এত প্রাণহানি তবু কারও শাস্তি হয়নি by গোলাম মর্তুজা
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের শীর্ষ সংগঠনের (বিজিএমইএ) হিসাবে তাজরীন ফ্যাশনসের ১১১ জন শ্রমিক বাদে কারখানায় আগুন লেগে ১৯৯০ সালের পর থেকে ২৭৫ জন নিহত হয়েছেন। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) হিসাবমতে এ সংখ্যা ৩২০।
তবে এত বিপুল প্রাণহানির কোনো ঘটনায়ই কারও শাস্তির নজির নেই।
বিভিন্ন কারখানায় আগুন লেগে হতাহত হওয়ার পরের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেই মামলা করে পুলিশ। বেশির ভাগ মামলাই দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় (অবহেলার দরুন মৃত্যু সংঘটন) করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। বাদী পুলিশই মামলা তদন্ত করে ‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। তবে চট্টগ্রামের কেটিএস টেক্সটাইলে আগুনে ৬৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত মামলাটি বাতিলের নির্দেশ দিলে আসামিরা খালাস পান।
সর্বশেষ তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুনে ১১১ জন পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায়ও পুলিশ অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে মামলা করেছে। মামলায় নাশকতার (দণ্ডবিধির ৪৩৬) অভিযোগের পাশাপাশি অবহেলায় মৃত্যুর (৩০৪ক) অভিযোগও আনা হয়।
দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনের কারণে যদি কারও প্রাণহানি হয়, তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি চার বছর কারাদণ্ড। মালিকের অবহেলায় শত শ্রমিকের প্রাণহানিরও এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি। তবে বাংলাদেশের কোনো কারখানার কর্তৃপক্ষ এই শাস্তিও পায়নি।
কেটিএসে ৬৪ জনের মৃত্যু, মামলা হাইকোর্টে বাতিল: ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট শিল্প এলাকায় কেটিএস টেক্সটাইলে আগুনে পুড়ে ৬৪ জন মারা যান। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুদ্দীন ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলা করেন।
এতে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর প্রধান আসামি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী, চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, দুই পরিচালকসহ ছয়জনকে বাদ দিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন: কেটিএস টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেডের তিন পরিচালক মো. ছাদৎ উল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী ও মনিরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ এনামুল হক মুকুল, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুনতাকিন মহসীন খান, ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন ফারুকী, কর্মকর্তা আবুল কাশেম, এহসানুল হক, মো. জুম্মন, মিজানুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস রাজু এবং প্রহরী বাবুল ও নূর মোহাম্মদ। মামলায় দণ্ডবিধির ৩৩৮, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে ‘একই উদ্দেশ্য সাধনে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের কারণে আগুনে পুড়ে গুরুতর জখমসহ নরহত্যা’র অভিযোগ আনা হয়।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. ইনামুল হক ভূঁইয়া ২০০৯ সালের ৩০ জুন এই আসামিদের খালাস দেন। উচ্চ আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক তাঁর আদেশে বলেন, ‘মহামান্য উচ্চ আদালত রুল নিষ্পত্তি করে মামলাটি বাতিল করে আসামিদের খালাস প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহামান্য আদালতের নির্দেশমতে আসামিদের খালাস প্রদান করা হলো।’
গরীব অ্যান্ড গরীবে ২১ প্রাণহানি, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন: ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছিল, ওই কারখানার দ্বিতীয় তলায় অসতর্কতার কারণে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা সাততলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কালো ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। এতে শ্রমিকেরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। ২১ জন শ্রমিক আগুন ও ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরা সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আগুন লাগার পরপরই মেইন সুইচ বন্ধ করে দিলে পুরো কারখানা অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে ধোঁয়ায় চোখ খুলে রাখা যাচ্ছিল না। দমও বন্ধ হয়ে আসছিল। দরজা বন্ধ পেয়ে স্থানীয় লোকজন জানালার গ্রিল কেটে তাঁদের উদ্ধার করেন।
ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশ কারও অবহেলা খুঁজে পায়নি। ছয় মাস পর মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
২৯ জনের প্রাণহানি: ওই বছরেরই ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার নরসিংহপুরে হা-মীম গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জন (বিজিএমইএর হিসাবমতে) নিহত হয়েছিলেন। এই কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরাও অগ্নিকাণ্ডের সময় ফটক বন্ধ রাখার অভিযোগ করেছিলেন। আশুলিয়া থানার এসআই এম ইউসুফ আলী ওই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করেন। এক দিন পর হা-মীম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছিলেন, এটি নাশকতা। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। পুলিশের করা মামলাটি সাত মাস তদন্তের পর গত বছরের ২১ জুন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। তবে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ বলেন, শ্রম আইনে মালিকের অবহেলায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার শাস্তি খুবই সামান্য। তবু বাংলাদেশে কোনো মালিকের এখন পর্যন্ত এই শাস্তিটুকুও ভোগ করার নজির নেই।
একজন আইনজীবী ও এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ১০টি এমন দুর্ঘটনায় দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত মালিক বা শ্রমিকেরা কোনো মামলা করেননি। মামলা করেছে পুলিশ। কোনো তদারকি না থাকায় এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শ্রমিক সংগঠনগুলো ঘটনার সময় অনেক হইচই করলেও কোনো আইনি পদক্ষেপের অংশ হয় না।
মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন: ‘মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন’ নামে একটি আইন আছে। ১৮৫৫ সালের এই আইন অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তির যত দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল (গড় আয়ু) এবং তিনি ওই সময়ে যা আয় করতেন, তা হিসাব কষে বের করে এর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়।
একাধিক আইনজীবী বলেন, পোশাক কারখানায় চাকরি করা লোকগুলো আসেন হতদরিদ্র পরিবার থেকে। দুর্ঘটনায় স্বজন হারালে লাশ নিয়ে কোনো রকমে বাড়ি পৌঁছতে পারলেই তাঁরা যেন বেঁচে যান। শহরে থাকা কিংবা মামলা চালানোর সংগতি তাঁদের থাকে না। পুলিশ মামলা করেছে শুনলে স্বজন বা নিহত ব্যক্তিদের পোষ্যরা আর মামলা করেন না। এরই সুযোগ নেয় মালিকপক্ষ।
মারাত্মক দুর্ঘটনা আইনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘অন্য কারও অন্যায় কাজের জন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে মৃত ব্যক্তির পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রণীত আইন’।
এই আইনের ধারা ১-এ বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তিরা এবং নিহত ব্যক্তির পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান এই আইনে মামলা করতে পারবেন।
বিভিন্ন কারখানায় আগুন লেগে হতাহত হওয়ার পরের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রেই মামলা করে পুলিশ। বেশির ভাগ মামলাই দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় (অবহেলার দরুন মৃত্যু সংঘটন) করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। বাদী পুলিশই মামলা তদন্ত করে ‘অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি’ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। তবে চট্টগ্রামের কেটিএস টেক্সটাইলে আগুনে ৬৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত মামলাটি বাতিলের নির্দেশ দিলে আসামিরা খালাস পান।
সর্বশেষ তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুনে ১১১ জন পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায়ও পুলিশ অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে মামলা করেছে। মামলায় নাশকতার (দণ্ডবিধির ৪৩৬) অভিযোগের পাশাপাশি অবহেলায় মৃত্যুর (৩০৪ক) অভিযোগও আনা হয়।
দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩০৯ ধারা অনুযায়ী, আইন লঙ্ঘনের কারণে যদি কারও প্রাণহানি হয়, তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি চার বছর কারাদণ্ড। মালিকের অবহেলায় শত শ্রমিকের প্রাণহানিরও এটাই সর্বোচ্চ শাস্তি। তবে বাংলাদেশের কোনো কারখানার কর্তৃপক্ষ এই শাস্তিও পায়নি।
কেটিএসে ৬৪ জনের মৃত্যু, মামলা হাইকোর্টে বাতিল: ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট শিল্প এলাকায় কেটিএস টেক্সটাইলে আগুনে পুড়ে ৬৪ জন মারা যান। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শামসুদ্দীন ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলা করেন।
এতে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তের পর প্রধান আসামি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী, চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, দুই পরিচালকসহ ছয়জনকে বাদ দিয়ে ১৪ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন: কেটিএস টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস লিমিটেডের তিন পরিচালক মো. ছাদৎ উল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী ও মনিরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ এনামুল হক মুকুল, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুনতাকিন মহসীন খান, ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন ফারুকী, কর্মকর্তা আবুল কাশেম, এহসানুল হক, মো. জুম্মন, মিজানুর রহমান খান, জামাল উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস রাজু এবং প্রহরী বাবুল ও নূর মোহাম্মদ। মামলায় দণ্ডবিধির ৩৩৮, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে ‘একই উদ্দেশ্য সাধনে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যের কারণে আগুনে পুড়ে গুরুতর জখমসহ নরহত্যা’র অভিযোগ আনা হয়।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. ইনামুল হক ভূঁইয়া ২০০৯ সালের ৩০ জুন এই আসামিদের খালাস দেন। উচ্চ আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারক তাঁর আদেশে বলেন, ‘মহামান্য উচ্চ আদালত রুল নিষ্পত্তি করে মামলাটি বাতিল করে আসামিদের খালাস প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছেন। মহামান্য আদালতের নির্দেশমতে আসামিদের খালাস প্রদান করা হলো।’
গরীব অ্যান্ড গরীবে ২১ প্রাণহানি, পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন: ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২১ জন নিহত হন। এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামি করে অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছিল, ওই কারখানার দ্বিতীয় তলায় অসতর্কতার কারণে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা সাততলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং কালো ধোঁয়া বের হতে শুরু করে। এতে শ্রমিকেরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। ২১ জন শ্রমিক আগুন ও ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরা সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আগুন লাগার পরপরই মেইন সুইচ বন্ধ করে দিলে পুরো কারখানা অন্ধকার হয়ে যায়। অন্ধকারে ধোঁয়ায় চোখ খুলে রাখা যাচ্ছিল না। দমও বন্ধ হয়ে আসছিল। দরজা বন্ধ পেয়ে স্থানীয় লোকজন জানালার গ্রিল কেটে তাঁদের উদ্ধার করেন।
ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশ কারও অবহেলা খুঁজে পায়নি। ছয় মাস পর মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
২৯ জনের প্রাণহানি: ওই বছরেরই ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার নরসিংহপুরে হা-মীম গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ২৯ জন (বিজিএমইএর হিসাবমতে) নিহত হয়েছিলেন। এই কারখানার বেঁচে যাওয়া শ্রমিকেরাও অগ্নিকাণ্ডের সময় ফটক বন্ধ রাখার অভিযোগ করেছিলেন। আশুলিয়া থানার এসআই এম ইউসুফ আলী ওই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করেন। এক দিন পর হা-মীম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছিলেন, এটি নাশকতা। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা করেনি। পুলিশের করা মামলাটি সাত মাস তদন্তের পর গত বছরের ২১ জুন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। তবে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ বলেন, শ্রম আইনে মালিকের অবহেলায় শ্রমিকের মৃত্যু বা আহত হওয়ার শাস্তি খুবই সামান্য। তবু বাংলাদেশে কোনো মালিকের এখন পর্যন্ত এই শাস্তিটুকুও ভোগ করার নজির নেই।
একজন আইনজীবী ও এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ১০টি এমন দুর্ঘটনায় দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত মালিক বা শ্রমিকেরা কোনো মামলা করেননি। মামলা করেছে পুলিশ। কোনো তদারকি না থাকায় এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। শ্রমিক সংগঠনগুলো ঘটনার সময় অনেক হইচই করলেও কোনো আইনি পদক্ষেপের অংশ হয় না।
মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন: ‘মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন’ নামে একটি আইন আছে। ১৮৫৫ সালের এই আইন অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তির যত দিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল (গড় আয়ু) এবং তিনি ওই সময়ে যা আয় করতেন, তা হিসাব কষে বের করে এর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়।
একাধিক আইনজীবী বলেন, পোশাক কারখানায় চাকরি করা লোকগুলো আসেন হতদরিদ্র পরিবার থেকে। দুর্ঘটনায় স্বজন হারালে লাশ নিয়ে কোনো রকমে বাড়ি পৌঁছতে পারলেই তাঁরা যেন বেঁচে যান। শহরে থাকা কিংবা মামলা চালানোর সংগতি তাঁদের থাকে না। পুলিশ মামলা করেছে শুনলে স্বজন বা নিহত ব্যক্তিদের পোষ্যরা আর মামলা করেন না। এরই সুযোগ নেয় মালিকপক্ষ।
মারাত্মক দুর্ঘটনা আইনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘অন্য কারও অন্যায় কাজের জন্য কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে মৃত ব্যক্তির পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রণীত আইন’।
এই আইনের ধারা ১-এ বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তিরা এবং নিহত ব্যক্তির পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, সন্তান এই আইনে মামলা করতে পারবেন।
No comments