বমগার্টনারের সেই লাফ by রাজীব হাসান
ক্যাপসুলের সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালেন। শূন্য থেকে তাকালেন নিচের দিকে। মাইক্রোফোনে ভেসে এল তাঁর খসখসে কণ্ঠস্বর, ‘জানি পুরো বিশ্বই এখন আমাকে দেখছে। হায়, আমি যা দেখছি, সেটা যদি আপনারাও দেখতে পেতেন! আপনি যে কত ক্ষুদ্র, সেটা উপলব্ধি করার জন্য আপনাকে কখনো কখনো অনেক উঁচুতে উঠে আসা উচিত।’
ফেলিক্স বমগার্টনার সামরিক কায়দায় একটা স্যালুট ঠুকে দিলেন লাফ। সে কী লাফ! বিশেষভাবে তৈরি পোশাক পরে ৩৯ কিলোমিটার ওপর থেকে লাফিয়ে নামলেন পৃথিবীর মাটিতে! সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাসের পাতায় উঠে গেল তাঁর নাম। প্রথম মানুষ হিসেবে কোনো ধরনের বাহন ছাড়াই শব্দের গতি অতিক্রম করে গেলেন বমগার্টনার। ফ্রি ফল ডাইভিংয়ের একপর্যায়ে তাঁর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৩৪২ দশমিক ১ কিলোমিটার (৮৩৩ দশমিক ৯ মাইল)!
গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সেন্টারে ‘রেড বুল স্ট্র্যাটস’ নামের এই সফল মিশনে লেখা হলো আরও দুটো রেকর্ড। হিলিয়াম গ্যাসে ভর্তি মানুষ বহনকারী বেলুন উঠল সর্বোচ্চ উচ্চতায়—৩৯ হাজার ৪৫ মিটারে (এক লাখ ২৮ হাজার ১০০ ফুট)। এত ওপর থেকে এর আগে লাফায়নি কেউ। দীর্ঘতম লাফের রেকর্ডও তাই হয়ে গেল তাঁর। আরেকটি রেকর্ড অবশ্য করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। দীর্ঘতম ফ্রি ফল (প্যারাস্যুট বন্ধ থাকা অবস্থায় লাফ)। তাঁর ফ্রি ফলের স্থায়িত্ব ছিল চার মিনিট ১৯ সেকেন্ড। মাত্র ১৭ সেকেন্ডের জন্য ১৯৬০ সালে দেওয়া গুরু জোসেফ কিটিংগারের ফ্রি ফলের রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি বমগার্টনার। ওহ্, আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে এই দিন। বমগার্টনারের লাফ সরাসরি ইউটিউবে দেখেছে ৮০ লাখ মানুষ। একই সঙ্গে সরাসরি (লাইভ স্ট্রিমিং) কোনো ঘটনা এত মানুষ এর আগে কখনোই ইউটিউবে দেখেনি।
লাফানো ব্যাপারটি ৪৩ বছর বয়সী এই অস্ট্রিয়ান ডাইভারের রক্তেই। অস্ট্রীয় সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ই তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ প্যারাস্যুটিস্ট। এর আগে তিনি ১৯৯৯ সালে কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টাওয়ারের ওপর থেকে লাফান। সবচেয়ে উঁচু ভবন থেকে লাফানোর বিশ্বরেকর্ড এটি। সাঁতরে তো অনেকেই পার হয়েছে, ২০০৩ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ইংলিশ চ্যানেল পার হন স্কাই ডাইভ দিয়ে। বিশেষভাবে তৈরি কার্বন ফাইবারের ডানা ব্যবহার করে আকাশে উড়ে উড়ে!
২০১০ সালের জানুয়ারিতে বমগার্টনার জানান, তিনি লাফ দিতে চান আকাশের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে, যে উচ্চতায় এর আগে কেউ কখনো লাফায়নি। তাঁর এই স্বপ্ন পূরণে আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে রেড বুল। ‘রেড বুল’-এর সঙ্গে স্ট্র্যাটসফিয়ারের (ভূপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী শূন্যস্থান) ‘স্ট্র্যাটস’ নিয়ে নামকরণ করা হয় এই মিশনের। এ বছর মার্চ ও জুলাইয়ে দুটো প্রস্তুতিমূলক লাফ দেন বমগার্টনার। প্রথমবার সফলভাবে লাফিয়েছেন ২১ হাজার ৮১৮ মিটার। দ্বিতীয়বার ২৯ হাজার ৪৬০ মিটার। দ্বিতীয় লাফের ফ্রি ফলের সময় তাঁর সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৮৬৩ কিলোমিটার।
সাধারণত স্কাই ডাইভারদের ফ্রি ফলের গতি ৩২০ কিলোমিটারের মতো হয়ে থাকে। কিন্তু যত ওপর থেকে লাফ দেওয়া হবে, ততই এই গতি বাড়বে। কারণ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব ওপরের দিকে ততই কম। ফলে বায়ুর ঘর্ষণজনিত গতিরোধও হবে কম।
পুরো মিশন দেখভালের দায়িত্ব নিলেন কিটিংগার নিজে। এর আগে ৩১ হাজার ৩০০ মিটার থেকে লাফিয়েছিলেন কিটিংগার, ১৯৬০ সালে। দীর্ঘতম ফ্রি ফলের রেকর্ডটিও তাঁর। গুরুর পদধূলি নিয়ে শিষ্য নামলেন গুরুকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশনে। বেলুনে চড়ে আকাশে উড়াল দিলেন বমগার্টনার।
আড়াই ঘণ্টার মতো লাগল কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে। সবকিছু পরীক্ষা করে লাফানোর জন্য প্রস্তুতি নিলেন। মাটিতে উদ্বেগের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা কিটিংগারের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘ক্যামেরাগুলো চালু করো। আমাদের গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল তোমাকে রক্ষা করবেন।’ স্যালুট ঠুকে বমগার্টনার দিলেন লাফ। ৪২ সেকেন্ড পর এল সেই মুহূর্তটি। শব্দের গতিসীমা অতিক্রম করে গেল রক্তমাংসের মানুষ, কোনো বাহন ছাড়াই! প্রথম মিনিটের শেষার্ধে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।
ওই প্রচণ্ড গতিতে যেটা ভয়াবহ হতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় মিনিটের ২৩তম সেকেন্ডে ভারসাম্য ফিরে পান বমগার্টনার।
তৃতীয় মিনিটের ৪০তম সেকেন্ডে রেডিও মিশন কন্ট্রোলকে জানান, তাঁর মাথায় বসানো ভাইজর বা হেলমেটটি ঝাপসা হয়ে গেছে। হয়তো এ কারণেই চতুর্থ মিনিটের ১৬ সেকেন্ডে প্যারাসুট খুলে দেন। ফ্রি ফলের স্থায়িত্ব হয় চার মিনিট ১৯ সেকেন্ড। ক্যাপসুল থেকে লাফানোর ১০ মিনিটের মাথায় নিউ মেক্সিকোর মাটি স্পর্শ করেন বমগার্টনার।
সূত্র: দি গার্ডিয়ান, দি অস্ট্রেলিয়ান ও সিএনএন
গত ১৪ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সেন্টারে ‘রেড বুল স্ট্র্যাটস’ নামের এই সফল মিশনে লেখা হলো আরও দুটো রেকর্ড। হিলিয়াম গ্যাসে ভর্তি মানুষ বহনকারী বেলুন উঠল সর্বোচ্চ উচ্চতায়—৩৯ হাজার ৪৫ মিটারে (এক লাখ ২৮ হাজার ১০০ ফুট)। এত ওপর থেকে এর আগে লাফায়নি কেউ। দীর্ঘতম লাফের রেকর্ডও তাই হয়ে গেল তাঁর। আরেকটি রেকর্ড অবশ্য করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। দীর্ঘতম ফ্রি ফল (প্যারাস্যুট বন্ধ থাকা অবস্থায় লাফ)। তাঁর ফ্রি ফলের স্থায়িত্ব ছিল চার মিনিট ১৯ সেকেন্ড। মাত্র ১৭ সেকেন্ডের জন্য ১৯৬০ সালে দেওয়া গুরু জোসেফ কিটিংগারের ফ্রি ফলের রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি বমগার্টনার। ওহ্, আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে এই দিন। বমগার্টনারের লাফ সরাসরি ইউটিউবে দেখেছে ৮০ লাখ মানুষ। একই সঙ্গে সরাসরি (লাইভ স্ট্রিমিং) কোনো ঘটনা এত মানুষ এর আগে কখনোই ইউটিউবে দেখেনি।
লাফানো ব্যাপারটি ৪৩ বছর বয়সী এই অস্ট্রিয়ান ডাইভারের রক্তেই। অস্ট্রীয় সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ই তিনি ছিলেন বিশেষজ্ঞ প্যারাস্যুটিস্ট। এর আগে তিনি ১৯৯৯ সালে কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টাওয়ারের ওপর থেকে লাফান। সবচেয়ে উঁচু ভবন থেকে লাফানোর বিশ্বরেকর্ড এটি। সাঁতরে তো অনেকেই পার হয়েছে, ২০০৩ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ইংলিশ চ্যানেল পার হন স্কাই ডাইভ দিয়ে। বিশেষভাবে তৈরি কার্বন ফাইবারের ডানা ব্যবহার করে আকাশে উড়ে উড়ে!
২০১০ সালের জানুয়ারিতে বমগার্টনার জানান, তিনি লাফ দিতে চান আকাশের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে, যে উচ্চতায় এর আগে কেউ কখনো লাফায়নি। তাঁর এই স্বপ্ন পূরণে আর্থিক সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে রেড বুল। ‘রেড বুল’-এর সঙ্গে স্ট্র্যাটসফিয়ারের (ভূপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী শূন্যস্থান) ‘স্ট্র্যাটস’ নিয়ে নামকরণ করা হয় এই মিশনের। এ বছর মার্চ ও জুলাইয়ে দুটো প্রস্তুতিমূলক লাফ দেন বমগার্টনার। প্রথমবার সফলভাবে লাফিয়েছেন ২১ হাজার ৮১৮ মিটার। দ্বিতীয়বার ২৯ হাজার ৪৬০ মিটার। দ্বিতীয় লাফের ফ্রি ফলের সময় তাঁর সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৮৬৩ কিলোমিটার।
সাধারণত স্কাই ডাইভারদের ফ্রি ফলের গতি ৩২০ কিলোমিটারের মতো হয়ে থাকে। কিন্তু যত ওপর থেকে লাফ দেওয়া হবে, ততই এই গতি বাড়বে। কারণ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব ওপরের দিকে ততই কম। ফলে বায়ুর ঘর্ষণজনিত গতিরোধও হবে কম।
পুরো মিশন দেখভালের দায়িত্ব নিলেন কিটিংগার নিজে। এর আগে ৩১ হাজার ৩০০ মিটার থেকে লাফিয়েছিলেন কিটিংগার, ১৯৬০ সালে। দীর্ঘতম ফ্রি ফলের রেকর্ডটিও তাঁর। গুরুর পদধূলি নিয়ে শিষ্য নামলেন গুরুকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশনে। বেলুনে চড়ে আকাশে উড়াল দিলেন বমগার্টনার।
আড়াই ঘণ্টার মতো লাগল কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে। সবকিছু পরীক্ষা করে লাফানোর জন্য প্রস্তুতি নিলেন। মাটিতে উদ্বেগের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকা কিটিংগারের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘ক্যামেরাগুলো চালু করো। আমাদের গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল তোমাকে রক্ষা করবেন।’ স্যালুট ঠুকে বমগার্টনার দিলেন লাফ। ৪২ সেকেন্ড পর এল সেই মুহূর্তটি। শব্দের গতিসীমা অতিক্রম করে গেল রক্তমাংসের মানুষ, কোনো বাহন ছাড়াই! প্রথম মিনিটের শেষার্ধে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন।
ওই প্রচণ্ড গতিতে যেটা ভয়াবহ হতে পারত। কিন্তু দ্বিতীয় মিনিটের ২৩তম সেকেন্ডে ভারসাম্য ফিরে পান বমগার্টনার।
তৃতীয় মিনিটের ৪০তম সেকেন্ডে রেডিও মিশন কন্ট্রোলকে জানান, তাঁর মাথায় বসানো ভাইজর বা হেলমেটটি ঝাপসা হয়ে গেছে। হয়তো এ কারণেই চতুর্থ মিনিটের ১৬ সেকেন্ডে প্যারাসুট খুলে দেন। ফ্রি ফলের স্থায়িত্ব হয় চার মিনিট ১৯ সেকেন্ড। ক্যাপসুল থেকে লাফানোর ১০ মিনিটের মাথায় নিউ মেক্সিকোর মাটি স্পর্শ করেন বমগার্টনার।
সূত্র: দি গার্ডিয়ান, দি অস্ট্রেলিয়ান ও সিএনএন
No comments