মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ-স্বচ্ছতা ও ব্যয় সাশ্রয়ের নতুন দিগন্ত
মালয়েশিয়ায় কৃষি খাতে চাকরি পেতে চেষ্টা-তদবির লাগবে না এবং বিমান ভাড়াসহ খরচ পড়বে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। সরকারের এ ঘোষণা শোনার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
'বিদেশে চাকরি' পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেই যেখানে 'লাখ টাকা' খসে যায়, সেখানে এ আয়োজন স্বপ্নের মতো মনে হবে। এ চাকরির জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের দালাল কিংবা কোনো ধরনের প্রতারকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বা যোগাযোগ না করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী। স্বাভাবিক কারণেই প্রতারণার শঙ্কা থাকবে না। লোক বাছাই সম্পন্ন হবে লটারির ভিত্তিতে। মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং তাদের মধ্য থেকেই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে লটারি সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচির উদ্যোগে সারাদেশে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্র ইতিমধ্যেই গ্রামীণ আমজনতার কাছে সমাদৃত হয়েছে। এখন এর আওতা প্রসারিত হলো। ধরে নেওয়া যায় যে, প্রতিটি কেন্দ্রে শত শত লোক ভিড় জমাবে নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে। তারা যেন নির্বিঘ্নে এ কাজ সম্পন্ন করতে পারে এবং কোনো রকম পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ না ওঠে, সেটা নিশ্চিত করায় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মনোযোগী হবেন, এটাই কাম্য। সরকার একটি ব্যতিক্রমী সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে অব্যবস্থাপনার কারণে তা যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতে না পারে। প্রথম পর্যায়ে ৩৪ হাজার ৫০০ লোকের ডাটা বেইজ তৈরি হবে। তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন প্রথম ১০ হাজার কর্মী। নতুন করে লোক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলে বাকি ২৪ হাজার ৫০০ জন থেকে বাছাই করা হবে। স্বদেশ ও বিদেশ যেখানেই চাকরির সম্ভাবনা, সেখানেই প্রতারণা_ এমনই একটি ধারণা দেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং এর সত্যতা অবশ্যই রয়েছে। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে তা একেবারেই ভিন্নধর্মী। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে প্রতারণার শঙ্কা না থাকা এবং নূ্যনতম ব্যয়। প্রবাসে কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের এ আয়োজন থেকে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সৃষ্টিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অবদান অপরিসীম। আবার তাদেরই একটি অংশের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ। মালয়েশিয়া সরকার এবার লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংশ্লিষ্ট করতে চায়নি। অন্যান্য দেশেও তাদের সম্পর্কে অনেক অভিযোগ। কেন এ আস্থার অভাব, সেটা তাদের অজানা নয়। প্রবাসে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বেসরকারি খাতের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কেউ অস্বীকার করবে না। আমরা আশা করব যে, তাদের সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগগুলো দূর করায় তারা মনোযোগী হবেন এবং বিদেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের পাশাপাশি বিদেশি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন। এভাবে চললে দেশের কর্মসংস্থান সমস্যার যেমন সমাধান হবে, তেমনি সমৃদ্ধ হতে থাকবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
No comments