চরাচর-কলাপাতায় খাওয়া by আহমেদ রিয়াজ
ধরা যাক, কোনো এক গহিন গাঁয়ে নিমন্ত্রিত অতিথি হয়ে গেছেন আপনি। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাইয়ে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে তবে গন্তব্যে হাজির হলেন। আর গিয়ে দেখলেন, আপনাকে খাবার দেওয়া হলো কলাপাতায়। দেখেই মনটা ভরে গেল আপনার।
কলাপাতায় খাওয়া! সেই ছোটবেলায় একবার কী দুবার এমন কলাপাতায় খাওয়ার সৌভাগ্য আপনার হয়েছিল। তারপর তো ভুলেই গিয়েছিলেন। এত বছর পরে আবার মনে পড়ে গেল।
মানুষ যখন থেকে পাতে খাবার খাওয়া শুরু করল, তখন তো আর থালা-বাসন ছিল না। গাছের পাতায় রেখে খেত। এ গাছের পাতা ও গাছের পাতায় খেতে খেতে এক সময় আবিষ্কার করল, কলাপাতায় রেখে খাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। সেই থেকে শুরু হলো কলাপাতায় খাওয়া। বাংলাদেশ বা প্রতিবেশী ভারতেই শুধু নয়, কলাপাতায় খাওয়ার রেওয়াজ এখনো আছে দুনিয়ার অনেক দেশেই। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশগুলো তো আছেই; পুয়ের্তোরিকো, ডমিনিকান রিপাবলিকে আজও কলাপাতায় খাওয়া হয়। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর ইন্দোনেশিয়ার কিছু রান্না আছে কলাপাতা মুড়িয়ে করা হয়। এ খাবারের নাম কুইহ্ (Kuih)। আর মালয় খাবার নেসি লেমাকও রান্না হয় কলাপাতা মুড়িয়ে। কলাপাতাকে র্যাপিং পেপার হিসেবে মুড়িয়ে রান্না করা ভাতই হচ্ছে নেসি লেমাক। কলাপাতায় মুড়িয়ে রান্নার কারণ- এতে রান্না করা ভাত থেকে আলাদা একটা সুবাস ছড়ায়।
সে যা-ই হোক, কলাপাতায় খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত। খাওয়ার পরে থালা-বাসন ধোয়ার কোনো ঝামেলা নেই। আর কলাপাতা পোড়ালে ওজোন স্তরেরও ক্ষতি হয় না। কলাপাতার বাসনে খাবার রাখলে সেটা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় না, খাবারের মান থাকে অক্ষুণ্ন। সাধারণ থালা-বাসনে তাপ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। খাবারের স্বাদেও খানিকটা পরিবর্তন আসে। কলাপাতায় খাবারের স্বাদে কোনোই অদল-বদল হয় না।
সাধারণ থালার কোন গুণটি কলাপাতার বাসনে নেই? আকারে একেকটা কী বিশাল! সহজেই মোড়ানো যায় আর পানি নিরোধকও। এতসব গুণের কারণে আজও যখন অনেক মানুষের আপ্যায়নের ব্যাপার চলে আসে, তখনই মনে পড়ে কলাপাতার বাসনের কথা। তবে সেটা আমাদের শহুরে জীবনে তো অবশ্যই নয়। এমন কোনো জায়গায়, যেখানে নেই ডেকোরেটরের সুবিধা। তবু অনেকেই এখনো শখ করে কলাপাতায় খাবারের আসন পাতে। ভারতে কিছু রেস্টুরেন্টে থালার বদলে কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়। থালা বানানোর জন্য প্রথমে পুরো একটি কলাপাতা নেওয়া হয়। এরপর এর ঠিক মাঝ বরাবর কেটে নেওয়া হয়। তবে মাঝখানে পাতার বোঁটার যে অংশটা থাকে, সেটা রাখতেই হয়। নইলে থালাটা তেমন শক্তপোক্ত হয় না। এরপর সুবিধামতো আকারে আড়াআড়ি কেটে ধুলেই তৈরি হয়ে যায় কলাপাতার থালা। কখনো কখনো আবার আস্ত পাতাটাকে আড়াআড়ি দুই ভাগ বা তিন ভাগ করে কেটেই থালা বানানো হয়।
এখন আপনি চাইলেও কলাপাতায় খেতে পারবেন না। কারণ কলাগাছই তো নেই আপনার আশপাশে। এক সময় প্রতিটা ঘরে কয়েকটা কলাগাছ থাকত। টিনের ঘরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিত কলাপাতা। থালার দরকার হলেই কলাপাতায় আসন পাতত। এখন আর সেই কলাগাছও নেই, কলাপাতার আসনও নেই। তবু মাঝেমধ্যে অজপাড়াগাঁয়ে গেলে দেখা মেলে কলাপাতার থালা।
আহমেদ রিয়াজ
মানুষ যখন থেকে পাতে খাবার খাওয়া শুরু করল, তখন তো আর থালা-বাসন ছিল না। গাছের পাতায় রেখে খেত। এ গাছের পাতা ও গাছের পাতায় খেতে খেতে এক সময় আবিষ্কার করল, কলাপাতায় রেখে খাওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। সেই থেকে শুরু হলো কলাপাতায় খাওয়া। বাংলাদেশ বা প্রতিবেশী ভারতেই শুধু নয়, কলাপাতায় খাওয়ার রেওয়াজ এখনো আছে দুনিয়ার অনেক দেশেই। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশগুলো তো আছেই; পুয়ের্তোরিকো, ডমিনিকান রিপাবলিকে আজও কলাপাতায় খাওয়া হয়। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর ইন্দোনেশিয়ার কিছু রান্না আছে কলাপাতা মুড়িয়ে করা হয়। এ খাবারের নাম কুইহ্ (Kuih)। আর মালয় খাবার নেসি লেমাকও রান্না হয় কলাপাতা মুড়িয়ে। কলাপাতাকে র্যাপিং পেপার হিসেবে মুড়িয়ে রান্না করা ভাতই হচ্ছে নেসি লেমাক। কলাপাতায় মুড়িয়ে রান্নার কারণ- এতে রান্না করা ভাত থেকে আলাদা একটা সুবাস ছড়ায়।
সে যা-ই হোক, কলাপাতায় খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত। খাওয়ার পরে থালা-বাসন ধোয়ার কোনো ঝামেলা নেই। আর কলাপাতা পোড়ালে ওজোন স্তরেরও ক্ষতি হয় না। কলাপাতার বাসনে খাবার রাখলে সেটা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় না, খাবারের মান থাকে অক্ষুণ্ন। সাধারণ থালা-বাসনে তাপ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। খাবারের স্বাদেও খানিকটা পরিবর্তন আসে। কলাপাতায় খাবারের স্বাদে কোনোই অদল-বদল হয় না।
সাধারণ থালার কোন গুণটি কলাপাতার বাসনে নেই? আকারে একেকটা কী বিশাল! সহজেই মোড়ানো যায় আর পানি নিরোধকও। এতসব গুণের কারণে আজও যখন অনেক মানুষের আপ্যায়নের ব্যাপার চলে আসে, তখনই মনে পড়ে কলাপাতার বাসনের কথা। তবে সেটা আমাদের শহুরে জীবনে তো অবশ্যই নয়। এমন কোনো জায়গায়, যেখানে নেই ডেকোরেটরের সুবিধা। তবু অনেকেই এখনো শখ করে কলাপাতায় খাবারের আসন পাতে। ভারতে কিছু রেস্টুরেন্টে থালার বদলে কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়। থালা বানানোর জন্য প্রথমে পুরো একটি কলাপাতা নেওয়া হয়। এরপর এর ঠিক মাঝ বরাবর কেটে নেওয়া হয়। তবে মাঝখানে পাতার বোঁটার যে অংশটা থাকে, সেটা রাখতেই হয়। নইলে থালাটা তেমন শক্তপোক্ত হয় না। এরপর সুবিধামতো আকারে আড়াআড়ি কেটে ধুলেই তৈরি হয়ে যায় কলাপাতার থালা। কখনো কখনো আবার আস্ত পাতাটাকে আড়াআড়ি দুই ভাগ বা তিন ভাগ করে কেটেই থালা বানানো হয়।
এখন আপনি চাইলেও কলাপাতায় খেতে পারবেন না। কারণ কলাগাছই তো নেই আপনার আশপাশে। এক সময় প্রতিটা ঘরে কয়েকটা কলাগাছ থাকত। টিনের ঘরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিত কলাপাতা। থালার দরকার হলেই কলাপাতায় আসন পাতত। এখন আর সেই কলাগাছও নেই, কলাপাতার আসনও নেই। তবু মাঝেমধ্যে অজপাড়াগাঁয়ে গেলে দেখা মেলে কলাপাতার থালা।
আহমেদ রিয়াজ
No comments