমকে হত্যার জন্য তিন পুলিশ কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) অরূপ তরফদার, এসআই পল্টু ঘোষ এবং এএসপি উত্তম প্রসাদকে দায়ী করা হয়েছে। পুলিশি বর্বরতার সর্বশেষ খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক। এতে দেখা যায়, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার এক নিরপরাধ ব্যবসায়ীকে ধরে এনে ব্যাপক নির্যাতন করে তার কাছ থেকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় ডিসি ডিবির অনুগত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কাজে তদবির করেন- এটি পুরনো তথ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা মাত্রা ছাড়িয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেতে অনেক সদস্য সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছেন। অন্ধকারে রাখা হচ্ছে পুলিশ সদর দফতরকে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের এমন অনেক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে তদন্তে। শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। ক্ষমতাসীন সরকারের শেষ সময়ে এসে অবহেলিত ও বিশেষ সুবিধাভোগী পুলিশের মধ্যকার ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। অবহেলিত পুলিশ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিনের খেদ মেটাতে নিজেদের এখন শুধু রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর এ কারণে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশ বারবার আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে, আওয়ামী সমর্থিত অন্যান্য জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা এক পক্ষ এবং ‘বিশেষ জেলার’ কর্মকর্তারা আরেক পক্ষে বিভক্ত হয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা নাজুক এ পরিস্থিতির কথা মুখে স্বীকার না করলেও এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে চরম উদ্বেগ রয়েছে। এ অবস্থায় চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী করে পুলিশের নিষ্ক্রিয় কর্মকর্তা ও সদস্যদের কীভাবে চাঙ্গা করা যায়, তার কৌশল নির্ধারণে সরকার তত্পর।
No comments