সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি! by প্রতীক আহমেদ
দেখতে দেখতে ফুরিয়ে এলো খ্রিস্টীয় সাল ২০১২। আর মাত্র এক মাস। তারপর ২০১৩। অস্তগামী বছরে আমরা সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতির অঙ্গনসহ নানা ক্ষেত্রের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি। বিশেষভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিয়োগব্যথায় আক্রান্ত করেছে তিনজন বিখ্যাত লেখকের মৃত্যু।
দু'জন পশ্চিমবঙ্গের, একজন বাংলাদেশের। জুলাই মাসে হুমায়ূন আহমেদ, সেপ্টেম্বর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, আর অক্টোবর মাসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চলে গেলেন। তাদের স্মরণে দুই দেশেই গণমাধ্যমে ছিল শোকাবহ নানা মাত্রিক উপস্থাপনা।
দুই সাহিত্যিক পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হলেও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের বাংলাদেশে বাংলাভাষার বরেণ্য লেখক হিসেবে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্মরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মতো সিরিয়াস লেখক_ যিনি প্রচলিত অর্থে জনপ্রিয় ধারার নন, তাকেও বাংলাদেশের সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করেছে। হুমায়ূন আহমেদ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো বিপুলভাবে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছেই সুপরিচিত। সুতরাং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রয়াত এই তিন প্রখ্যাত লেখকের মূল্যায়নের জন্য এ লেখা নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কারণে এ লেখা। সে প্রসঙ্গেই যাওয়া যাক।
কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন একটি বইমেলার আয়োজন করেছিল গত সপ্তাহে (২২ থেকে ২৬ নভেম্বর)। ওই মেলায় বাংলাদেশের বই সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা অবগত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের কথা। বইমেলার মধ্যেই একটি কর্মসূচি ছিল দুই বাংলার দু'জন বরেণ্য সাহিত্যিকের স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। তাতে বাংলাদেশের ইতিহাস-গবেষক ও সাহিত্যিক ড. মুনতাসীর মামুনসহ একাধিক লেখক অংশ নেন। পশ্চিমবঙ্গেরও খ্যাতনামা লেখকরা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ওই স্মরণ অনুষ্ঠানের খবর পড়ে একটু খটকা লেগেছিল এই ভেবে যে, প্রায় একই সময় প্রয়াত সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে কেন স্মরণ করা হবে না! যেখানে বাংলাদেশে তার এত বিপুলসংখ্যক পাঠক, একাত্তরে যিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখে 'মুক্তিযুদ্ধের কলমবন্ধু' বলে খ্যাত, তার মৃত্যুসংবাদ ছাপতে গিয়ে ঢাকার গণমাধ্যম তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করল দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে, দুই বাংলার বরেণ্য সেই লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে কেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন উপেক্ষা করবে? একি অজ্ঞতা, নাকি বিশেষ হাউজের উপেক্ষার অনুসরণ?
এ ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই অনলাইনে ২৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আজকালে প্রকাশিত বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ হাসমত জালালের একটি প্রতিক্রিয়া পড়লাম। প্রতিক্রিয়া পড়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। জবাব কী দেওয়া যায় তার সঙ্গত প্রশ্নের? সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ_ যাকে 'রাইটার্স অব দ্য রাইটার্স' বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশেরই ইংরেজি দৈনিক, যার মৃত্যুর পর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রে বলেছেন, 'আমরা হয়তো থাকব না, কিন্তু সিরাজ বাংলা সাহিত্যে থেকে যাবে।' তার রচনার গুণগত উৎকর্ষের কথাই বলেছেন সুনীল।
শুধু আজকাল নয়, একদিন পরই সেখানকার আরেক দৈনিক সকালবেলার উপসম্পাদকীয়তেও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের এই উপেক্ষার তীব্র সমালোচনা হয়েছে। 'অলীক মানুষ'-এর স্রষ্টা সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের নিশি মৃগয়া, পিঞ্জর সোহাগিনী, আসমানতারা, নীলঘরের নটী তো এই বাংলারও অনেকের প্রিয়। তার কর্নেল সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার হৃদয় কেড়েছে। তাহলে কেন বাংলাদেশ হাইকমিশন এই কাণ্ড করল!
এমন বড়মাপের, একই সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল এবং সাধারণের হৃদয়ছোঁয়া লেখক সংখ্যালঘু হয়েও পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ছিলেন জাতপাতের ঊধর্ে্ব। যদিও ওপারের একটি বড় প্রকাশনা তাকে কম গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন হীনমন্যতায় তাকে স্মরণ করল না কলকাতায় স্মরণসভায়? এ প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেব আমরা?
দুই সাহিত্যিক পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হলেও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের বাংলাদেশে বাংলাভাষার বরেণ্য লেখক হিসেবে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে স্মরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মতো সিরিয়াস লেখক_ যিনি প্রচলিত অর্থে জনপ্রিয় ধারার নন, তাকেও বাংলাদেশের সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করেছে। হুমায়ূন আহমেদ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো বিপুলভাবে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছেই সুপরিচিত। সুতরাং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রয়াত এই তিন প্রখ্যাত লেখকের মূল্যায়নের জন্য এ লেখা নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কারণে এ লেখা। সে প্রসঙ্গেই যাওয়া যাক।
কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন একটি বইমেলার আয়োজন করেছিল গত সপ্তাহে (২২ থেকে ২৬ নভেম্বর)। ওই মেলায় বাংলাদেশের বই সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা অবগত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এটা নিঃসন্দেহে আনন্দের কথা। বইমেলার মধ্যেই একটি কর্মসূচি ছিল দুই বাংলার দু'জন বরেণ্য সাহিত্যিকের স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠান। তাতে বাংলাদেশের ইতিহাস-গবেষক ও সাহিত্যিক ড. মুনতাসীর মামুনসহ একাধিক লেখক অংশ নেন। পশ্চিমবঙ্গেরও খ্যাতনামা লেখকরা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ওই স্মরণ অনুষ্ঠানের খবর পড়ে একটু খটকা লেগেছিল এই ভেবে যে, প্রায় একই সময় প্রয়াত সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে কেন স্মরণ করা হবে না! যেখানে বাংলাদেশে তার এত বিপুলসংখ্যক পাঠক, একাত্তরে যিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লিখে 'মুক্তিযুদ্ধের কলমবন্ধু' বলে খ্যাত, তার মৃত্যুসংবাদ ছাপতে গিয়ে ঢাকার গণমাধ্যম তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করল দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে, দুই বাংলার বরেণ্য সেই লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজকে কেন বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন উপেক্ষা করবে? একি অজ্ঞতা, নাকি বিশেষ হাউজের উপেক্ষার অনুসরণ?
এ ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই অনলাইনে ২৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আজকালে প্রকাশিত বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক সৈয়দ হাসমত জালালের একটি প্রতিক্রিয়া পড়লাম। প্রতিক্রিয়া পড়ে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। জবাব কী দেওয়া যায় তার সঙ্গত প্রশ্নের? সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ_ যাকে 'রাইটার্স অব দ্য রাইটার্স' বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশেরই ইংরেজি দৈনিক, যার মৃত্যুর পর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্রে বলেছেন, 'আমরা হয়তো থাকব না, কিন্তু সিরাজ বাংলা সাহিত্যে থেকে যাবে।' তার রচনার গুণগত উৎকর্ষের কথাই বলেছেন সুনীল।
শুধু আজকাল নয়, একদিন পরই সেখানকার আরেক দৈনিক সকালবেলার উপসম্পাদকীয়তেও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের এই উপেক্ষার তীব্র সমালোচনা হয়েছে। 'অলীক মানুষ'-এর স্রষ্টা সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের নিশি মৃগয়া, পিঞ্জর সোহাগিনী, আসমানতারা, নীলঘরের নটী তো এই বাংলারও অনেকের প্রিয়। তার কর্নেল সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার হৃদয় কেড়েছে। তাহলে কেন বাংলাদেশ হাইকমিশন এই কাণ্ড করল!
এমন বড়মাপের, একই সঙ্গে ক্ল্যাসিক্যাল এবং সাধারণের হৃদয়ছোঁয়া লেখক সংখ্যালঘু হয়েও পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি ছিলেন জাতপাতের ঊধর্ে্ব। যদিও ওপারের একটি বড় প্রকাশনা তাকে কম গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোন হীনমন্যতায় তাকে স্মরণ করল না কলকাতায় স্মরণসভায়? এ প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেব আমরা?
No comments