হৃদয়নন্দন বনে-আসুক বাধা দুর্মর_ চলবো বাধা তুচ্ছ করে! by আলী যাকের
'যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে,/সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া/যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অন্তরে/যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া/মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে/দিক্্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা-/তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর/এখনি, অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা।'
যখন গহিন বনের গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে রাতের আঁধারে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিই; হাজার বিপদ সম্মুখে, নিশ্চিত মৃত্যুকে তুচ্ছ করে, তখনও মন থাকে উদ্দীপিত। ঠিক যেমন '৭১-এ ছিল যখন বাংলা মায়ের আহ্বানে প্রায় ভূতে পাওয়া মানুষের মতো এগিয়ে গিয়েছিলাম অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে শত্রুর মোকাবেলা করতে। যদি দেখি আকাশে ঘন মেঘ, উন্মত্ত ঝড় কিংবা আকাশ ভাঙা বৃষ্টি সমাসন্ন, তখনও বেরিয়ে পড়েছি পথে-প্রান্তরে, নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে, মহাআনন্দে, সমস্ত শরীর-মন দিয়ে নিসর্গের এই অকস্মাৎ অবারিত দ্বার থেকে দু'হাতে আজলা পেতে পান করতে স্বর্গসুখ। কিন্তু যখন সকলই প্রস্তুত, 'ওই যে দাঁড়ায়ে নতশির, মূক সবে, ম্লানমুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর বেদনার করুণ কাহিনী;' তখন যদি দেখি যে এত প্রস্তুত, এত সংগ্রাম, এত যুদ্ধ, এত লোকক্ষয়_ সব বুঝি নিরর্থক, আবার 'নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস', তখন স্বভাবতই মনটা বড় বিষণ্ন হয়ে পড়ে। আবারও রবীন্দ্রনাথে আশ্রয় নিই। ইচ্ছা হয় উচ্চস্বরে বলি, 'এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা/ এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা/ ডাকিয়া বলিতে হবে_/মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে/যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা-চেয়ে/ যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পালাইবে ধেয়ে/যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে/দেবতা বিমুখ তারে, কেহ নাহি সহায় তাহার/মুখে করে আস্টম্ফালন, জানে সে হীনতা আপনার মনে মনে।' আবার আশায় ধ্বনিত হয় বুক। মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। কিন্তু পরমুহূর্তেই কোথা থেকে বিষণ্নতা যেন এসে ঢেকে ফেলে আমার আমাকে।
অনেক ভেবেছি আমি। সমস্যাটা কোথায়? আমরা সকলেই অল্প-বিস্তর অবগত আছি যে, আমাদের যুদ্ধ এখনও হয়নি শেষ। যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে? যুদ্ধ সেই পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে যারা আমাদের প্রাণপ্রিয় বাসভূমিকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। যারা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। এমনকি স্বাধীন হওয়ার পরও যারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে গেছে এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য। এ বিষয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে যে, এসব মানুষ কিছুদিন আগেও আমাদের মাঝে এক ধরনের ছদ্মবেশে লুকিয়েই ছিল। কিন্তু আজ তারা প্রকাশ্যে হাজির হয়েছে আমাদের দৃষ্টির সামনে। বুক উঁচিয়ে চলছে। যেন উচ্চস্বরে বলছে, 'এসো, দেখো আমাদের শক্তি।'
আমরা দেখতে পাই যে বাংলাদেশবিরোধী এই শক্তি আমাদের দেশে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর তাদের নিজস্ব একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এই গোষ্ঠী সমাজের সর্বত্র, স্বল্পসংখ্যক হলেও, নিজেদের একটি স্থান করে নিয়েছে। তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের অবস্থান থেকে নিত্যই বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। সেই সঙ্গে তারা তৈরি করছে কিছুু মাস্্লম্যান নিজেদের উচ্ছিষ্ট খাইয়ে, যারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করে নিজেদের রাজ্য কায়েম রাখার চেষ্টা করে চলেছে। আমার গত ১৫ বছরের শহর এবং গ্রাম-বাংলাবীক্ষণের মাধ্যমে আমি এই সত্যটি উদ্ঘাটন করেছি। আমরা এই শ্রেণীটিকে চিনি এবং জানি। আমি স্বীকার করি যে, আমাদের সরকারের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। তবে এই ব্যর্থতায় আমরা যারা বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের অবদান খুব একটা কম নয়। আমরা কেবল হাহুতাশ করে ব্যর্থতা সম্বন্ধে গালভারী কথা বলে ক্ষান্ত হয়ে যাই। আর আমাদের এই আর্তনাদকে পুঁজি করে দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশবিরোধী সেই শক্তি, যাদের কথা একটু আগেই আমি উল্লেখ করলাম।
আমার হঠাৎ করে এসব কথা মনে পড়ে যায়, যখন দেখি আমাদের মধ্যে অবস্থাপন্ন মানুষরা আইনকে অবলীলায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পথ চলে। গতকালকেই যেমন একাধিক গাড়ির চালককে দেখলাম মহাসড়কে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে। অথচ কয়দিন আগেই সরকার কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে যদি কেউ গাড়ি চালায় তাহলে তাকে কেবল জরিমানাই করা হবে না, সঙ্গে সঙ্গে তার মুঠোফোনটিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ঠিক একইভাবে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে, ফুটওভারব্রিজের ঠিক নিচে দিয়ে মানুষ অবলীলায় সদর রাস্তা পার হচ্ছে। একবার আমার গাড়ির চালক এ রকম এক পথচারীকে, যিনি সুট-কোট পরা ছিলেন, গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমারই সামনে যে, ওই ফুটওভারব্রিজ থাকতে তিনি কেন এই বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন। জবাবে ভদ্রলোক আমার চালককে বলেছিলেন, তিনি যেন নিজের চরকায় তেল দেন। ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে অমান্য করে বাস ভাড়া, স্কুটার ভাড়া, চিনির মূল্য, তেলের মূল্য সবকিছুই বৃদ্ধি করে দুর্বৃত্তরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং এদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশবিরোধী চক্র, যাতে করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশটিকে ব্যর্থরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করা যেতে পারে। আইনবিরোধী এবং সমাজবিরোধী আপাত সাধারণ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বিরাট বড় দুরাচারের আবর্তের সৃষ্টি করা যেতে পারে। অতএব, এই ছোট আকারের আইনবিরোধী কার্যকলাপকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার কোনো অর্থ নেই। আমরা জানি যে, বিন্দু থেকেই সিন্ধুর সৃষ্টি। ফলে আমরা যদি আর সময় নষ্ট না করে এখনই সজাগ না হই তাহলে সামনে সমূহ বিপদ।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আমরা কী করতে পারি? আমি পাঠক সাধারণের কাছে নিবেদন করতে চাই যে, অনেক কিছুই আমাদের দ্বারা করা সম্ভব, করার আছে। যখন সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবেন তখন এটা অবশ্যই তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে যে কিছু দুর্বৃত্ত তাদের অপকর্মের দ্বারা আমাদের সমাজ তথা দেশকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সাধারণ মানুষেরই দায়দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। ছোটখাটো বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে পরিবহন, খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করি, তাহলে যেমন সরকারের আইনানুগ পথচলাকে আমরা সহায়তা দেব, তেমনি দুর্বৃত্তরাও, যেমন রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।'
আমি বরাবরই আশাবাদী মানুষ এবং আমি মনে করি, আমাদের সমাজে সাহসী মানুষের অভাব নেই। হাতে হাত রেখে তারা যদি এগিয়ে আসেন, আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সোনার দেশে পরিণত করতে পারব আমাদের এই দেশকে। অতএব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হাল ছেড়ে দেওয়ারও কিছুু নেই। যে দেশের মুক্তির সংগ্রামে আমরা ছিলাম অকুতোভয় সৈনিক, সে দেশের মানুষ চাইলেই সকল ষড়যন্ত্র এবং দুরভিসন্ধিকে দেশছাড়া করতে পারে সহজেই। আর তাই এখনই পাখা বন্ধ করতে প্রস্তুত নই আমি। যতদিন দেহে প্রাণ আছে, লড়ে যাব অভীষ্ট সেই লক্ষ্যে পেঁৗছানোর জন্য, যে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেই একাত্তরে।
আলী যাকের : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
অনেক ভেবেছি আমি। সমস্যাটা কোথায়? আমরা সকলেই অল্প-বিস্তর অবগত আছি যে, আমাদের যুদ্ধ এখনও হয়নি শেষ। যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে? যুদ্ধ সেই পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে যারা আমাদের প্রাণপ্রিয় বাসভূমিকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। যারা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। এমনকি স্বাধীন হওয়ার পরও যারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে গেছে এই দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য। এ বিষয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে যে, এসব মানুষ কিছুদিন আগেও আমাদের মাঝে এক ধরনের ছদ্মবেশে লুকিয়েই ছিল। কিন্তু আজ তারা প্রকাশ্যে হাজির হয়েছে আমাদের দৃষ্টির সামনে। বুক উঁচিয়ে চলছে। যেন উচ্চস্বরে বলছে, 'এসো, দেখো আমাদের শক্তি।'
আমরা দেখতে পাই যে বাংলাদেশবিরোধী এই শক্তি আমাদের দেশে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর তাদের নিজস্ব একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করেছে। এই গোষ্ঠী সমাজের সর্বত্র, স্বল্পসংখ্যক হলেও, নিজেদের একটি স্থান করে নিয়েছে। তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের অবস্থান থেকে নিত্যই বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে চতুর্দিকে। সেই সঙ্গে তারা তৈরি করছে কিছুু মাস্্লম্যান নিজেদের উচ্ছিষ্ট খাইয়ে, যারা সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করে নিজেদের রাজ্য কায়েম রাখার চেষ্টা করে চলেছে। আমার গত ১৫ বছরের শহর এবং গ্রাম-বাংলাবীক্ষণের মাধ্যমে আমি এই সত্যটি উদ্ঘাটন করেছি। আমরা এই শ্রেণীটিকে চিনি এবং জানি। আমি স্বীকার করি যে, আমাদের সরকারের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। তবে এই ব্যর্থতায় আমরা যারা বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের অবদান খুব একটা কম নয়। আমরা কেবল হাহুতাশ করে ব্যর্থতা সম্বন্ধে গালভারী কথা বলে ক্ষান্ত হয়ে যাই। আর আমাদের এই আর্তনাদকে পুঁজি করে দেশে গোলযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশবিরোধী সেই শক্তি, যাদের কথা একটু আগেই আমি উল্লেখ করলাম।
আমার হঠাৎ করে এসব কথা মনে পড়ে যায়, যখন দেখি আমাদের মধ্যে অবস্থাপন্ন মানুষরা আইনকে অবলীলায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পথ চলে। গতকালকেই যেমন একাধিক গাড়ির চালককে দেখলাম মহাসড়কে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালাতে। অথচ কয়দিন আগেই সরকার কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে, মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে যদি কেউ গাড়ি চালায় তাহলে তাকে কেবল জরিমানাই করা হবে না, সঙ্গে সঙ্গে তার মুঠোফোনটিও বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ঠিক একইভাবে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে, ফুটওভারব্রিজের ঠিক নিচে দিয়ে মানুষ অবলীলায় সদর রাস্তা পার হচ্ছে। একবার আমার গাড়ির চালক এ রকম এক পথচারীকে, যিনি সুট-কোট পরা ছিলেন, গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমারই সামনে যে, ওই ফুটওভারব্রিজ থাকতে তিনি কেন এই বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পার হচ্ছেন। জবাবে ভদ্রলোক আমার চালককে বলেছিলেন, তিনি যেন নিজের চরকায় তেল দেন। ঠিক একইভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশকে অমান্য করে বাস ভাড়া, স্কুটার ভাড়া, চিনির মূল্য, তেলের মূল্য সবকিছুই বৃদ্ধি করে দুর্বৃত্তরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং এদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশবিরোধী চক্র, যাতে করে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশটিকে ব্যর্থরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিপন্ন করা যেতে পারে। আইনবিরোধী এবং সমাজবিরোধী আপাত সাধারণ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই বিরাট বড় দুরাচারের আবর্তের সৃষ্টি করা যেতে পারে। অতএব, এই ছোট আকারের আইনবিরোধী কার্যকলাপকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার কোনো অর্থ নেই। আমরা জানি যে, বিন্দু থেকেই সিন্ধুর সৃষ্টি। ফলে আমরা যদি আর সময় নষ্ট না করে এখনই সজাগ না হই তাহলে সামনে সমূহ বিপদ।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আমরা কী করতে পারি? আমি পাঠক সাধারণের কাছে নিবেদন করতে চাই যে, অনেক কিছুই আমাদের দ্বারা করা সম্ভব, করার আছে। যখন সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হবেন তখন এটা অবশ্যই তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে যে কিছু দুর্বৃত্ত তাদের অপকর্মের দ্বারা আমাদের সমাজ তথা দেশকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সাধারণ মানুষেরই দায়দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। ছোটখাটো বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে পরিবহন, খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করি, তাহলে যেমন সরকারের আইনানুগ পথচলাকে আমরা সহায়তা দেব, তেমনি দুর্বৃত্তরাও, যেমন রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।'
আমি বরাবরই আশাবাদী মানুষ এবং আমি মনে করি, আমাদের সমাজে সাহসী মানুষের অভাব নেই। হাতে হাত রেখে তারা যদি এগিয়ে আসেন, আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সোনার দেশে পরিণত করতে পারব আমাদের এই দেশকে। অতএব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হাল ছেড়ে দেওয়ারও কিছুু নেই। যে দেশের মুক্তির সংগ্রামে আমরা ছিলাম অকুতোভয় সৈনিক, সে দেশের মানুষ চাইলেই সকল ষড়যন্ত্র এবং দুরভিসন্ধিকে দেশছাড়া করতে পারে সহজেই। আর তাই এখনই পাখা বন্ধ করতে প্রস্তুত নই আমি। যতদিন দেহে প্রাণ আছে, লড়ে যাব অভীষ্ট সেই লক্ষ্যে পেঁৗছানোর জন্য, যে যাত্রা শুরু করেছিলাম সেই একাত্তরে।
আলী যাকের : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments