অকার্যকর রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ উন্নতি করছে
অকার্যকর রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে হয়েছে ‘চমকপ্রদ অগ্রগতি’। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট-এর আজ শনিবার প্রকাশিতব্য সংস্করণের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনের শুরুর দিকে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সত্তরের দশকের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করার বহুল আলোচিত-সমালোচিত বক্তব্যটির উল্লেখ করা হয়েছে। সব সময় বিদেশি সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা দেশগুলোর ব্যাপারে এ মন্তব্য করত কিসিঞ্জারের পররাষ্ট্র দপ্তর।
‘বাংলাদেশ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: দ্য পাথ থ্রু দ্য ফিল্ডস’ শীর্ষক ইকোনমিস্ট-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। উল্লেখ করার মতো কোনো খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদও তার নেই। স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার হয় দেশটি। ’৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময় অনেক পর্যবেক্ষকই সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না।
ইকোনমিস্ট-এর ভাষ্যমতে, পর্যবেক্ষকদের সেই সংশয় অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ছিল। কেননা, সত্তরের দশকের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খুব ভালো নয়, রাজনীতির দুর্গতি কাটছেই না। তবে এত কিছুর পরও বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গত ২০ বছরে বেশ কিছু ‘বড় অর্জন’ করেছে।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, বাংলাদেশের সর্বত্র মানুষের জীবনে সেই বড় অর্জনগুলোর দেখা মিলছে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মানুষের গড় আয়ু ৫৯ থেকে ১০ বছর বেড়ে ৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে চার বছর বেশি, যদিও ভারতীয়রা অর্থসম্পদে দ্বিগুণ ধনী। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বাংলাদেশ বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন প্রশ্নে ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায় ধরা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ খাতে জাপানের অগ্রগতিকে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা জাপানের ওই অগ্রগতির সঙ্গে তুলনীয়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি ও বার্ষিক মাথাপিছু আয় কম হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এই সফলতা এল, তার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, মূলত কয়েকটি কারণে এই ‘চমকপ্রদ সফলতা’ এসেছে। প্রথমত, পরিবার পরিকল্পনা দেশের নারীসমাজের ক্ষমতায়ন করেছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে প্রত্যেক নারী গড়ে ৬ দশমিক ৩টি সন্তান জন্ম দিতেন। ’৯৩ সালে তা কমে ৩ দশমিক ৪-এ নেমে আসে। বর্তমানে তা মাত্র ২ দশমিক ৩। এটা সেই হারের কাছাকাছি, যে পর্যায়ে পৌঁছালে দেশের জনসংখ্যা দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল থাকে।
দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ গৃহস্থালির আয়ের পতন ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণত, এটা উন্নয়নশীল দেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর তুলনায় ২০১০ সালে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন তিন গুণের বেশি বেড়েছে। চলতি বছর দেশটি বাইরে থেকে খাদ্য-সহায়তা নেওয়ার ইতি টানতে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ এখনো অপুষ্টিতে ভুগলেও তা ২০ বছর আগের তুলনায় অনেক কম। তখন এক-তৃতীয়াংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচক-সংক্রান্ত তালিকায় বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থানে রয়েছে। সময়ে সময়ে সামরিক শাসন দিয়ে বিঘ্নিত গণতান্ত্রিক শাসনকালে ‘দুই যুযুধান বেগম’ (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) কলুষিত রাজনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছেন। তবে রাজনৈতিক হানাহানির এই পটভূমিতে সামাজিক কর্মসূচির পক্ষে একটি ঐকমত্য রক্ষা করে চলেছে দেশের সুশীল সমাজ। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অধিকাংশ নিম্ন আয়ের দেশের চেয়ে এগিয়ে।
তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা কম বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এই বরাদ্দও অপচয় হতে পারত, যদি না বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) অসাধারণ ভূমিকা রাখত। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিওর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের শেষের দিকে বলা হয়েছে, এত কিছুর পরও বাংলাদেশের বেশ কিছু ‘গুরুতর সমস্যা’ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি, শিক্ষার গুণগত দুর্বলতা ও স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার উচ্চহার, দ্রুত নগরায়ণের ফলে শহরগুলোর নানা সমস্যা ইত্যাদি। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে প্রতিবেদনে ‘সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে হত্যা’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে এতে এ-ও বলা হয়েছে, সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্জন ভালো।
‘বাংলাদেশ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: দ্য পাথ থ্রু দ্য ফিল্ডস’ শীর্ষক ইকোনমিস্ট-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। উল্লেখ করার মতো কোনো খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদও তার নেই। স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের শিকার হয় দেশটি। ’৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময় অনেক পর্যবেক্ষকই সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না।
ইকোনমিস্ট-এর ভাষ্যমতে, পর্যবেক্ষকদের সেই সংশয় অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ছিল। কেননা, সত্তরের দশকের পর থেকে আজ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খুব ভালো নয়, রাজনীতির দুর্গতি কাটছেই না। তবে এত কিছুর পরও বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে গত ২০ বছরে বেশ কিছু ‘বড় অর্জন’ করেছে।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, বাংলাদেশের সর্বত্র মানুষের জীবনে সেই বড় অর্জনগুলোর দেখা মিলছে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে মানুষের গড় আয়ু ৫৯ থেকে ১০ বছর বেড়ে ৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে চার বছর বেশি, যদিও ভারতীয়রা অর্থসম্পদে দ্বিগুণ ধনী। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বাংলাদেশ বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবস্বাস্থ্যের উন্নয়ন প্রশ্নে ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় অধ্যায় ধরা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এ খাতে জাপানের অগ্রগতিকে। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা জাপানের ওই অগ্রগতির সঙ্গে তুলনীয়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি ও বার্ষিক মাথাপিছু আয় কম হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে এই সফলতা এল, তার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, মূলত কয়েকটি কারণে এই ‘চমকপ্রদ সফলতা’ এসেছে। প্রথমত, পরিবার পরিকল্পনা দেশের নারীসমাজের ক্ষমতায়ন করেছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে প্রত্যেক নারী গড়ে ৬ দশমিক ৩টি সন্তান জন্ম দিতেন। ’৯৩ সালে তা কমে ৩ দশমিক ৪-এ নেমে আসে। বর্তমানে তা মাত্র ২ দশমিক ৩। এটা সেই হারের কাছাকাছি, যে পর্যায়ে পৌঁছালে দেশের জনসংখ্যা দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল থাকে।
দ্বিতীয়ত, গ্রামীণ গৃহস্থালির আয়ের পতন ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। সাধারণত, এটা উন্নয়নশীল দেশে চরম দারিদ্র্যের হার বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর তুলনায় ২০১০ সালে বাংলাদেশে ধান উৎপাদন তিন গুণের বেশি বেড়েছে। চলতি বছর দেশটি বাইরে থেকে খাদ্য-সহায়তা নেওয়ার ইতি টানতে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার এক-ষষ্ঠাংশ এখনো অপুষ্টিতে ভুগলেও তা ২০ বছর আগের তুলনায় অনেক কম। তখন এক-তৃতীয়াংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার ছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচক-সংক্রান্ত তালিকায় বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থানে রয়েছে। সময়ে সময়ে সামরিক শাসন দিয়ে বিঘ্নিত গণতান্ত্রিক শাসনকালে ‘দুই যুযুধান বেগম’ (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) কলুষিত রাজনৈতিক যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছেন। তবে রাজনৈতিক হানাহানির এই পটভূমিতে সামাজিক কর্মসূচির পক্ষে একটি ঐকমত্য রক্ষা করে চলেছে দেশের সুশীল সমাজ। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অধিকাংশ নিম্ন আয়ের দেশের চেয়ে এগিয়ে।
তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা কম বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এই বরাদ্দও অপচয় হতে পারত, যদি না বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) অসাধারণ ভূমিকা রাখত। বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিওর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের শেষের দিকে বলা হয়েছে, এত কিছুর পরও বাংলাদেশের বেশ কিছু ‘গুরুতর সমস্যা’ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপুষ্টি, শিক্ষার গুণগত দুর্বলতা ও স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার উচ্চহার, দ্রুত নগরায়ণের ফলে শহরগুলোর নানা সমস্যা ইত্যাদি। ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে প্রতিবেদনে ‘সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে হত্যা’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে এতে এ-ও বলা হয়েছে, সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অর্জন ভালো।
No comments