ফিলিস্তিনের ‘রাষ্ট্র’ মর্যাদার পক্ষে জাতিসংঘে রায়
ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবির প্রতি বিপুল সমর্থন জানিয়ে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র করে নেয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে সদস্য দেশগুলো।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘জন্ম সনদের’ এই দাবির বিষয়ে ভোটাভুটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৩৮টি সদস্য দেশ। ১৯৩ দেশের এই সংঘের মাত্র নয়টি ফিলিস্তিনিদের দাবির বিরোধিতা করেছে। এর মধ্যে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।
এই ভোটাভুটিতে ৪১টি সদস্য দেশে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল। ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতি এই বিপুল সমর্থনকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ‘কূটনৈতিক পরাজয়’ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফিলিস্তিন এতদিন এই বিশ্ব ফোরামের অধিবেশনে যোগ দেয়ার সুযোগ পেত ‘পর্যবেক্ষক অঞ্চল’ হিসাবে। পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ায় ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি সাধারণ অধিবেশনের বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন। ফিলিস্তিনের সীমানার দাবিও এক ধরনের স্বীকৃতি পাবে। তবে ইসরাইলের জন্য এর চেয়েও ভয়ের বিষয় হলো- এই মর্যাদার পর ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মতো জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর সদস্য হওয়ার আবেদন করতে পারবে। আর আইসিসির সদস্য হতে পারলে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও আনতে পারবে। এখনই জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হতে না পারলেও ‘রাষ্ট্র’ স্বীকৃতি পাওয়ার খবরে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় চাররঙা পতাকা হাতে উল্লাসে মেতে ওঠে দীর্ঘদিন ধরে সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদার দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা। স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর এই বিপুল সমর্থনকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ‘কূটনৈতিক পরাজয়’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে, ভোটের ফল ঘোষিত হওয়ার পর শত শত ফিলিস্তিনি রামাল্লার রাস্তায় নেমে আনন্দ উদযাপন করে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোট দু’দেশের (ইসরাইল ও ফিলিস্তিন) সমস্যা সমাধানের শেষ সুযোগ। ভোটগ্রহণের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আজ ফিলিস্তিনের জন্ম সনদের ব্যাপারে ভোটগ্রহণ করবে। ভোটাভুটির পর জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার ফিলিস্তিনিদের রয়েছে। আর ইসরাইলেরও রয়েছে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার। এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় শান্তি আলোচনা আবারও শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব পেল। অবশ্য জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রন প্রসর বলেছেন, এতে শান্তির সম্ভাবনা আরও পিছিয়ে যাবে। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাধারণ পরিষদের ভোটকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস যা বলেছেন তা কোন শান্তিকামী মানুষের কথা হতে পারে না। অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সাধারণ পরিষদের ভোটকে দুর্ভাগ্যজনক ও নেতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটা শান্তির পথে আরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
আর ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এই ভোটাভুটিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ফিলিস্তিন ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তিচুক্তির আওতায় আলোচনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের পথে না গিয়ে জাতিসংঘের মধ্য দিয়ে তা অর্জনের চেষ্টা করছে। জাতিসংঘে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ স্বীকৃতি পাওয়ায় আগামীতে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বলছে, বর্তমানে ১৩০টির বেশি দেশ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে।
২৯শে নভেম্বর: ইতিহাসের বুমেরাং
১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বরের একটি সাদাকালো ছবিতে নিজেদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় একদল মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। এর ঠিক ৬৫ বছর পরে একই তারিখে আর নিজেদের ভূখণ্ডের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিতে একটি রঙিন ছবিতে আর একদল মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। এই দুটি ছবি একই এলাকার পরস্পরবিরোধী দুটি রাষ্ট্র প্রত্যাশী মানুষের রাজনৈতিক জয়ের ছবি। এলাকাটি মধ্যপ্রাচ্যের শতাব্দীব্যাপী অশান্ত এলাকা জেরুজালেম, আর পক্ষ দুটি হলো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে বৃটিশ শাসিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে দু’ভাগ করে এর একভাগে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। ২৯শে নভেম্বরের ওই ভোটে ইসরাইলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়েছিল। এই ভোটে জয়ের পর উল্লসিত ইসরাইলিদের ওই সাদাকালো ছবিটি তোলা হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের ওই ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল। ক্ষুব্ধ প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো নব্য ইসরাইলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারা হেরে যায়। এরপর আরও কয়েকটি যুদ্ধে হেরে ইসরাইলের কাছে প্রচুর ভূমি হারায় আরব রাষ্ট্রগুলো। কিন্তু ৬৫ বছর পরে ইতিহাসের অপর রূপ। ঠিক ১৯৪৭ সালের মতোই ২০১২ সালের ২৯শে নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ মর্যাদা দিতে ভোটাভুটি হয়। এতে বিপুল ভোট পড়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। বেশ কিছু রাষ্ট্র ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে আর যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি রাষ্ট্রই শুধু এর বিরোধিতা করে। ফলাফল ফিলিস্তিনিদের জয়। কিন্তু এবার এ ফল প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল। ইসরাইলের অনেক বাসিন্দাই এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব্ব স্বীকার করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ নিজেদের সংগ্রামের ইতিহাসই তাদের ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের স্বীকৃতি দিতে উদ্বুদ্ধ করছে। ‘ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেরা শিক্ষক আমরাই’ বলেন, ইসরাইলি কলামনিস্ট ইটান হেবার। তিনি আরও বলেন, ‘জায়নবাদী আন্দোলন থেকে তাদের পাঠ নেয়া উচিত।’ বৃহস্পতিবার, ২৯শে নভেম্বর একদল শান্তিবাদী ইসরাইলি তেল আবিব জাদুঘরের কাছে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে মিছিল করেছে। ১৯৪৮ সালে এই জাদুঘরের সামনে থেকেই ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ অধিকার আন্দোলনকারী সাবেক ইসরাইলি আইনপ্রণেতা মোজি রাজ বলেন, ‘তারিখের এই মিলটি কাকতালীয় নয়। একটি ঐতিহাসিক ভুলকে শুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬৫ বছর আগে জাতিসংঘ একটি ইহুদি রাষ্ট্র ও একটি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। আজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মাধ্যমে আমরা ইতিহাসের সেই দাবি পূরণ করতে যাচ্ছি।’ সূত্র: এনডিটিভি
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) বলছে, বর্তমানে ১৩০টির বেশি দেশ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে।
২৯শে নভেম্বর: ইতিহাসের বুমেরাং
১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বরের একটি সাদাকালো ছবিতে নিজেদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় একদল মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। এর ঠিক ৬৫ বছর পরে একই তারিখে আর নিজেদের ভূখণ্ডের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিতে একটি রঙিন ছবিতে আর একদল মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে। এই দুটি ছবি একই এলাকার পরস্পরবিরোধী দুটি রাষ্ট্র প্রত্যাশী মানুষের রাজনৈতিক জয়ের ছবি। এলাকাটি মধ্যপ্রাচ্যের শতাব্দীব্যাপী অশান্ত এলাকা জেরুজালেম, আর পক্ষ দুটি হলো ইসরাইল ও ফিলিস্তিন। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে বৃটিশ শাসিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে দু’ভাগ করে এর একভাগে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। ২৯শে নভেম্বরের ওই ভোটে ইসরাইলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়েছিল। এই ভোটে জয়ের পর উল্লসিত ইসরাইলিদের ওই সাদাকালো ছবিটি তোলা হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘের ওই ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিল। ক্ষুব্ধ প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলো নব্য ইসরাইলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারা হেরে যায়। এরপর আরও কয়েকটি যুদ্ধে হেরে ইসরাইলের কাছে প্রচুর ভূমি হারায় আরব রাষ্ট্রগুলো। কিন্তু ৬৫ বছর পরে ইতিহাসের অপর রূপ। ঠিক ১৯৪৭ সালের মতোই ২০১২ সালের ২৯শে নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের’ মর্যাদা দিতে ভোটাভুটি হয়। এতে বিপুল ভোট পড়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। বেশ কিছু রাষ্ট্র ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে আর যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি রাষ্ট্রই শুধু এর বিরোধিতা করে। ফলাফল ফিলিস্তিনিদের জয়। কিন্তু এবার এ ফল প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল। ইসরাইলের অনেক বাসিন্দাই এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব্ব স্বীকার করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত। কারণ নিজেদের সংগ্রামের ইতিহাসই তাদের ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের স্বীকৃতি দিতে উদ্বুদ্ধ করছে। ‘ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেরা শিক্ষক আমরাই’ বলেন, ইসরাইলি কলামনিস্ট ইটান হেবার। তিনি আরও বলেন, ‘জায়নবাদী আন্দোলন থেকে তাদের পাঠ নেয়া উচিত।’ বৃহস্পতিবার, ২৯শে নভেম্বর একদল শান্তিবাদী ইসরাইলি তেল আবিব জাদুঘরের কাছে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে মিছিল করেছে। ১৯৪৮ সালে এই জাদুঘরের সামনে থেকেই ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ অধিকার আন্দোলনকারী সাবেক ইসরাইলি আইনপ্রণেতা মোজি রাজ বলেন, ‘তারিখের এই মিলটি কাকতালীয় নয়। একটি ঐতিহাসিক ভুলকে শুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়েই তারিখটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬৫ বছর আগে জাতিসংঘ একটি ইহুদি রাষ্ট্র ও একটি আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। আজ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মাধ্যমে আমরা ইতিহাসের সেই দাবি পূরণ করতে যাচ্ছি।’ সূত্র: এনডিটিভি
No comments