নারী ভোটারদের ভূমিকা

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নারী ভোটারদের অবদান বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। তবে নারীসমাজের যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে সাধারণত প্রার্থীদের মনোযোগ থাকে, তার ধরন এবার কিছুটা বদলেছে।


আগের অনেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেখা গেছে, প্রার্থীরা জনপ্রিয় ফুটবল ও হকি ক্লাবের ভক্ত মায়েদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলে দেখা গেছে, ২০১২ সালের প্রার্থীরা ব্যস্ত ‘ওয়ালমার্ট মায়েদের’ দলে টানার চেষ্টায়। সর্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটই যে এর কারণ, তা বলাই বাহুল্য।
‘ওয়ালমার্ট মা’ বলতে মার্কিন দেশে চেইন শপ জায়ান্ট ওয়ালমার্টে নিয়মিত কেনাকাটা করতে যাওয়া মায়েদেরই বোঝায়। এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে যেসব মা যান, তাঁরা সাধারণত কষ্টার্জিত টাকা বাঁচিয়ে সস্তায় সংসারের কেনাকাটা সারার কথা ভাবেন। দীর্ঘস্থায়ী মন্দায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর নাভিশ্বাস উঠেছে। বারাক ওবামা ও মিট রমনি উভয়েই তাই নির্বাচনী প্রচারণায় ওয়ালমার্ট মায়েদের আশ্বস্ত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
ওবামা ও রমনির মনোযোগ বিশেষ করে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর নারী ভোটারদের ওপর। নারী ভোটারদের মধ্যে জরিপের ফলে কোনোটায় ওবামা, কোনোটায় বা রমনি এগিয়ে। বার্তা সংস্থা এপি পরিচালিত এক জনমত জরিপের ফলে ওবামার প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থন ১৮ শতাংশ থেকে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে! পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপের ফলে দেখা গেছে, ওবামার প্রতি নারী ভোটারদের সমর্থন ১৮ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আবার এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্ট-এর যৌথ জরিপের ফলাফলে ওবামার অবস্থান বেশ মজবুত দেখা যায়। এতে রমনির চেয়ে তিনি ১৫ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে। এনবিসি নিউজ ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং গ্যালাপ জরিপের ফলাফলে ওবামা এগিয়ে আছেন ৮ শতাংশ ব্যবধানে।
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের শিক্ষক শেরি বেবিচ জেফ বলেন, এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা মূলত নারীবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি-দাওয়ার চেয়ে অর্থনীতির ওপর জোর দেবেন। সে ক্ষেত্রে ওবামা কতটা সুবিধা পাবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। শেরি বেবিচ জেফের মতে, প্রথম বিতর্কে রমনির বিপরীতে দুর্বল অবস্থানের কারণে অনেক নারী ভোটার ওবামা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এটি নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।
অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের মোবাইল কাউন্টির মনিকা জেনসেন (৫৫) এমন একজন ভোটার। ২০০৮ সালে ওবামাকে ভোট দিয়েছেন তিনি। অর্থনীতির কারণে এবার মুখ ফিরিয়ে রমনির দিকে ঝুঁকেছেন। মনিকা বলেন, ‘অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন দেখতে চাই আমি।’
এদিকে সামাজিক বিষয়গুলোতে আবার নারী ভোটাররা ওবামাকেই সমর্থন দিচ্ছেন। নারী ভোটারদের মধ্যে চালানো এক জরিপের ফলে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, নারীর বিভিন্ন বিষয়ে ওবামাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এ বিষয়ে রমনির পক্ষে রয়েছেন ৪১ শতাংশ নারী ভোটার।
ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা লিলি ব্রায়ান ২০০৮ সালের নির্বাচনে ওবামাকে ভোট দিয়েছিলেন। এবারও তিনি ওবামাকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এর কারণে হিসেবে লিলি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে ওবামার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভপাত ঘটানোর অধিকার, নারী-পুরুষ সমবেতন ও সমকামীদের বিয়ে।
তবে ওবামা বা রমনির মধ্যে কে শেষ পর্যন্ত বেশি নারী ভোটারের সমর্থন পাবেন, এর চুলচেরা বিশ্লেষণ বা নিখুঁত পূর্বাভাস আসলে সম্ভব নয়। কারণ, পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনেক সময় শেষ মুহূর্তে ভোটারের স্থির সিদ্ধান্তও পাল্টে দেয়।
 শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

No comments

Powered by Blogger.