সদরে অন্দরে-এমপি কেন 'মি. টু পার্সেন্ট' হবেন? by মোস্তফা হোসেইন
'আবদারেরও একটা সীমা আছে!' এমন মন্তব্যই করলেন ঢাকার একটি নামি স্কুলের একজন শিক্ষক। আবদার হলো শিক্ষায়তনে ২ শতাংশ ভর্তি কোটা চান সংসদ সদস্যরা। তাঁদের চাওয়া অন্তর্ভুক্ত করে যথারীতি ভর্তির নীতিমালার প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে, আর তা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আসনের ২ শতাংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে সংসদ সদস্যদের মনোনীত শিক্ষার্থীদের জন্য। আগামীকাল রবিবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। সরকার যদি এমপিদের এই আবদার মেনে নেয়, তাহলে দুর্নীতিকে আইনানুগ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হবে। আর এতে মেধাবীদের বঞ্চিত হওয়ার মাত্রা আরেক ধাপ বেড়ে যাবে। এমপিরা জনপ্রতিনিধি। অবশ্যই তাঁরা সম্মানীয়। তাই বলে তাঁদের ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা দিতে হবে? শিক্ষা ও মেধাই শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে একমাত্র যোগ্যতা বলে প্রযোজ্য, অন্য কিছু নয়। শিক্ষার্থীর ভর্তির যোগ্যতা যদি বাবা, কাকা কিংবা মামার এমপি হওয়া বোঝায়, তাহলে শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা অনুমেয়। এমন হলে সব মানুষই রাজনৈতিক হোমরাচোমরা হওয়ার কথা ভাববে। মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতা মার খাবে। শিক্ষাচর্চার প্রতি আকর্ষণ থাকবে না। প্রশ্ন আসে, দেশের পরিচালকরা কি সেই অহিতকর একটি সিদ্ধান্তই গ্রহণ করবেন?
এমপিদের এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলতে পারেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের জন্য যদি কোটা থাকে, তাহলে এমপিদের জন্য থাকবে না কেন? এমপিরা কি মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নন? কর্মচারী কোটা থাকবে বলে তাঁদেরও কোটা দিতে হবে- এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আবার সরকারি কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী হওয়ার সুবাদে তাঁদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে এটাও বিবেচনার মধ্যে আসতে পারে না। প্রচলিত নিয়মের কারণে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এমনিতেই ক্ষোভ রয়েছে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মীরা যেমন সরকারের তেমনি অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মীরাও সরকারের। একই সরকারের কর্মী হওয়ায় তাঁরা বিশেষ সুবিধা পাবেন, অন্যরা পাবেন না- এটা তাঁরা সহজে মেনে নেননি। যে কারণে প্রচলিত নীতিমালাটি আগেই অস্বাভাবিক বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাই এমপিরা যদি বলতেন, এ ধরনের কোটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত; সেটাই হতো অধিকতর শ্রেয়। সেটা না করে তাঁরাও সুবিধাবাদীদের কাতারে নিজেদের নাম লেখাতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। ভাবতে অবাক লাগে, এমন সুবিধাবাদীর সংখ্যাও বিশাল। গত বছর ভর্তির নীতিমালায় ৬ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অধিদপ্তর ইত্যাদির জন্য। এমনি আরো কিছু কোটা মিলিয়ে আসনের ১১ শতাংশই চলে যায় কোটার আওতায়। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এই ১১ শতাংশ আসন থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। চলমান কোটা সুবিধার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধী কোটা ছাড়া বাকি সবই বাতিলযোগ্য ও নতুন নীতিমালায় তা বাতিল করা উচিত। দুটি কোটা বিশেষ বিবেচনায় আনার পক্ষে যুক্তি আছে। এর একটি হচ্ছে জাতীয়ভাবে কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রতীক, আরেকটি একান্তই মানবিক।
এত দিন পর্যন্ত মন্ত্রী ও এমপিদের অনেকের নামেই বদনাম ছিল, তাঁরা আর্থিক দুর্নীতি থেকে শুরু করে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। টিআইবি তো প্রায় সব এমপির বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও নিয়মবহির্ভূত কাজের তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকার এর প্রতিবাদ করলেও সংখ্যার হেরফের করা ছাড়া দুর্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এভাবে আইন করে অস্বাভাবিক সুবিধা ভোগের আবদার দেশের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বোধ করি যেকোনো সচেতন মানুষই উপলব্ধি করতে পারেন।
মন্ত্রী-এমপিদের কোটা দেওয়ার কারণে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ শিক্ষার পথ প্রশস্ত হবে। শুধু তাই নয়, যেসব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ থাকবে। ক্লাসের অন্য ১০ জন শিক্ষার্থী যেখানে নিজ মেধা বলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, সেখানে অমেধাবী হিসেবে নিশ্চয়ই সে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে না।
সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সেখানে পক্ষপাতিত্ব থাকবে না কিংবা যোগ্যতা যাচাইয়ে শিক্ষকরা অন্ধের ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু এমপিদের এই আবদারের পর সংগত কারণেই প্রশ্ন আসতে পারে, শিক্ষার মান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কি দেশের আইনপ্রণেতারাও ভূমিকা রাখবেন? কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না থাকলে তথা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষাদানে যথাযথ ভূমিকা না রাখতে পারে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা আছে, এমনকি খুব খারাপ করলে সেই প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের সুপারিশ আছে। সেখানে শিক্ষার মান হ্রাসের জন্য যথেষ্ট হিসেবে চিহ্নিত এমন কোটা ব্যবস্থার জন্য তাঁরা দায়ী হবেন না কেন?
মন্ত্রী-এমপিরা বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা কর রেয়াত পান। তাঁদের নিকটজনদের অনেকেই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়ে টেন্ডারবাজি-দখলবাজি করে; সামাজিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় অহিতকর অনেক কাজের অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু শিক্ষায়তনে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমপিরা এ সুবিধা পেলে রাজনীতির প্রতিও মেধাবীদের অশ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। পরবর্তীকালে সৃজনশীলতার পরিবর্তে সুযোগসন্ধানী সৃষ্টির প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। সরকার এ ধরনের বিতর্কিত ও ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে বলে আমরা আশা করি।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পোষ্যদের যে কোটা আছে তাও সমর্থন করা যায় না। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণও রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের পোষ্য কিংবা সন্তানের জন্য কোনো ভর্তি কোটা নেই। শুধু তাই নয়, একজন উপাচার্য তাঁর নিজের সন্তানকে ভর্তি করানোর পারিবারিক অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে- এমন তথ্যও প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ দেশেই যেখানে ভালো কাজের অসংখ্য উদাহরণ আছে, সেখানে আমরা খারাপ কাজের দিকে কেন ঝুঁকে পড়ব? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য প্রমাণ করেছেন, শিক্ষায়তন কোনো বিস্কুট উৎপাদন কারখানা নয়, যা শ্রমিকদের দেওয়া হবে চেখে দেখার জন্য। এখানে শিক্ষার গুণ যাচাই করা হয় শিক্ষার্থীর মেধা পরীক্ষার মাধ্যমে। এমন রীতি হওয়া উচিত বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে।
মনে রাখা প্রয়োজন, ক্ষমতার দাপটে টেন্ডার ছিনতাই করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থহানির চেয়েও শত গুণ বেশি ক্ষতিকর হবে এ ধরনের কোটা ব্যবস্থা। কারণ টেন্ডার ছিনতাই করে একটি রাস্তার উন্নয়নকাজ কিংবা একটি ভবনের কাজ কিছুটা ব্যাহত করা সম্ভব; কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করে অমেধাবীকে শিক্ষায়তনে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে একটা জাতির নীতিবোধই জলাঞ্জলি দেওয়া হবে। শিক্ষায়তনে বৈষম্যমূলক আচরণ তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হবে এই আবদার রক্ষা করা হলে। সব নাগরিকের সমান সুবিধা প্রদানের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত করার পদক্ষেপ থেকে সরকার বিরত থাকবে- এটা সংগত কারণেই প্রত্যাশিত।
লেখক : সাংবাদিক
mhussain_71@yahoo.com
এমপিদের এই দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে তাঁরা বলতে পারেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের জন্য যদি কোটা থাকে, তাহলে এমপিদের জন্য থাকবে না কেন? এমপিরা কি মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ নন? কর্মচারী কোটা থাকবে বলে তাঁদেরও কোটা দিতে হবে- এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আবার সরকারি কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী হওয়ার সুবাদে তাঁদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে এটাও বিবেচনার মধ্যে আসতে পারে না। প্রচলিত নিয়মের কারণে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এমনিতেই ক্ষোভ রয়েছে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মীরা যেমন সরকারের তেমনি অন্য সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মীরাও সরকারের। একই সরকারের কর্মী হওয়ায় তাঁরা বিশেষ সুবিধা পাবেন, অন্যরা পাবেন না- এটা তাঁরা সহজে মেনে নেননি। যে কারণে প্রচলিত নীতিমালাটি আগেই অস্বাভাবিক বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাই এমপিরা যদি বলতেন, এ ধরনের কোটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত; সেটাই হতো অধিকতর শ্রেয়। সেটা না করে তাঁরাও সুবিধাবাদীদের কাতারে নিজেদের নাম লেখাতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। ভাবতে অবাক লাগে, এমন সুবিধাবাদীর সংখ্যাও বিশাল। গত বছর ভর্তির নীতিমালায় ৬ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে মন্ত্রণালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অধিদপ্তর ইত্যাদির জন্য। এমনি আরো কিছু কোটা মিলিয়ে আসনের ১১ শতাংশই চলে যায় কোটার আওতায়। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এই ১১ শতাংশ আসন থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। চলমান কোটা সুবিধার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রতিবন্ধী কোটা ছাড়া বাকি সবই বাতিলযোগ্য ও নতুন নীতিমালায় তা বাতিল করা উচিত। দুটি কোটা বিশেষ বিবেচনায় আনার পক্ষে যুক্তি আছে। এর একটি হচ্ছে জাতীয়ভাবে কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রতীক, আরেকটি একান্তই মানবিক।
এত দিন পর্যন্ত মন্ত্রী ও এমপিদের অনেকের নামেই বদনাম ছিল, তাঁরা আর্থিক দুর্নীতি থেকে শুরু করে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। টিআইবি তো প্রায় সব এমপির বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও নিয়মবহির্ভূত কাজের তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকার এর প্রতিবাদ করলেও সংখ্যার হেরফের করা ছাড়া দুর্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কিন্তু এভাবে আইন করে অস্বাভাবিক সুবিধা ভোগের আবদার দেশের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বোধ করি যেকোনো সচেতন মানুষই উপলব্ধি করতে পারেন।
মন্ত্রী-এমপিদের কোটা দেওয়ার কারণে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ শিক্ষার পথ প্রশস্ত হবে। শুধু তাই নয়, যেসব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ থাকবে। ক্লাসের অন্য ১০ জন শিক্ষার্থী যেখানে নিজ মেধা বলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবে, সেখানে অমেধাবী হিসেবে নিশ্চয়ই সে অন্যদের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে না।
সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সেখানে পক্ষপাতিত্ব থাকবে না কিংবা যোগ্যতা যাচাইয়ে শিক্ষকরা অন্ধের ভূমিকা পালন করবেন। কিন্তু এমপিদের এই আবদারের পর সংগত কারণেই প্রশ্ন আসতে পারে, শিক্ষার মান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কি দেশের আইনপ্রণেতারাও ভূমিকা রাখবেন? কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না থাকলে তথা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষাদানে যথাযথ ভূমিকা না রাখতে পারে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা আছে, এমনকি খুব খারাপ করলে সেই প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের সুপারিশ আছে। সেখানে শিক্ষার মান হ্রাসের জন্য যথেষ্ট হিসেবে চিহ্নিত এমন কোটা ব্যবস্থার জন্য তাঁরা দায়ী হবেন না কেন?
মন্ত্রী-এমপিরা বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা কর রেয়াত পান। তাঁদের নিকটজনদের অনেকেই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজির ওপর হাত দিয়ে টেন্ডারবাজি-দখলবাজি করে; সামাজিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় অহিতকর অনেক কাজের অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু শিক্ষায়তনে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমপিরা এ সুবিধা পেলে রাজনীতির প্রতিও মেধাবীদের অশ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। পরবর্তীকালে সৃজনশীলতার পরিবর্তে সুযোগসন্ধানী সৃষ্টির প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। সরকার এ ধরনের বিতর্কিত ও ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে বলে আমরা আশা করি।
উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পোষ্যদের যে কোটা আছে তাও সমর্থন করা যায় না। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণও রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের পোষ্য কিংবা সন্তানের জন্য কোনো ভর্তি কোটা নেই। শুধু তাই নয়, একজন উপাচার্য তাঁর নিজের সন্তানকে ভর্তি করানোর পারিবারিক অনুরোধও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে- এমন তথ্যও প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ দেশেই যেখানে ভালো কাজের অসংখ্য উদাহরণ আছে, সেখানে আমরা খারাপ কাজের দিকে কেন ঝুঁকে পড়ব? বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য প্রমাণ করেছেন, শিক্ষায়তন কোনো বিস্কুট উৎপাদন কারখানা নয়, যা শ্রমিকদের দেওয়া হবে চেখে দেখার জন্য। এখানে শিক্ষার গুণ যাচাই করা হয় শিক্ষার্থীর মেধা পরীক্ষার মাধ্যমে। এমন রীতি হওয়া উচিত বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে।
মনে রাখা প্রয়োজন, ক্ষমতার দাপটে টেন্ডার ছিনতাই করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থহানির চেয়েও শত গুণ বেশি ক্ষতিকর হবে এ ধরনের কোটা ব্যবস্থা। কারণ টেন্ডার ছিনতাই করে একটি রাস্তার উন্নয়নকাজ কিংবা একটি ভবনের কাজ কিছুটা ব্যাহত করা সম্ভব; কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত করে অমেধাবীকে শিক্ষায়তনে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে একটা জাতির নীতিবোধই জলাঞ্জলি দেওয়া হবে। শিক্ষায়তনে বৈষম্যমূলক আচরণ তৈরির ক্ষেত্র তৈরি হবে এই আবদার রক্ষা করা হলে। সব নাগরিকের সমান সুবিধা প্রদানের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত করার পদক্ষেপ থেকে সরকার বিরত থাকবে- এটা সংগত কারণেই প্রত্যাশিত।
লেখক : সাংবাদিক
mhussain_71@yahoo.com
No comments