পবিত্র কোরআনের আলো-ফিরাউনের মরদেহ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য কোরআনে সন্নিবেশিত আছে

৯১. আ-লআ-না ওয়াক্বাদ আ'ছ্বাইতা ক্বাবলু ওয়া কুনতা মিনাল মুফ্ছিদীন। ৯২. ফালইয়াওমা নুনাজ্জীকা বিবাদানিকা লিতাকূনা লিমান খাল্ফাকা আ-ইয়াহ্; ওয়া ইন্না কাছীরাম্ মিনা ন্না-ছি আ'ন আ-ইয়া-তিনা-লাগা-ফিলূন। ৯৩. ওয়া লাক্বাদ বাও্ওয়া'না-বাণী ইসরা-ঈলা মুবাও্ওয়াআ ছি্বদ্কি্বন ওয়া রাযাক্বনা-হুম্ মিনাত্ ত্বায়্যিবা-তি; ফামা খ্তালাফূ হাত্তা-জা-আহুমুল ই'লম্; ইন্না রাব্বাকা ইয়াক্ব্দ্বী বাইনাহুম ইয়াওমাল কি্বইয়া-মাতি ফীমা-কা-নূ ফীহি ইয়াখ্তালিফূন।


[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯১-৯৩]
অনুবাদ
৯১. (এর উত্তরে তখন আল্লাহ তায়ালা তিরস্কার করেছিলেন) এখন ইমান আনছ? অথচ এর আগে (সারা জীবন) অবাধ্যতা করেছ এবং তুমিই তো ছিলে শান্তি বিনষ্টকারী।
৯২. সুতরাং আজ আমি তোমার মরদেহটি উদ্ধার করে সংরক্ষণের সুযোগ দেব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীকালের মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। (স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত) আমার নিদর্শন সম্পর্কে বহু লোক গাফেল হয়ে থাকে।
৯৩. আমি বনি ইসরাইলকে বসবাসের জন্য ভালো আবাসভূমির ব্যবস্থা করেছিলাম এবং তাদের জন্য উত্তম রিজিক লাভেরও ব্যবস্থা করলাম। অতঃপর তারা (সত্য দ্বীন সম্পর্কে) ততক্ষণ পর্যন্ত মতভেদ সৃষ্টি করেনি, যতক্ষণ না তাদের কাছে (কোরআনের) জ্ঞান এসে পৌঁছেছে। তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করত, কিয়ামতের দিন আপনার প্রতিপালক তার মীমাংসা করে দেবেন।

ব্যাখ্যা
৯১ নম্বর আয়াতটিতে আগের আয়াতে বর্ণিত ফিরাউনের মুমূর্ষু অবস্থায় উচ্চারিত বিবৃতির জবাব দেওয়া হয়েছে। জবাবে তিরস্কার করে বলা হয়েছে, সারা জীবন অবাধ্যতা করে, মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার করে এবং অশান্তি সৃষ্টি করে মুমূর্ষু অবস্থায় সত্য স্বীকার করার কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ যদিও তওবা কবুল করেন, তবু তওবার দরজা তখন বন্ধ। আর অত্যাচারীর তওবার দরজা যে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায়, সে ইঙ্গিত মজলুমের বদদোয়া কবুলের মধ্য দিয়েই দেওয়া হয়েছে। ফিরাউন অত্যাচারী নরপতিদের এক নিদর্শন।
৯২ নম্বর আয়াতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ তাৎপর্যের বিষয়টি দীর্ঘকাল যাবৎ সম্মানিত তাফসিরকারদের কাছে অজ্ঞাত ছিল বলেই মনে হয়। এখানে ফিরাউনের মরদেহটি পরবর্তী মানুষের জন্য নিদর্শন হিসেবে টিকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে। তার মরদেহ সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল- এটা তো অতি সাধারণ একটা তথ্য। তবে তা যে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, এর ইঙ্গিত এখানে স্পষ্টভাবেই দেওয়া হয়েছে। আধুনিককালে পিরামিডের ভেতরে ফারাও সম্রাটদের মমি করা মরদেহ সযত্নে সংরক্ষিত অবস্থায় আবিষ্কৃত হয়েছে। আধুনিক ঐতিহাসিকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মুসা (আ.)-এর আমলে মিসরের যে ফিরাউন বা সম্রাট ছিল তার নাম ছিল মিনিফতাহ্। তার লাশটি সঠিকভাবে মমি করা আছে এবং বর্তমানে কায়রোর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই আয়াতটি কোরআন মজিদের শ্রেষ্ঠ মোজেজাও বটে- যা আধুনিককালের মানুষদের জন্য প্রযোজ্য। কোরআন মজিদ যখন নাজিল হয়েছিল, তখন কারো জানা ছিল না যে ফিরাউনের মরদেহ তখনো সংরক্ষিত আছে। পিরামিডের ভেতরে ফিরাউনের লাশ আবিষ্কৃত হয় ২০ শতাব্দীর শেষের দিকে। আশ্চর্যের বিষয় যে মরদেহ তখনো অবিকৃত ও অক্ষত। এটা মানুষের জন্য এক বিরাট নিদর্শন হয়ে আছে।
৯৩ নম্বর আয়াতে 'যতক্ষণ না তাদের কাছে জ্ঞান এসে পৌঁছেছে' বলতে কোরআন এবং ইসরাইল বংশবহির্ভূত নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তকেই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর বাণী সম্পর্কে এর আগে কোনো মতভেদ তারা করেনি। মহানবীর আবির্ভাবের পরই তারা আল্লাহর বাণী নিয়ে বিতর্ক শুরু করে দেয় তাদের জাত্যভিমান ও হীনম্মন্যতার কারণে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.