স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর হতে পারবেন কি?- কারাগারে ‘পুকুরচুরি’

সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়ম নতুন নয়। কিন্তু দেশের ৭৬টি কারাগারের ৭০ হাজার কারাবন্দীর খাদ্যসামগ্রী কেনা ও সরবরাহ নিয়ে যা ঘটে চলেছে, তা সোজা কথায় জোচ্চুরি ছাড়া কিছু নয়।


গত বছর কারাগারের জন্য কেনা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার পণ্য। এ বছরের বাজেট ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একজন বন্দীর জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৫৩ টাকা ২৭ পয়সা। এর কতটা বন্দীরা পান আর কতটা নানা কারসাজিতে কুচক্রী মহল হাতিয়ে নেয়, সেটাই বড় প্রশ্ন।
গতকাল প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কতিপয় ব্যবসায়ী ও সরবরাহ-প্রতিষ্ঠান অবিশ্বাস্য কম দামে খাদ্য কেনেন, আরও অবিশ্বাস্য কম দামে সেই খাদ্য কারাগারগুলোতে সরবরাহ করেন। বাজারে এক কেজি মসুর ডালের দাম ১২০-১৩০ টাকা হলেও ঠিকাদারেরা কেনেন নাকি ৫৫-৫৬ টাকায়। যে মাছের কেজি বাজারে ২২০ টাকা, সেই মাছ তাঁরা সরবরাহ করেন অর্ধেক দামে। পুকুর না কেটে পুকুর ভরাট করে দুই দফায় টাকা মেরে দেওয়ার কাহিনি সবার জানা। এখানেও সেই পুকুরচুরির লক্ষণ স্পষ্ট। কারাবন্দীদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্যপণ্য বরাদ্দ থাকে, সরবরাহ করা হয় তার চেয়ে অনেক কম। সে ক্ষেত্রে বাজারদরের অর্ধেক দামে দিতে অসুবিধা কী? আর পোস্তগোলা থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে ১০ টনি ট্রাকের এক টাকা ভাড়ার কথা শুনে কারা প্রশাসনের মহাপরিদর্শক বিস্ময় প্রকাশ করলেও অর্ধেক বা তার চেয়েও কম দামে পণ্য কেনায় দোষ খুঁজে পান না।
যে পণ্য কারাগারে পাঠানোই হয় না, সেই পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া এক টাকাও যা, ১০০ টাকাও তা। আসলে কারা প্রশাসনের যোগসাজশে ঠিকাদারদের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই এই কাণ্ড করে আসছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হলেও প্রতিকার নেই। কেননা, যাঁরা প্রতিকার করবেন তাঁদের কেউ কেউ এই ‘খাদ্য কেলেঙ্কারির’ সঙ্গে জড়িত।
কারাগারের খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিয়ে এই পুকুরচুরি বন্ধ করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। কঠোর মনোভাবের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারবেন কি?

No comments

Powered by Blogger.