এক টাকা by মাহফুজুর রহমান মানিক
অনেক টাকা আছে, কিন্তু এক টাকা আছে কি, নোট কিংবা কয়েন? পকেট হাতড়িয়ে হয়তো অনেকে বলতে বাধ্য হবেন, না নেই। এটাই স্বাভাবিক। থাকাটা বরং অস্বাভাবিক। আমাদের অজানতেই এক টাকা হারিয়ে গেছে।
নোট বা কয়েন কোনোটাই নেই; দোকানদারের কাছে নেই; রিকশাওয়ালার কাছে নেই; লোকাল বাসের কন্ডাক্টরের কাছে নেই; নেই ফ্লেক্সিলোডের দোকানেও। এ বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক এক টাকার নোট না ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাকে না হয় এক টাকার নোট না পাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা যায়। কিন্তু কয়েন গেল কোথায়?
আসলে এক টাকার কি কোনো দাম আছে? চকোলেট আর সানসিল্ক শ্যাম্পু ছাড়া দোকানে এক টাকার কোনো পণ্য নেই। লোকাল বাসে এক টাকার ভাড়া নেই। এক খিলি পানও এখন এক টাকায় পাওয়া যায় না। ঢাকা শহরের অনেক ভিক্ষুকও হয়তো এক টাকা নিতে ইতস্তত করবেন। তবে আগে যে পানি মানুষ সেবা হিসেবে পেত এখন সেটা কোথাও কোথাও ফিল্টারের মোড়কে এক গ্গ্নাস এক টাকা করে পান করেন। সেখানেও অনেক সময় এক টাকার দুষ্প্রাপ্যতার জন্য দুই গ্গ্নাস পানি পান করতে বাধ্য হন।
এ রকম যে মুদ্রা সবার কাছে নেই, যার কোনো প্রত্যক্ষ বিনিময় নেই সেটি হারিয়ে যেতে বাধ্য। ছোটবেলায় আমরা এক পয়সা ও পাঁচ পয়সার কয়েন দেখেছি, সেটি এখন নেই। দশ পয়সার কয়েন ছিল সেটিও নেই। পঁচিশ পয়সার কয়েন তো অহরহই দেখা যেত; পঁচিশ পয়সা দিয়ে চকোলেট, বিস্কুট পাওয়া যেত। আর পঞ্চাশ পয়সা কিছুদিন আগেও পাওয়া যেত; এখন সেটা দুর্লভ বস্তু। এক টাকাও এদের কাতারে। এক টাকার কাগুজে নোটের মুদ্রণ আট বছর ধরে বন্ধ আছে, আর মার্চ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বাজারে না ছাড়ায় সেটাও হারিয়ে যাচ্ছে। এক টাকার কয়েনও পাওয়া যাচ্ছে না। ক'দিন পর হয়তো জাদুঘরে হবে এদের স্থান, দেখা যাবে পুরনো মুদ্রা প্রদর্শনীতে। এখন তো মুদ্রা প্রদর্শনী হয়। যেমন, এ বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এইচএসবিসি যৌথভাবে 'আবহমান বাংলার মুদ্রা ও কাগজি নোট' শিরোনামে পক্ষকালব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে আমরা দেখেছি।
তবে ইতিমধ্যে এক টাকার লাল-হলদে কয়েন নিয়ে দেশব্যাপী এক হুলস্থূল কাণ্ড ঘটে গেছে। সেটা ২০১০-এর শেষ দিকে। এক টাকার ওই কয়েন কোথাও একশ'-দুইশ' এমনকি পাঁচশ' টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অনেকেই তখন বড়লোক হওয়ার আশায় পয়সার ব্যবসায় নেমে পড়েন। ওই কয়েনে নাকি মূল্যবান ধাতু রয়েছে এ রকম গুজব শোনা গিয়েছিল। পরে আসলে কী হয়েছিল তা জানা নেই। সে সময় হয়তো অনেকে মাটির ব্যাংক ভেঙে কিংবা সব খুঁজে এক টাকার কয়েন বের করেছিলেন। এখনও যদি এ রকম কোনো গুজব রটে সে পয়সা হয়তো বের হবে।
মজার বিষয় হলো, এক টাকার নোট আর মুদ্রার বাইরেও আরেকটা জিনিস এক টাকার মুদ্রা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। চকোলেট। অনেক দোকানি এখন এক টাকার বদলে চকোলেট ধরিয়ে দেন। দোকানির কাছে নোট কিংবা কয়েন নেই, চকোলেট আছে। অনেকে বাধ্য হয়ে নেন, অনেকে আবার ঝগড়া বাধিয়ে দেন। আসলে দোকানির কাছে যে এক টাকার কোনো মুদ্রা নেই। ফলে এখন চকোলেটই ভরসা।
এক টাকার নোট যেমন আর পাওয়া যাবে না, তেমনি কয়েনও হয়তো হারিয়ে যাবে। এরপরও অনেকের কাছে থাকবে। অনেকের বিচিত্র শখের মধ্যে পুরনো মুদ্রা সংগ্রহ করাও একটা শখ। তারা নিশ্চয়ই সংগ্রহ করে রাখবেন। আর এক টাকা দিয়ে যে একসময় অনেক কিছু পাওয়া যেত, অন্যরা হয়তো ভবিষ্যতে সে স্মৃতিচারণ করবেন।
mahfuz.manik@gmail.com
আসলে এক টাকার কি কোনো দাম আছে? চকোলেট আর সানসিল্ক শ্যাম্পু ছাড়া দোকানে এক টাকার কোনো পণ্য নেই। লোকাল বাসে এক টাকার ভাড়া নেই। এক খিলি পানও এখন এক টাকায় পাওয়া যায় না। ঢাকা শহরের অনেক ভিক্ষুকও হয়তো এক টাকা নিতে ইতস্তত করবেন। তবে আগে যে পানি মানুষ সেবা হিসেবে পেত এখন সেটা কোথাও কোথাও ফিল্টারের মোড়কে এক গ্গ্নাস এক টাকা করে পান করেন। সেখানেও অনেক সময় এক টাকার দুষ্প্রাপ্যতার জন্য দুই গ্গ্নাস পানি পান করতে বাধ্য হন।
এ রকম যে মুদ্রা সবার কাছে নেই, যার কোনো প্রত্যক্ষ বিনিময় নেই সেটি হারিয়ে যেতে বাধ্য। ছোটবেলায় আমরা এক পয়সা ও পাঁচ পয়সার কয়েন দেখেছি, সেটি এখন নেই। দশ পয়সার কয়েন ছিল সেটিও নেই। পঁচিশ পয়সার কয়েন তো অহরহই দেখা যেত; পঁচিশ পয়সা দিয়ে চকোলেট, বিস্কুট পাওয়া যেত। আর পঞ্চাশ পয়সা কিছুদিন আগেও পাওয়া যেত; এখন সেটা দুর্লভ বস্তু। এক টাকাও এদের কাতারে। এক টাকার কাগুজে নোটের মুদ্রণ আট বছর ধরে বন্ধ আছে, আর মার্চ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এটি বাজারে না ছাড়ায় সেটাও হারিয়ে যাচ্ছে। এক টাকার কয়েনও পাওয়া যাচ্ছে না। ক'দিন পর হয়তো জাদুঘরে হবে এদের স্থান, দেখা যাবে পুরনো মুদ্রা প্রদর্শনীতে। এখন তো মুদ্রা প্রদর্শনী হয়। যেমন, এ বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এইচএসবিসি যৌথভাবে 'আবহমান বাংলার মুদ্রা ও কাগজি নোট' শিরোনামে পক্ষকালব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে আমরা দেখেছি।
তবে ইতিমধ্যে এক টাকার লাল-হলদে কয়েন নিয়ে দেশব্যাপী এক হুলস্থূল কাণ্ড ঘটে গেছে। সেটা ২০১০-এর শেষ দিকে। এক টাকার ওই কয়েন কোথাও একশ'-দুইশ' এমনকি পাঁচশ' টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অনেকেই তখন বড়লোক হওয়ার আশায় পয়সার ব্যবসায় নেমে পড়েন। ওই কয়েনে নাকি মূল্যবান ধাতু রয়েছে এ রকম গুজব শোনা গিয়েছিল। পরে আসলে কী হয়েছিল তা জানা নেই। সে সময় হয়তো অনেকে মাটির ব্যাংক ভেঙে কিংবা সব খুঁজে এক টাকার কয়েন বের করেছিলেন। এখনও যদি এ রকম কোনো গুজব রটে সে পয়সা হয়তো বের হবে।
মজার বিষয় হলো, এক টাকার নোট আর মুদ্রার বাইরেও আরেকটা জিনিস এক টাকার মুদ্রা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। চকোলেট। অনেক দোকানি এখন এক টাকার বদলে চকোলেট ধরিয়ে দেন। দোকানির কাছে নোট কিংবা কয়েন নেই, চকোলেট আছে। অনেকে বাধ্য হয়ে নেন, অনেকে আবার ঝগড়া বাধিয়ে দেন। আসলে দোকানির কাছে যে এক টাকার কোনো মুদ্রা নেই। ফলে এখন চকোলেটই ভরসা।
এক টাকার নোট যেমন আর পাওয়া যাবে না, তেমনি কয়েনও হয়তো হারিয়ে যাবে। এরপরও অনেকের কাছে থাকবে। অনেকের বিচিত্র শখের মধ্যে পুরনো মুদ্রা সংগ্রহ করাও একটা শখ। তারা নিশ্চয়ই সংগ্রহ করে রাখবেন। আর এক টাকা দিয়ে যে একসময় অনেক কিছু পাওয়া যেত, অন্যরা হয়তো ভবিষ্যতে সে স্মৃতিচারণ করবেন।
mahfuz.manik@gmail.com
No comments