ডাকাতের জামিন- নাগরিক জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা
আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বিচারাধীন, আটক ডাকাতদের অধিকাংশই জামিনে বেরিয়ে এসে ফের ডাকাতিতে লিপ্ত হচ্ছে। সোমবার নরসিংদী জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে জেলার পুলিশ সুপার মাহিদ উদ্দিন তার বক্তব্যে এ কথা জানান।
তবে ডাকাতি মামলা আইনের যথাযথ প্রয়োগের দিকে লক্ষ্য রেখে তদন্ত কর্মকর্তা করে থাকেন কি-না সে ব্যাপারে তার বক্তব্য মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে দেখা যায়নি। এতে মনে হয়, বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। ডাকাতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষী-সাবুদ যথাযথভাবে জড়ো করে মামলা সাজিয়ে থাকলে আদালতের পক্ষে এত সহজে জামিন প্রদান করা কি সম্ভব? তর্কের খাতিরে হয়তো ধরে নেওয়া গেল যে, তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরও কোনো কোনো ডাকাত জামিন পেয়েছে। তখন প্রশ্ন হবে, এরপর আইও আদালতের কাছে জামিন না দেওয়ার জন্য জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন কি-না। নিশ্চয়ই কোনো ডাকাতকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত কোনো স্থানীয় রাজনীতিক প্রকাশ্যে তদবির করতে যাবেন না জনসমর্থন হারানোর ভয়েই। এ ক্ষেত্রে সাধারণত টাকার খেলাটাই থাকে মুখ্য। তাই পুলিশ খড়্গহস্ত হলে গ্রেফতার কোনো ডাকাতের জামিন পাওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারপর কোনো কোনো ডাকাত জামিন পেয়ে গেলেও তাদের বেশিদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুনরায় ডাকাতি করে দেশের কোনো অঞ্চলেই ঘর-সংসার সাজিয়ে বাস করা সম্ভব নয়। তাই পুলিশ সুপারের উচিত ছিল, বিদ্যমান আইনেও কীভাবে পুলিশ বাহিনী ডাকাতের কবল থেকে নাগরিকদের জানমালের হেফাজত করতে পারে, তার দিকনির্দেশনা দেওয়া। দেশের অনেক স্থানে এসব জনগুরুত্বপূর্ণর্ বিষয়ে পুলিশের বিলম্বে সাড়া দেওয়া এবং ডাকাতির মামলাকে চুরির মামলা বলে এজাহার দায়েরে ভুক্তভোগীকে প্ররোচিত করার অভিযোগও রয়েছে। আমরা আশা করব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজ বাহিনীর দক্ষতা এবং করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করতে পদক্ষেপ নেবেন। আর ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রকৃত ডাকাতরা যাতে সহজে জামিন বা বের হয়ে আসতে না পারে, সে জন্য আইনের ধারাগুলোকে কী করে আরও আঁটোসাঁটো করা যায় সেদিকটি ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ ও আইন প্রণেতাদের বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে আহ্বান জানাই। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনেরও পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
No comments