সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণবিধি মানতেই হবে
চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব দল
অংশগ্রহণ করছে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনের
দায়িত্ব। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি
লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার এ
ব্যাপারে কয়েকজন প্রার্থীকে সতর্কও করে দিয়েছেন। অভিযুক্তরা অভিযোগ স্বীকার
করে ভবিষ্যতে যথাযথ আচরণের প্রতিশ্রুতি সংবলিত মুচলেকাও দিচ্ছেন। কিন্তু
অভিযুক্তরা পরক্ষণেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। অবস্থা এমনি
দাঁড়িয়েছে যে, খোদ নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
রোববার সমকালে 'আচরণবিধি মানছেন না প্রার্থীরা' শিরোনামে প্রকাশিত
প্রতিবেদনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ছাড়াও
সরকারের প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিরোধী দল ও জোটের নেতাদের নাম জড়িয়ে
গেছে। গণমাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার সুস্পষ্ট বিবরণ প্রকাশ পেলেও দেশের প্রধান
দুটি রাজনৈতিক দল এ পর্যন্ত আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব
দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এতে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি
করপোরেশনের ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় নির্বাচন
কমিশনকে হিমশিম খেতে হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা তুলনামূলক কম থাকে। নির্বাচনী
আচরণবিধি মান্য করতে বাধ্য করার জন্য নিয়ম ও আইন রয়েছে। কোনো প্রার্থী
আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ছয় মাসের দণ্ডাদেশ ও ৫০ হাজার টাকা
জরিমানার বিধান রয়েছে। তাছাড়া সতর্ক করে দেওয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমন
কার্যকলাপ রোধ করার জন্য নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে
তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও বিধান রয়েছে। তারপরও আচরণবিধি
অমান্য করা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন যা পারে, এখন
তা কেন পারবে না? নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের পোস্টার রঙিন না ছাপানো, তোরণ
নির্মাণ না করা, যত্রতত্র পোস্টার না লাগানো, নির্বাচনী ব্যয় নির্দিষ্ট
করে দেওয়াসহ আরও কিছু দৃষ্টিগ্রাহ্য নিয়ম মেনে চলার বিষয়টি যথাযথ মনিটর
করতে পারে। তবে তাদের পক্ষে কি প্রার্থীদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় আটকানো,
ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য তাদের সরাসরি অর্থ প্রদান করার অনৈতিক কাজ
মনিটর করা বা রোধ করা আদৌ সম্ভব? এ জন্য প্রয়োজন জনমুখী এবং গণতন্ত্রসম্মত
রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সুশাসন। আর এটাই আমাদের দেশে এখনও অনুপস্থিত। এ
কারণেই টাকার ক্ষমতা ও পেশিশক্তির দাপট এখনও নির্বাচনের সময়, বিশেষত
স্থানীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
আচরণবিধি অমান্য করার যে প্রবণতা প্রার্থী এবং রাজনৈতিক নেতারা দেখিয়ে
চলেছেন, তার অবসান নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার স্বার্থেই প্রয়োজন।
কারণ এ ধরনের কার্যকলাপ নির্বাচনের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভোটারদের
প্রভাবিত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আচরণবিধি মান্য করানোর
ব্যাপারে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
আচরণবিধি করা হয়েছে লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড তৈরি তথা প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সুস্থভাবে চলা নিশ্চিত করা এবং ভোটারদের
অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্যভাবে প্রভাবিত করার যে কোনো চেষ্টাকে রোধ করার জন্যই।
তাই নির্বাচন কমিশনকে আরও কঠোর হওয়ার পাশাপাশি চার সিটি করপোরেশনে সুষ্ঠু ও
স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে
হবে।
No comments