লোক বক্তৃতায় অশোক মিত্র- অর্থনীতিই অর্থনীতির শেষ কথা নয়, মূল নিয়ামক রাজনীতি
অর্থনীতিই অর্থনীতির শেষ কথা নয়। যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, গোটা পৃথিবীর নিয়ামক শেষ পর্যন্ত অর্থশাস্ত্র নয়। বরং অর্থনীতির ওপর যাঁরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, ক্ষমতা যাঁরা দখল করেছেন, রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে যাঁরা আছেন, তাঁরাই নিয়ামক ও নিয়ন্ত্রক।
ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্র এভাবেই গতকাল শুক্রবার অর্থনীতির ওপর রাজনীতির প্রভাব ও বিস্তারকে বিবৃত করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সমিতির (ডিইউএএ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত ‘উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন’ শীর্ষক লোক বক্তৃতায় অশোক মিত্র আরও বলেন, রাজনীতিতে টিকতে হলে নোংরা ঘাঁটতে হয়। অর্থনীতিবিদেরা কিছুদূর পর্যন্ত যেতে পারেন, তারপর নয়।’
নিজের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, ‘আমি সরকারি অর্থনীতিবিদ হিসেবেই জীবন কাটাতে পারতাম। কিন্তু নিজের দেশের (পশ্চিম বাংলা) জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে রাজনীতি করতে গিয়েছিলাম। তবে এখানে হয় স্রোতে গা ভাসাতে হবে, না-হয় প্রতিবাদী হতে হবে। প্রতিবাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হলে ছেড়ে দিতে হবে।’
রাজধানীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে ৮৫ বছর বয়সী এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ তাঁর বক্তৃতায় রাজনীতি-অর্থনীতির সম্পৃক্ততা, উন্নয়নের অমীমাংসিত বিভিন্ন প্রশ্ন এবং বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থায় উন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতির সংকট নিয়ে আলোকপাত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র অশোক মিত্র দেশ বিভাগের কিছুদিন পর ভারতে চলে যান। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর আদি বাড়ি পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডিইউএএর সভাপতি সৈয়দ মনজুর এলাহী।
উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন: শুধু প্রবৃদ্ধির হারই যে উন্নয়ন নয়, সে কথা জোর দিয়ে বললেন অশোক মিত্র। প্রশ্ন করলেন, ‘স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরও ভারতের প্রায় অর্ধেক মানুষ নিরক্ষর। এটা কোন ধরনের উন্নয়ন?’ তাঁর আরও প্রশ্ন,‘কর্মসংস্থানহীন, পুষ্টিহীন উন্নয়ন কি আমাদের কাম্য? কিছু মানুষ ফুলে-ফেঁপে উঠছে। এটা কি উন্নয়ন?’ জবাবও নিজেই দিলেন এই বলে যে, দেখতে হবে প্রবৃদ্ধির হার নয়, বরং কর্মসংস্থান কত বেড়েছে, কতজন খেতে-পরতে পারছে, নিরক্ষরতা দূর হয়েছে কি না ইত্যাদি।
অশোক মিত্র বলেন, ‘সাচ্চা অর্থনীতিবিদ হয়েও আমরা বলতে পারি না উন্নয়ন কী। আর যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁরা যা বলবেন, তা-ই উন্নয়ন। কেননা, তাঁরাই তো রাষ্ট্র ও সরকারের নীতি নির্ধারণ করেন।
বিশ্বায়নের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক বিশ্লেষণ জটিল কাজ হিসেবে উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, ‘কার্ল মার্ক্সই সবার আগে সজ্ঞানে বিশ্বায়নের কথা বলে গেছেন। বলেছেন, “দুনিয়ার মজদুর, বিশ্বায়িত হও। দুনিয়ার মজদুর এক হও।”’
কিন্তু আজকের বিশ্বায়ন আর শ্রমজীবী মানুষের বিশ্বায়নের কথা বলে না, বলে পুঁজি ও পণ্যের বিশ্বায়নের কথা—এ মন্তব্য করে অশোক মিত্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির চলমান সংকটের দিকে আলোকপাত করলেন। ইউরোপের আর্থিক সংকটের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘অপরাধ করল ফাটকাবাজেরা, ভুক্তভোগী হলো গরিবেরা।’
প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: ‘বাংলাদেশের নারী প্রগতি আমাকে মুগ্ধ করে’—এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বললেন অশোক মিত্র। বললেন, তাঁর সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুজন মুসলমান ছাত্রী ছিলেন, যাঁরা বোরকা পরে আসতেন। আর এবার ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর যে মহিলা বিমানকর্মী তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলে এনেছেন, তাঁর মুখে সাবলীল ইংরেজি আর চটপট কাজ। এমনই এক প্রগতির উদাহরণ। বিশ্বায়ন ছাড়া এই প্রগতি হতো কি না, তাতে তাঁর সন্দেহ আছে বলেও উল্লেখ করলেন অশোক মিত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র হওয়াকে নিজের জীবনে সবচেয়ে গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন বক্তৃতার শুরুতেই। তাঁর জীবনের সবকিছুর জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ঋণী। তিনি বলেন, ‘এখানকার অর্থনীতিবিদেরা অর্থশাস্ত্রের যৌক্তিক বিশ্লেষণক্ষমতা রপ্ত করেও মাটির সঙ্গে সংযোগ হারাননি। সেই পঞ্চাশের দশক থেকে তাঁদের গবেষণায় মাটি ও মানুষ গুরুত্ব পেয়েছে, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিক পটভূমি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি অশোক মিত্রকে তাঁর এবং আরও অনেকের গুরু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ১৯৭১ সালে দিল্লিতে তাঁর বাসভবন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদদের শরণার্থী শিবির।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘অশোকদাই আমাকে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অনন্য। পূর্বপুরুষের ভিটার প্রতি টান ও রাজনৈতিক দর্শনই এটা সম্ভব করেছে।’
নিজের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, ‘আমি সরকারি অর্থনীতিবিদ হিসেবেই জীবন কাটাতে পারতাম। কিন্তু নিজের দেশের (পশ্চিম বাংলা) জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে রাজনীতি করতে গিয়েছিলাম। তবে এখানে হয় স্রোতে গা ভাসাতে হবে, না-হয় প্রতিবাদী হতে হবে। প্রতিবাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হলে ছেড়ে দিতে হবে।’
রাজধানীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে ৮৫ বছর বয়সী এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ তাঁর বক্তৃতায় রাজনীতি-অর্থনীতির সম্পৃক্ততা, উন্নয়নের অমীমাংসিত বিভিন্ন প্রশ্ন এবং বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থায় উন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতির সংকট নিয়ে আলোকপাত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র অশোক মিত্র দেশ বিভাগের কিছুদিন পর ভারতে চলে যান। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর আদি বাড়ি পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডিইউএএর সভাপতি সৈয়দ মনজুর এলাহী।
উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন: শুধু প্রবৃদ্ধির হারই যে উন্নয়ন নয়, সে কথা জোর দিয়ে বললেন অশোক মিত্র। প্রশ্ন করলেন, ‘স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরও ভারতের প্রায় অর্ধেক মানুষ নিরক্ষর। এটা কোন ধরনের উন্নয়ন?’ তাঁর আরও প্রশ্ন,‘কর্মসংস্থানহীন, পুষ্টিহীন উন্নয়ন কি আমাদের কাম্য? কিছু মানুষ ফুলে-ফেঁপে উঠছে। এটা কি উন্নয়ন?’ জবাবও নিজেই দিলেন এই বলে যে, দেখতে হবে প্রবৃদ্ধির হার নয়, বরং কর্মসংস্থান কত বেড়েছে, কতজন খেতে-পরতে পারছে, নিরক্ষরতা দূর হয়েছে কি না ইত্যাদি।
অশোক মিত্র বলেন, ‘সাচ্চা অর্থনীতিবিদ হয়েও আমরা বলতে পারি না উন্নয়ন কী। আর যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁরা যা বলবেন, তা-ই উন্নয়ন। কেননা, তাঁরাই তো রাষ্ট্র ও সরকারের নীতি নির্ধারণ করেন।
বিশ্বায়নের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক বিশ্লেষণ জটিল কাজ হিসেবে উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, ‘কার্ল মার্ক্সই সবার আগে সজ্ঞানে বিশ্বায়নের কথা বলে গেছেন। বলেছেন, “দুনিয়ার মজদুর, বিশ্বায়িত হও। দুনিয়ার মজদুর এক হও।”’
কিন্তু আজকের বিশ্বায়ন আর শ্রমজীবী মানুষের বিশ্বায়নের কথা বলে না, বলে পুঁজি ও পণ্যের বিশ্বায়নের কথা—এ মন্তব্য করে অশোক মিত্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির চলমান সংকটের দিকে আলোকপাত করলেন। ইউরোপের আর্থিক সংকটের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘অপরাধ করল ফাটকাবাজেরা, ভুক্তভোগী হলো গরিবেরা।’
প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: ‘বাংলাদেশের নারী প্রগতি আমাকে মুগ্ধ করে’—এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বললেন অশোক মিত্র। বললেন, তাঁর সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুজন মুসলমান ছাত্রী ছিলেন, যাঁরা বোরকা পরে আসতেন। আর এবার ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর যে মহিলা বিমানকর্মী তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলে এনেছেন, তাঁর মুখে সাবলীল ইংরেজি আর চটপট কাজ। এমনই এক প্রগতির উদাহরণ। বিশ্বায়ন ছাড়া এই প্রগতি হতো কি না, তাতে তাঁর সন্দেহ আছে বলেও উল্লেখ করলেন অশোক মিত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র হওয়াকে নিজের জীবনে সবচেয়ে গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন বক্তৃতার শুরুতেই। তাঁর জীবনের সবকিছুর জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ঋণী। তিনি বলেন, ‘এখানকার অর্থনীতিবিদেরা অর্থশাস্ত্রের যৌক্তিক বিশ্লেষণক্ষমতা রপ্ত করেও মাটির সঙ্গে সংযোগ হারাননি। সেই পঞ্চাশের দশক থেকে তাঁদের গবেষণায় মাটি ও মানুষ গুরুত্ব পেয়েছে, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিক পটভূমি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি অশোক মিত্রকে তাঁর এবং আরও অনেকের গুরু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ১৯৭১ সালে দিল্লিতে তাঁর বাসভবন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদদের শরণার্থী শিবির।
রেহমান সোবহান বলেন, ‘অশোকদাই আমাকে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অনন্য। পূর্বপুরুষের ভিটার প্রতি টান ও রাজনৈতিক দর্শনই এটা সম্ভব করেছে।’
No comments