আজ বিশ্ব এইডস দিবস- রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রগুলো পড়ে আছে, রোগীরা সেবাবঞ্চিত by শিশির মোড়ল
এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীর রক্ত পরীক্ষার জন্য কেনা পাঁচটি যন্ত্র অব্যবহূত পড়ে আছে। বাকি তিনটি যন্ত্র চলছে কোনো রকমে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা চিকিৎসার ব্যাপারে আন্তরিক নন।
প্রায় আট কোটি টাকা দিয়ে আটটি সিডি-৪ যন্ত্র দুই বছর আগে কিনেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় এইডস/এসটিডি কার্যক্রম। প্রশিক্ষিত জনবল ও যন্ত্র চালানোর প্রয়োজনীয় রাসায়নিক না থাকায় যন্ত্রগুলো পড়ে আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি যন্ত্র চালানো হচ্ছিল। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় কার্যক্রমের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দরকারি রাসায়নিক (রিএজেন্ট) পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় এইডস/এসটিডি কার্যক্রমের লাইন ডিরেক্টর মো. আবদুল ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাসায়নিক পাঠানো হয়েছে। বাকি যন্ত্রগুলো আগামী জুন নাগাদ চালু হবে। এত দিন যন্ত্রগুলো পড়ে আছে কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন এক বছরও হয়নি। দায়িত্ব নিয়েই যন্ত্রগুলো চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই যন্ত্র দিয়ে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীর রক্তের সিডি-৪ মাপা হয়। সিডি-৪ হচ্ছে রক্তের একধরনের শ্বেতকণিকা (লিম্ফোসাইট)। এই কণিকা রোগ প্রতিরোধ করে। এক কিউবিক মিলিমিটার রক্তে ৭০০ থেকে ১২০০ সিডি-৪ থাকে। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির নিয়মিত সিডি-৪-এর সংখ্যা জানা দরকার হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির যদি জ্বর, ডায়রিয়া বা ক্ষুধামান্দ্য হয় এবং তার সিডি-৪ যদি ৩৫০-এর কম হয়, তাহলে তাকে এইডসের ওষুধ (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল বা এআরভি) দিতে হয়। আবার এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির কোনো উপসর্গ ছাড়াই সিডি-৪ যদি ২০০-এর কম হয়, তাহলেও তাকে এইডসের ওষুধ দিতে হয়।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় কার্যক্রমের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের কাছে আটটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আটটি যন্ত্র কেনার অনুরোধ করা হয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের চিকিৎসায় জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না তার অন্যতম প্রমাণ এই যন্ত্র বিতরণ। আইপিএইচ এ বিষয়ে কোনো কাজ করে না, রোগীকে সেবাও দেয় না। অথচ সেখানে একটি যন্ত্র পাঠনো হয়েছে। যন্ত্রটি চালাবার লোক নেই। আইপিএইচ কখনো তা চালাবেও না।
এ ব্যাপারে আবদুল ওয়াহাব বলেন, আইপিএইচে যন্ত্রটা পাঠানো ভুল হয়েছে। সেখান থেকে যন্ত্রটি ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগেও একটি যন্ত্র পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক পরিতোষ কুণ্ডুু প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রটি অত্যাধুনিক। যন্ত্রটি শুধু চালানোর ব্যাপারে ‘হালকা-পাতলা’ প্রশিক্ষণ দিয়েছে যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। যন্ত্র চালানোর জন্য কোনো রাসায়নিক পাঠানো হয়নি। যন্ত্রটি কবে নাগাদ চালু হবে, তা কর্তৃপক্ষ জানে না।
দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর এইডস রোগীর সংখ্যা এক হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সারা দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আশার আলো সোসাইটি এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত এবং এইডসে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। এদের এক দলের চিকিৎসা শুরু করা দরকার কি না, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে এইডস রোগীরা ওষুধ খেয়ে ভালো আছে কি না, তা জানার জন্যও নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের রোগীদের ঢাকায় আসতে হচ্ছে। যন্ত্রগুলো ঠিকমতো চালু হলে রোগীদের ঢাকায় আসার কষ্ট দূর হতো।’
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সিডি-৪ মাপা হয়।
বিশ্ব এইডস দিবস: দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল আটটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। সকাল ১০টায় ওসমানি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে।
এ ব্যাপারে জাতীয় এইডস/এসটিডি কার্যক্রমের লাইন ডিরেক্টর মো. আবদুল ওয়াহিদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রাসায়নিক পাঠানো হয়েছে। বাকি যন্ত্রগুলো আগামী জুন নাগাদ চালু হবে। এত দিন যন্ত্রগুলো পড়ে আছে কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন এক বছরও হয়নি। দায়িত্ব নিয়েই যন্ত্রগুলো চালানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
এই যন্ত্র দিয়ে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীর রক্তের সিডি-৪ মাপা হয়। সিডি-৪ হচ্ছে রক্তের একধরনের শ্বেতকণিকা (লিম্ফোসাইট)। এই কণিকা রোগ প্রতিরোধ করে। এক কিউবিক মিলিমিটার রক্তে ৭০০ থেকে ১২০০ সিডি-৪ থাকে। এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির নিয়মিত সিডি-৪-এর সংখ্যা জানা দরকার হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির যদি জ্বর, ডায়রিয়া বা ক্ষুধামান্দ্য হয় এবং তার সিডি-৪ যদি ৩৫০-এর কম হয়, তাহলে তাকে এইডসের ওষুধ (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল বা এআরভি) দিতে হয়। আবার এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির কোনো উপসর্গ ছাড়াই সিডি-৪ যদি ২০০-এর কম হয়, তাহলেও তাকে এইডসের ওষুধ দিতে হয়।
কাগজপত্রে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় কার্যক্রমের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের কাছে আটটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আটটি যন্ত্র কেনার অনুরোধ করা হয়। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের চিকিৎসায় জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, সরকার যে এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না তার অন্যতম প্রমাণ এই যন্ত্র বিতরণ। আইপিএইচ এ বিষয়ে কোনো কাজ করে না, রোগীকে সেবাও দেয় না। অথচ সেখানে একটি যন্ত্র পাঠনো হয়েছে। যন্ত্রটি চালাবার লোক নেই। আইপিএইচ কখনো তা চালাবেও না।
এ ব্যাপারে আবদুল ওয়াহাব বলেন, আইপিএইচে যন্ত্রটা পাঠানো ভুল হয়েছে। সেখান থেকে যন্ত্রটি ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগেও একটি যন্ত্র পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক পরিতোষ কুণ্ডুু প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্রটি অত্যাধুনিক। যন্ত্রটি শুধু চালানোর ব্যাপারে ‘হালকা-পাতলা’ প্রশিক্ষণ দিয়েছে যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। যন্ত্র চালানোর জন্য কোনো রাসায়নিক পাঠানো হয়নি। যন্ত্রটি কবে নাগাদ চালু হবে, তা কর্তৃপক্ষ জানে না।
দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর এইডস রোগীর সংখ্যা এক হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, সারা দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের বেশি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আশার আলো সোসাইটি এইচআইভি সংক্রমিত ও এইডস রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত এবং এইডসে আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। এদের এক দলের চিকিৎসা শুরু করা দরকার কি না, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে এইডস রোগীরা ওষুধ খেয়ে ভালো আছে কি না, তা জানার জন্যও নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা দরকার। তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের রোগীদের ঢাকায় আসতে হচ্ছে। যন্ত্রগুলো ঠিকমতো চালু হলে রোগীদের ঢাকায় আসার কষ্ট দূর হতো।’
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সিডি-৪ মাপা হয়।
বিশ্ব এইডস দিবস: দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল আটটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। সকাল ১০টায় ওসমানি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে।
No comments