সিটি নির্বাচন ও কাঙ্ক্ষিত নিরপেক্ষতা by ডা. মো. ফজলুল হক
১৯৮৩ সালে সরকারি চাকরিতে (ক্যাডার
সার্ভিস) যোগদানের পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ বছরে পাঁচটি সংসদ
নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের
দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি।
সেখানে ভোট চুরি, ভোট বাক্স
ছিনতাই, ব্যালট পেপার হাতাহাতি, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখার ও
প্রতিরোধ করার সুযোগ হয়েছে। হাঁ/না ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও হয়েছে। ২০০৮
সালের নির্বাচনে আমার কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ শতভাগ সঠিক হয়েছিল। তবে
বিশেষভাবে আলোকপাত করার বিষয়টি হচ্ছে ১৫ জুন ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত চারটি
সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিগত সব নির্বাচনের ওপর স্থান করে নিয়েছে। সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। কয়েকটি
ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও ভোটগ্রহণ ও প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি হয়নি। এ
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ছাড়াই নিরপেক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। আরো অবাক করার বিষয়
হচ্ছে, সরকারি দলের মেয়র পদপ্রার্থীরা পরাজয়কে মেনে নিয়ে জয়ী প্রার্থীদের
সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় ও মিষ্টিমুখ করেছেন, ফুলের তোড়া দিয়ে
শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিগত সময়ের কালচার ছিল হেরে
গেলেই ভোট কারচুপি হয়েছে, জিতলে সঠিক হয়েছে। তার পরও অবাক করেছে কয়েকটি
মন্তব্য। সেখানে ১৮ দলের মন্তব্য হলো- পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে ইসি ও
সরকার, ফল পাল্টে দিতেই সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে না, কামরানকে জেতাতে মরিয়া
আওয়ামী লীগ ইত্যাদি। লিফলেটের মাধ্যমে আপত্তিকর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে
বলেও জানা যায়। শত বাধা ও আপত্তির মুখে এ ধরনের একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ায়
দেশবাসীর পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব সদস্যই ধন্যবাদ পাওয়ার
দাবি রাখেন। এ নির্বাচনে বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে বাংলাদেশ একটি অন্যতম
প্রধান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বিরোধী দল হেরে গেলে
হরতাল, অবরোধসহ সহিংস ঘটনা ঘটবেই। এ সংশয় ও সন্দেহ ছিল প্রায় সবার মধ্যে।
বিগত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চার হাজার ৬৪৯টি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সুষুম ও নিরপেক্ষভাবে। এ সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করল তাদের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হওয়া সম্ভব। জনগণও বুঝতে পেরেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি অত্যন্ত দুর্বল ও অযৌক্তিক। অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক টক শোতে মন্তব্য করেন বর্তমান সরকারের আমলে যে উন্নয়ন ঘটেছে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু জনগণকে তা সঠিকভাবে বোঝাতে পারছেন না আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান একই ধরনের মন্তব্য করেছেন টক শোতে। এ বিষয়ে আমিও একমত পোষণ করছি, বর্তমান সরকারের সময়ে যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটলেও তা জনসমক্ষে যথাযথভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে না। দেশের উন্নয়নের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, অন্যথায় আওয়ামী লীগ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ দেশের উন্নয়নের গতি। উন্নয়নের এ চাকা থেমে যাবে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে। গত নির্বাচনে ১৮ দলের পক্ষে বড় বিজয়কে সাধুবাদ জানাই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চিন্তায় মগ্ন হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। সিংহভাগ ভোটারই নিরপেক্ষ থেকে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেন। তাঁদের ভোটেই পালাবদল হয়। তাঁদের হিসাব-নিকাশই আসল। নির্বাচনের এক ঘণ্টা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন অনেকে। অনেক সময় নির্বাচনের ফলাফল হতে পারে ক্রিকেট খেলার মতোই। সুতরাং নিরাশ হওয়ার কিছু নেই কোনো পক্ষের। অনেক সময় শোনা যায়, ভোট টাকা দিয়েও কেনা যায়। ভোট কেনা যায় এমন বাস্তব উদাহরণও রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রচারে দুর্বল, গণসংযোগও সঠিক হচ্ছে না- এমন মন্তব্যও করেছে বিশেষজ্ঞ মহল। ১৮ দলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যাদের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে। ইসলামের কথা বলে তারা ভোট চায়। হক্কানি আলেমদের ভাষ্যমতে জামায়াতে ইসলামী প্রকৃত অর্থে কোনো ইসলামিক দল নয়, কিন্তু ইসলামিক নামকরণের কারণে সাধারণ মানুষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আকৃষ্ট হয়ে তাদের ভোট দেয়। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। যাঁর রয়েছে হাজার হাজার ভক্ত। যাঁরা তাঁকে চঁাঁদের দেশের মানুষ মনে করেন। সাঈদী সাহেব একজন বড় মাপের আলেম, মওদুদী মতাদর্শে বিশ্বাসী একজন যুদ্ধাপরাধী। অথচ এই মওদুদী সাহেব ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে ক্ষতি করেছেন। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। সাহাবিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে 'খেলাফত ও মুলুকিয়াত' নামক বই লিখে বিধর্মীদের বাহ্বা পেয়েছেন। উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম মাওলানা শামছুল হক (সদর সাহেব) তাঁর ভুল সংশোধন বইটিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারাও বক্তব্যের মাঝে এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুতরাং সিটি করপোরেশনের মতো অনুরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক- এটিই জনগণ আশা করে। তাহলে দলমত নির্বিশেষে দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হবে- এ প্রত্যাশা সবার।
লেখক : অধ্যাপক হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
fhoque.hstu@gmail.com
বিগত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চার হাজার ৬৪৯টি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সুষুম ও নিরপেক্ষভাবে। এ সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করল তাদের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হওয়া সম্ভব। জনগণও বুঝতে পেরেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি অত্যন্ত দুর্বল ও অযৌক্তিক। অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক টক শোতে মন্তব্য করেন বর্তমান সরকারের আমলে যে উন্নয়ন ঘটেছে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু জনগণকে তা সঠিকভাবে বোঝাতে পারছেন না আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান একই ধরনের মন্তব্য করেছেন টক শোতে। এ বিষয়ে আমিও একমত পোষণ করছি, বর্তমান সরকারের সময়ে যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটলেও তা জনসমক্ষে যথাযথভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে না। দেশের উন্নয়নের বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, অন্যথায় আওয়ামী লীগ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ দেশের উন্নয়নের গতি। উন্নয়নের এ চাকা থেমে যাবে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে। গত নির্বাচনে ১৮ দলের পক্ষে বড় বিজয়কে সাধুবাদ জানাই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চিন্তায় মগ্ন হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। সিংহভাগ ভোটারই নিরপেক্ষ থেকে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেন। তাঁদের ভোটেই পালাবদল হয়। তাঁদের হিসাব-নিকাশই আসল। নির্বাচনের এক ঘণ্টা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন অনেকে। অনেক সময় নির্বাচনের ফলাফল হতে পারে ক্রিকেট খেলার মতোই। সুতরাং নিরাশ হওয়ার কিছু নেই কোনো পক্ষের। অনেক সময় শোনা যায়, ভোট টাকা দিয়েও কেনা যায়। ভোট কেনা যায় এমন বাস্তব উদাহরণও রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রচারে দুর্বল, গণসংযোগও সঠিক হচ্ছে না- এমন মন্তব্যও করেছে বিশেষজ্ঞ মহল। ১৮ দলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যাদের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করে। ইসলামের কথা বলে তারা ভোট চায়। হক্কানি আলেমদের ভাষ্যমতে জামায়াতে ইসলামী প্রকৃত অর্থে কোনো ইসলামিক দল নয়, কিন্তু ইসলামিক নামকরণের কারণে সাধারণ মানুষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আকৃষ্ট হয়ে তাদের ভোট দেয়। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। যাঁর রয়েছে হাজার হাজার ভক্ত। যাঁরা তাঁকে চঁাঁদের দেশের মানুষ মনে করেন। সাঈদী সাহেব একজন বড় মাপের আলেম, মওদুদী মতাদর্শে বিশ্বাসী একজন যুদ্ধাপরাধী। অথচ এই মওদুদী সাহেব ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে ক্ষতি করেছেন। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। সাহাবিদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে 'খেলাফত ও মুলুকিয়াত' নামক বই লিখে বিধর্মীদের বাহ্বা পেয়েছেন। উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম মাওলানা শামছুল হক (সদর সাহেব) তাঁর ভুল সংশোধন বইটিতে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতারাও বক্তব্যের মাঝে এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুতরাং সিটি করপোরেশনের মতো অনুরূপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক- এটিই জনগণ আশা করে। তাহলে দলমত নির্বিশেষে দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে গণতন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হবে- এ প্রত্যাশা সবার।
লেখক : অধ্যাপক হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
fhoque.hstu@gmail.com
No comments