মামলা করলেই সব শেষ হয় না by জিবলু রহমান
দেশের স্বার্থে কথা বলা, জনগণের অধিকার
নিয়ে কথা বলা, সভা-সমাবেশ-মিছিল করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার।
এই অধিকারে হস্তক্ষেপ মানেই স্বৈরশাসকের পরিচয় দেয়া।
গণতন্ত্রের লেবাসধারী বর্তমান সরকার সব গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি লঙ্ঘন করে ১৯
মে ২০১৩ থেকে দেশে একমাস সব ধরনের সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি
করেছে। ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
একথা জানান।
বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন সভা ডাকলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জামায়াতের কোনো নেতার বাসায় বা অফিসে বসে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করলে পুলিশ হানা দেয়, বলা হয়—নাশকতার গোপন মিটিং। জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেয়া হয় না। রাস্তায় মিছিল করা যাবে না, অফিসে সাংগঠনিক আলোচনা করা যাবে না, মাঠে ময়দানে সভা-সমাবেশ করা যাবে না, তাহলে কি বিরোধী দল থাকবে না? আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যেই বলছেন, তারা একদলীয় বাকশালে বিশ্বাসী।
১০ জুলাই ২০১০ রাতে টেলিভিশনের পর্দায় এবং পরের দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, পাটমন্ত্রী বিরোধীদলকে লাঠিপেটা করার জন্য রীতিমত হুকুম দিয়েছেন। অথচ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একদিকে বিরোধী দলকে নির্যাতনের হুকুম, যুগ্ম সাংগঠনিক মাহবুব-উল-আলম হানিফের হুমকির ভাষায় ‘বিরোধীদল আন্দোলন করবে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ ঘরে বসে থাকবে না’ এ সবের মর্মার্থ এটাই দাঁড়ায় যে, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে যা খুশি তাই করার ঢালাও লাইসেন্সই দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো দায়দায়িত্ব সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেবে না।
নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির আন্দোলন শুরু থেকেই কঠোর হস্তে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মামলা, হামলা, নির্যাতন, পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার আতঙ্ক, চারদিকে ধরপাকড়ের কারণে ঘরছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। মধ্যম সারির নেতারা বেশ কয়েক মাস ধরে রাতে নিজ বাসায় থাকা ছেড়ে দিয়েছেন। ঘর ছেড়েও স্বস্তিতে নেই তারা। আত্মগোপনে থেকেও তারা আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।
বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল হিসেবে সরকার বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করেছে। বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের কড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা দিয়েছে তার প্রায় প্রত্যেকটি মামলায় এসব সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের আসামি করা হয়েছে। জরুরি অবস্থার সরকার দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ২০ হাজারের উপরে মামলা করেছিল। এসব মামলায় আড়াই লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় একাধিক মামলায় আসামি করায় দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এই ভয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় এমনকি গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের আনাগোনা তেমন নেই। গ্রেফতারের ভয়ে মিলাদ মাহফিলে অংশ নিতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। নিজের ফোন বন্ধ রেখে বিকল্প সিমকার্ড ব্যবহার করছেন। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না।
সিনিয়র নেতাসহ সারাদেশের প্রায় ১০ হাজারের মতো নেতাকর্মী বর্তমানে জেলখানায় রয়েছেন। তিনদফা গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। বাদ পড়েনি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ তৃণমূল নেতারাও। আমানুল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, রিজভী, এহসানুল হক মিলন, শমসের মুবিন চৌধুরী প্রমুখ নেতা কারাগার থেকে ঘুরে এসেছেন বহুবার। এখনও আছেন অনেকে।
সরকারের দমনপীড়ন আর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপিও বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। জামায়াতকে তো নিষ্ক্রিয়ই করে ফেলেছে।
সরকারের আচরণে তাদের গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না। এ সরকার এরশাদের চেয়েও বেশি দমনপীড়ন চালাচ্ছে। এরশাদের সময়ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়নি। সে সময়ও মানুষ কথা বলতে পারত। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরেও থাকতে দিচ্ছে না।
সরকারের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপিকে ছাড়াই তারা একটি নির্বাচন করে ফেলবে। সরকারের আচরণ গণতন্ত্রের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
হামলা, মামলা, নির্যাতনের কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিছুটা গতিহীন হয়ে পড়েছে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই তা কাটিয়ে ওঠার কৌশল নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। ৪ মে ২০১৩ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শাপলা চত্বরের সমাবেশে সরকারকে দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার পর খালেদা জিয়ার আলটিমেটামের পর কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ।
৫ মে হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে ঘটে ব্যাপক সহিংসতা। হেফাজতকে সহযোগিতা করার অভিযোগে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার কৌশল নেয় সরকার। হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া মামলায় বিএনপিসহ জোটের শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরই শুরু হয় পুলিশি অভিযানসহ নেতাদের বাড়ি তল্লাশি। সর্বশেষ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ষাটের অধিক মামলা করেছে। প্রত্যেকটি মামলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে বেশিরভাগ নেতাই ঘরছাড়া জীবনযাপন করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদসহ যারা কারাগারে রয়েছেন তারাও স্বস্তিতে নেই। জামিন পাওয়ার পর তাদের মুক্তি মিলছে না। জেলগেট থেকে আবার গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মো. শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ শতাধিক নেতাকে জেলগেট থেকে আটক করা হয়। এক মাসের মধ্যে দু’বার দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু।
মন্ত্রীরা আইনের শাসনের গালভরা বুলি আওড়াচ্ছেন অথচ তারাই আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করছেন। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের আইনজীবীদের সাক্ষাত্ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে আইনজীবীরা ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ করতে পারছেন না। নেতাদের পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে প্রায়ই সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা দারুণ উত্কণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারকে মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় ২৭ মে ২০১৩ কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। (যদিও সংবাদ অধিবেশন উপলক্ষে ২ জুন তাকে জামিন দিয়েছে আদালত।)
ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাসহ সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা এখনও গ্রেফতার এড়িয়ে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। পুলিশের ট্রাকিংয়ের কবল মুক্ত হতে তাদের মোবাইল ফোনের সুইসড অফ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশ, ‘...দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাসহ কয়েকজনের সেল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে এমন সঙ্কেত পাওয়ার পর তারা আপাতত অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন...।’
স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, প্রচার সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ অনেকেই গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন।
শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে, বিভাগীয় ও জেলার সক্রিয় নেতাকর্মীরাই সরকারের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে তারাও ঘরছাড়া। তৃণমূলের অনেকে রাজধানীতে আত্মগোপন করেছেন। জেলার সক্রিয় নেতাদের অনেককেই এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহসা যাতে তারা মুক্তি না পান সে জন্য একের পর এক মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। কারাগারে থাকাবস্থায়ই সম্প্রতি তার মা ইন্তেকাল করেন।
সরকারের দায়িত্বহীনতা ও অক্ষমতার কারণে সর্বসাধারণের ক্ষোভের ঘটনাকে বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতার ট্রেনে আগুন, নারায়ণগঞ্জে ভূমি রক্ষার বিষয়ে জমির মালিকদের বিক্ষোভ ইত্যাদি। এসব ঘটনার দায় বিরোধীদলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা করা হয়েছে, চলছে গণগ্রেফতার। সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় অজ্ঞাত হাজার হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গণগ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকারের নির্যাতন, মামলা-হামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে বিরোধী দলের একাধিক সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। উন্নত চিকিত্সার জন্য তাদের দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। এরইমধ্যে চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। কারাগারে থাকাবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এরা জামিনে মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে এখনও দলীয় কর্মসূচিতে সময় দিতে পারছেন না। (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর ১৯ মে ২০১৩)
রাজনৈতিক দলগুলো অফিসে বসে সাংগঠনিক আলোচনা করলে ‘গোপন বৈঠক’ হয়, এমনটি বর্তমান সরকার নতুন আবিষ্কার করেছে। আরও যেটি নতুন আবিষ্কার হয়েছে সেটা হলো পুলিশের কাজে বাধা দেয়া। একথা বলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদেও গ্রেফতার ও মামলা করা হচ্ছে।
বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন। ১১ মার্চ ২০১৩ বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের দিনে তাকেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দলের দফতরের দায়িত্ব পালন করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে দলের দফতরের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন শামসুজ্জামান দুদু। ৯ এপ্রিল নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। ৯ এপ্রিলের হরতালের শুরুতে কার্যালয়ে প্রবেশের সময় পুলিশ টানা হেঁচড়ার পর আর গ্রেফতার আতঙ্কে কার্যালয় থেকে বের হননি তিনি।
দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছেন শামসুজ্জামান দুদু। ২৫ মে ২০১৩ দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত হয়েছে দুদুর ৪৫ দিনের অবরুদ্ধ জীবনের পরিসংখ্যান। ৪৫ দিনের মধ্যে এক দিনের জন্যও তিনি বাইরে যাননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ফোনে, স্কাইপে।
সরকার যদি বিরোধী দলকে গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে না দেয় তাহলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারবে না। সরকার সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের কিছু মন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এবং মিডিয়ায় বিরোধী নেতাদের নির্মূল করার ঘোষণা দিচ্ছেন, যা আইনের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
jiblu78.rahman@gmail.com
বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন সভা ডাকলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। জামায়াতের কোনো নেতার বাসায় বা অফিসে বসে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করলে পুলিশ হানা দেয়, বলা হয়—নাশকতার গোপন মিটিং। জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেয়া হয় না। রাস্তায় মিছিল করা যাবে না, অফিসে সাংগঠনিক আলোচনা করা যাবে না, মাঠে ময়দানে সভা-সমাবেশ করা যাবে না, তাহলে কি বিরোধী দল থাকবে না? আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যেই বলছেন, তারা একদলীয় বাকশালে বিশ্বাসী।
১০ জুলাই ২০১০ রাতে টেলিভিশনের পর্দায় এবং পরের দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, পাটমন্ত্রী বিরোধীদলকে লাঠিপেটা করার জন্য রীতিমত হুকুম দিয়েছেন। অথচ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একদিকে বিরোধী দলকে নির্যাতনের হুকুম, যুগ্ম সাংগঠনিক মাহবুব-উল-আলম হানিফের হুমকির ভাষায় ‘বিরোধীদল আন্দোলন করবে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ ঘরে বসে থাকবে না’ এ সবের মর্মার্থ এটাই দাঁড়ায় যে, ছাত্রলীগ-যুবলীগকে যা খুশি তাই করার ঢালাও লাইসেন্সই দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো দায়দায়িত্ব সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেবে না।
নির্দলীয় সরকার পুনর্বহাল নিয়ে বিএনপির আন্দোলন শুরু থেকেই কঠোর হস্তে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মামলা, হামলা, নির্যাতন, পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার আতঙ্ক, চারদিকে ধরপাকড়ের কারণে ঘরছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। মধ্যম সারির নেতারা বেশ কয়েক মাস ধরে রাতে নিজ বাসায় থাকা ছেড়ে দিয়েছেন। ঘর ছেড়েও স্বস্তিতে নেই তারা। আত্মগোপনে থেকেও তারা আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।
বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল হিসেবে সরকার বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করেছে। বিশেষ করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের কড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা দিয়েছে তার প্রায় প্রত্যেকটি মামলায় এসব সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের আসামি করা হয়েছে। জরুরি অবস্থার সরকার দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ২০ হাজারের উপরে মামলা করেছিল। এসব মামলায় আড়াই লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় একাধিক মামলায় আসামি করায় দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এই ভয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় এমনকি গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের আনাগোনা তেমন নেই। গ্রেফতারের ভয়ে মিলাদ মাহফিলে অংশ নিতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। নিজের ফোন বন্ধ রেখে বিকল্প সিমকার্ড ব্যবহার করছেন। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না।
সিনিয়র নেতাসহ সারাদেশের প্রায় ১০ হাজারের মতো নেতাকর্মী বর্তমানে জেলখানায় রয়েছেন। তিনদফা গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। বাদ পড়েনি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ তৃণমূল নেতারাও। আমানুল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, রিজভী, এহসানুল হক মিলন, শমসের মুবিন চৌধুরী প্রমুখ নেতা কারাগার থেকে ঘুরে এসেছেন বহুবার। এখনও আছেন অনেকে।
সরকারের দমনপীড়ন আর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপিও বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। জামায়াতকে তো নিষ্ক্রিয়ই করে ফেলেছে।
সরকারের আচরণে তাদের গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না। এ সরকার এরশাদের চেয়েও বেশি দমনপীড়ন চালাচ্ছে। এরশাদের সময়ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়নি। সে সময়ও মানুষ কথা বলতে পারত। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরেও থাকতে দিচ্ছে না।
সরকারের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপিকে ছাড়াই তারা একটি নির্বাচন করে ফেলবে। সরকারের আচরণ গণতন্ত্রের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
হামলা, মামলা, নির্যাতনের কারণে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিছুটা গতিহীন হয়ে পড়েছে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই তা কাটিয়ে ওঠার কৌশল নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি। ৪ মে ২০১৩ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শাপলা চত্বরের সমাবেশে সরকারকে দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার পর খালেদা জিয়ার আলটিমেটামের পর কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ।
৫ মে হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা অবরোধকে কেন্দ্র করে ঘটে ব্যাপক সহিংসতা। হেফাজতকে সহযোগিতা করার অভিযোগে বিরোধী দলকে ঘায়েল করার কৌশল নেয় সরকার। হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের দেয়া মামলায় বিএনপিসহ জোটের শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরই শুরু হয় পুলিশি অভিযানসহ নেতাদের বাড়ি তল্লাশি। সর্বশেষ শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সরকার প্রায় ষাটের অধিক মামলা করেছে। প্রত্যেকটি মামলায় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে বেশিরভাগ নেতাই ঘরছাড়া জীবনযাপন করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদসহ যারা কারাগারে রয়েছেন তারাও স্বস্তিতে নেই। জামিন পাওয়ার পর তাদের মুক্তি মিলছে না। জেলগেট থেকে আবার গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মো. শাহজাহান, সালাউদ্দিন আহমেদ, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ শতাধিক নেতাকে জেলগেট থেকে আটক করা হয়। এক মাসের মধ্যে দু’বার দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু।
মন্ত্রীরা আইনের শাসনের গালভরা বুলি আওড়াচ্ছেন অথচ তারাই আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করছেন। শুধু তাই নয়, গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের আইনজীবীদের সাক্ষাত্ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে আইনজীবীরা ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ করতে পারছেন না। নেতাদের পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে প্রায়ই সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে তারা দারুণ উত্কণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ারকে মানহানি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় ২৭ মে ২০১৩ কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। (যদিও সংবাদ অধিবেশন উপলক্ষে ২ জুন তাকে জামিন দিয়েছে আদালত।)
ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাসহ সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা এখনও গ্রেফতার এড়িয়ে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। পুলিশের ট্রাকিংয়ের কবল মুক্ত হতে তাদের মোবাইল ফোনের সুইসড অফ। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশ, ‘...দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাসহ কয়েকজনের সেল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে এমন সঙ্কেত পাওয়ার পর তারা আপাতত অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন...।’
স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, প্রচার সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ অনেকেই গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন।
শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে, বিভাগীয় ও জেলার সক্রিয় নেতাকর্মীরাই সরকারের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে তারাও ঘরছাড়া। তৃণমূলের অনেকে রাজধানীতে আত্মগোপন করেছেন। জেলার সক্রিয় নেতাদের অনেককেই এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহসা যাতে তারা মুক্তি না পান সে জন্য একের পর এক মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। কারাগারে থাকাবস্থায়ই সম্প্রতি তার মা ইন্তেকাল করেন।
সরকারের দায়িত্বহীনতা ও অক্ষমতার কারণে সর্বসাধারণের ক্ষোভের ঘটনাকে বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে হতাহতের ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতার ট্রেনে আগুন, নারায়ণগঞ্জে ভূমি রক্ষার বিষয়ে জমির মালিকদের বিক্ষোভ ইত্যাদি। এসব ঘটনার দায় বিরোধীদলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে মামলা করা হয়েছে, চলছে গণগ্রেফতার। সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় অজ্ঞাত হাজার হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গণগ্রেফতার করা হয়েছে।
সরকারের নির্যাতন, মামলা-হামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে বিরোধী দলের একাধিক সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। উন্নত চিকিত্সার জন্য তাদের দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। এরইমধ্যে চিকিত্সার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। কারাগারে থাকাবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এরা জামিনে মুক্তি পেলেও অসুস্থতার কারণে এখনও দলীয় কর্মসূচিতে সময় দিতে পারছেন না। (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর ১৯ মে ২০১৩)
রাজনৈতিক দলগুলো অফিসে বসে সাংগঠনিক আলোচনা করলে ‘গোপন বৈঠক’ হয়, এমনটি বর্তমান সরকার নতুন আবিষ্কার করেছে। আরও যেটি নতুন আবিষ্কার হয়েছে সেটা হলো পুলিশের কাজে বাধা দেয়া। একথা বলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদেও গ্রেফতার ও মামলা করা হচ্ছে।
বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন। ১১ মার্চ ২০১৩ বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের দিনে তাকেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দলের দফতরের দায়িত্ব পালন করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকেও গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে দলের দফতরের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন শামসুজ্জামান দুদু। ৯ এপ্রিল নয়াপল্টনের বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। ৯ এপ্রিলের হরতালের শুরুতে কার্যালয়ে প্রবেশের সময় পুলিশ টানা হেঁচড়ার পর আর গ্রেফতার আতঙ্কে কার্যালয় থেকে বের হননি তিনি।
দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছেন শামসুজ্জামান দুদু। ২৫ মে ২০১৩ দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত হয়েছে দুদুর ৪৫ দিনের অবরুদ্ধ জীবনের পরিসংখ্যান। ৪৫ দিনের মধ্যে এক দিনের জন্যও তিনি বাইরে যাননি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ফোনে, স্কাইপে।
সরকার যদি বিরোধী দলকে গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে না দেয় তাহলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারবে না। সরকার সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার একজন নাগরিকের জন্মগত অধিকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের কিছু মন্ত্রী বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এবং মিডিয়ায় বিরোধী নেতাদের নির্মূল করার ঘোষণা দিচ্ছেন, যা আইনের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
jiblu78.rahman@gmail.com
No comments