পবিত্র কোরআনের আলো-বিপদ থেকে মুক্তি ও সাফল্য দিয়ে থাকেন আল্লাহ তায়ালা

৬৮. ওয়া লাম্মা- দাখালূ মিন হাইছু আমারাহুম আবূহুম, মা- কা-না য়ুগনী 'আনহুম মিনাল্লা-হি মিন শাইইন ইল্লা- হা-জাতান ফী নাফসি য়া'কূবা কাযা-হা, ওয়া ইন্নাহূ লাযূ 'ইলমিল লিমা- 'আল্লামনা-হু ওয়া লা-কিন্না আকছারান্না-সি লা- য়া'লামূনা।
৬৯. ওয়া লাম্মা- দাখালূ 'আলা- য়ূসুফা আ-ওয়া--- ইলাইহি আখা-হু কা-লা ইন্নী--- আনা আখূকা ফালা- তাবতাইস বিমা- কা-নূ য়া'মালূনা। সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ৬৮. তারা যখন পিতা (ইয়াকুবের) নির্দেশমাফিক প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা তাদের বাঁচাতে পারল না। তবে ইয়াকুবের সিদ্ধান্তে তাঁর মনের একটি বাসনা ছিল, যা তিনি পূরণ করেছেন। তা ছাড়া তিনি তো আমার শেখানো বিষয়ে অবগত ছিলেন। অথচ অনেক মানুষ (প্রকৃত বিষয়) জানেই না।* ৬৯. যখন তারা ইউসুফের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলো, তখন তিনি নিজের ভাই (বিনয়ামিনকে) নিজের কাছে রেখে দিলেন।* (এবং তাকে) বললেন, অবশ্যই আমি তোমার সহোদর। অতএব তাদের (সৎ ভাইদের মন্দ) আচরণের জন্য দুঃখ করো না।
তাফসির : * অনেক মানুষ সাফল্যের পর অর্জিত সাফল্যের জন্য নিজেকেই ধন্য মনে করে। বড়জোর বাহ্যিক নানা কলাকৌশল এবং বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা পাওয়া লোকদের ধন্যবাদ দিয়েই আত্মতৃপ্তিতে ভোগে। তারা চিন্তা করে না, এই সাফল্যদানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনিই মূল কারিগর। তারা বিপদ থেকে মুক্তি লাভসহ সকল বিষয়েই এমনটি মনে করে থাকে। এ ক্ষেত্রে গভীরভাবে উপলব্ধি করার বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালাই সকল বিষয়ে বান্দাকে কিছু কলাকৌশল শিখিয়ে দিয়ে থাকেন। এসব কৌশল বান্দার সাফল্যের পেছনে দৃশ্যমান কারণ হয়ে দেখা দিলেও মূল নিয়ন্ত্রণ যেহেতু আল্লাহ তায়ালার কাছে, তাই সকল অবস্থায় তাঁরই গুণমুগ্ধ থাকা উচিত। এর ব্যতিক্রম হলে যেকোনো সময় মুহূর্তের মধ্যে তিনি নিজ অনুগ্রহে প্রদত্ত সাফল্যরূপী নিয়ামতকে ছিনিয়ে নিতে পারেন, বিভিন্ন সময় নিয়েও থাকেন। সাফল্য বা বিপদ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। আলোচ্য ঐতিহাসিক ঘটনায় ইয়াকুব (আ.) নিজ সন্তানদের বদনজর থেকে রক্ষা পেতে যে কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে আমল করায় তারা যদিও বদনজরের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার লীলাখেলায় তারা ভিন্ন ধরনের আরেকটি সংকটের মুখোমুখি হয়, যে বিষয়ে বর্তমান সুরায়ই সামনে আলোচনা করা হয়েছে।
* তাফসিরের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাবে বরেণ্য অনেক মনীষীর সূত্রে বর্ণিত আছে, হজরত ইউসুফ (আ.) একেকটি কক্ষে দুজন করে ভাইকে অবস্থান করার সুযোগ দিয়েছিলেন। এভাবে তাঁর দশ সৎ ভাই পাঁচটি কক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। বাকি রয়ে গেল বিনয়ামিন। ইউসুফ (আ.) বললেন, এই একজন আমার সঙ্গে থাকবে। এভাবেই সহোদর ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর একান্তে মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। পরে তিনি বিনয়ামিনকে জানিয়ে দিলেন, তুমি আমার সহোদর ভাই। তৈরি হয় দুই ভাইয়ের মধ্যে বিশেষ ভালোবাসার বন্ধন। বিনয়ামিন সব কিছু জেনে বলল, আমি আর তাদের সঙ্গে ফেরত যাব না। আপনি কিছুতেই আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে দেবেন না। ভাইয়ের এই ভালোবাসাময় আবেদন পূরণের জন্য ইউসুফ (আ.) অভিনব কৌশল অবলম্বন করলেন। ওই কৌশলের আলোচনাও সামনে আসছে।
তাফসিরে তাওযিহুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির


No comments

Powered by Blogger.