পদ্মা সেতু প্রকল্প- পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন জটিলতা

দুদকের তদন্ত চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সরকারি কাজে যোগ দেওয়ায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে আবার জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের অন্যতম অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে গতকাল সারা দিন সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।


ওয়াশিংটন থেকেও খোঁজখবর নেওয়া হয়। তবে সরকারের কোনো মহল থেকেই পরিষ্কার বক্তব্য পায়নি বিশ্বব্যাংক। এ সংবাদে উদ্বিগ্ন বিশ্বব্যাংক।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যেও নানাভাবে আলোচনা চলছে। একাধিক মন্ত্রী, সরকারি দলের নেতা এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁদের বড় অংশই হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকায় কেউই সঠিক তথ্য জানতে পারেননি। তবে একজন উপদেষ্টা বিশ্বব্যাংককে আশ্বস্ত করেছেন, মসিউর এখনো ছুটিতে আছেন। তিনি ব্যক্তিগত কাজে অফিসে গিয়েছিলেন।
এক মাস ছুটি শেষে আবার কাজে যোগ দেওয়ার সংবাদটি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোসহ একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোকে মসিউর রহমান নিজেই কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
গতকাল বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের পরিচালক অ্যালেন গোল্ডস্টেইন পূর্বনির্ধারিত কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে চাঁদপুরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পরিচালক তেরেসা কো এবং শিক্ষা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), স্থানীয় সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব এ সময় সঙ্গে ছিলেন।
সূত্র জানায়, চাঁদপুরে অ্যালেন গোল্ডস্টেইন ওয়াশিংটন থেকে প্রথম মসিউর রহমানের কাজে যোগ দেওয়া-সংক্রান্ত খবরটি জানতে পারেন। বাংলাদেশে প্রকাশিত পত্রিকা থেকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় তথ্যটি জানতে পেরে অ্যালেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
সরকারি একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, চাঁদপুরে বসেই অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একাধিক উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁর একান্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে মসিউর রহমানের দাপ্তরিক কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চান বলে জানান। এই সাক্ষাৎ শেষ পর্যন্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতুতে পুনরর্থায়ন নিয়ে চার শর্তের অন্যতম ছিল দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে যাঁদের নাম এসেছে, সেই সব সরকারি কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো। এই শর্ত মেনেই সর্বশেষ মসিউর রহমান ছুটিতে গেলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে নতুন করে ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের বক্তব্য ছিল, তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত কেউ দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। আর শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না, সেটা দেখেই অর্থায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মসিউর রহমানের কাজে যোগদানকে দাতা সংস্থাটি শর্তভঙ্গ হিসেবেই দেখছে বলে বিশ্বব্যাংক সূত্র বলেছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগদলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে মসিউর রহমানের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারণ, তাঁকে আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ রকম সিদ্ধান্তের পরেও ছুটিতে থাকা এই উপদেষ্টার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস করা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা।
কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মসিউর রহমানের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তাঁরা অন্ধকারে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিয়েতনাম ও লাওস সফর শেষে দেশে ফিরে এলে তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
তবে সরকারের কারও কারও মধ্যে ভিন্ন আলোচনাও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের বাকি যে মেয়াদ আছে, সে সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে না। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সময়ে অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বিকল্প অর্থায়ন করেই কেবল এ প্রকল্প শুরু করা যেতে পারে। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করে থাকতে পারেন। তাঁর অনুমতি নিয়েই হয়তো মসিউর রহমান দাপ্তরিক কাজ শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মসিউর রহমানকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাইরে রাখা হয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যান না। কিন্তু তিনি অর্থনীতিসংক্রান্ত অন্য কোনো কাজ করতে পারবেন না, এ কথা তো বিশ্বব্যাংক বলেনি।

No comments

Powered by Blogger.