বেসরকারি কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ-সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে

অবশেষে বোধোদয়। ব্যবসায়ী ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগের ঢালাও সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। ডেসটিনিতে প্রশাসক নিয়োগ করা নিয়ে কম্পানি আইন সংশোধনের চিন্তা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।


কম্পানি আইনের ২০২-ক ধারা যোগ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীদের সব সংগঠন। পরে সরকার পক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আইন বিশেষজ্ঞদের বৈঠকেও এ আইনের বিরোধিতা করা হয়। ওই বৈঠক পর্যালোচনা করেই সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে আইন সংশোধন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের জন্য কম্পানি আইন পরিবর্তনের যে সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল, তাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। কারণে-অকারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের উদ্যোগ হিসেবেই বিষয়টিকে বিবেচনা করা হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও আইনজীবীদের বৈঠকের পর সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আপাতত স্বস্তি পাবেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য আইনজীবীরা কম্পানি আইন পরিবর্তনের বিরোধিতা করে বলেছেন, বিদ্যমান আইনেই প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে প্রশাসক নিয়োগ করা সম্ভব।
সরকারের এ সিদ্ধান্তে আপাতত একটি জটিলতা থেকে উদ্ধার পাওয়া গেলেও ডেসটিনিকে ঘিরে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা সহজে মিটছে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষ জড়িত। অনেকেই সেখানে চাকরি করেন, আবার অনেকে ডেসটিনিতে বিনিয়োগ করেছেন। চাকরি হারালে যেমন বিপন্ন হবে অনেক পরিবার, তেমনি মূলধন খোয়া গেলেও অনেকে নিঃস্ব হবেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিরাট অংশ আগেই সর্বস্ব খুইয়েছেন। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্যই ডেসটিনিতে প্রশাসক নিয়োগ জরুরি।
ব্যবসায়ীরা যখন বিনিয়োগ করেন, তখন তাঁরা তাঁদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা যেমন চান, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তার দিকটিও দেখতে হবে। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে আইনের সুযোগ নিয়ে নতুন করে কোনো জটিলতার সৃষ্টি করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা আইনানুগ হলে সেখানে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। তাতে অর্থনীতির গতি বাধাগ্রস্ত হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে আইন সংশোধন করতে গিয়ে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সরকারের পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অবশ্যই ধন্যবাদার্হ। তবে ডেসটিনির ব্যাপারে একটি বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। সেই বিকল্পের সন্ধানে প্রয়োজনে আবারও ব্যবসায়ী ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.