শহরে একটা পুরস্কার ঘোষণা হলো by শাহনেওয়াজ চৌধুরী
মেয়র শহরটাকে খুব সুন্দর করে সাজাতে চান। পর্যটকেরা নিজের দেশে ফিরে গিয়ে যেন বলেন—‘শহরটা ছোট, কিন্তু এ রকম সুন্দর আর গোছানো শহর কমই দেখেছি!’ এমন করে গুছিয়ে বললেন মেয়র। মুহূর্তে উপস্থিত সবার মাঝে স্বপ্ন ছড়িয়ে গেল। সভা শেষে তাঁকে ‘স্বপ্নবাজ মেয়র’ উপাধি দেওয়া হলো।
আজ দুপুরে একটা শিশুপার্ক উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন মেয়র। অফিস থেকে নেমে গাড়িতে উঠবেন, এত্তটুকুন পথ। অথচ এই পথটুকু পেরিয়ে গাড়িতে ওঠার মধ্যেই দুপুরের কড়া রোদ এসে খুব তির্যকভাবে মেয়রের টাকের ওপর পড়ল। অমনি হা হা করে উঠলেন তিনি—‘ইস্, রোদের কী তেজ!’
মেয়রের একজন সঙ্গী বললেন, ‘ স্যার, এ রকম রোদ মাথায় নিয়ে লোকজন কোথাও যেতে চায় না। তার ওপর ছাতার দামও বেড়ে গেছে।’
‘তাই নাকি!’ শুনে অবাক হলেন মেয়র।
‘জি স্যার। আগে বর্ষা এলে ছাতার দাম বাড়ত। এবার গরমকালেই ছাতার দাম বেড়েছে।’
‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এভাবে গরম পড়লে তো শহরের মানুষের বেঁচে থাকায় কঠিন হয়ে যাবে। তার ওপর বিদ্যুৎ সমস্যা। পাখা না ঘুরলে অফিস-আদালতের লোকজন তো কাজই করতে পারবে না। আর কাজ না করলে পিছিয়ে পড়ব আমরা।’ মেয়র বললেন।
উদ্বোধন শেষে শিশুপার্কটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন মেয়র। দোলনার কাছে গিয়ে তিনি এক অদ্ভুত কাণ্ড করলেন। দোলনায় বসে নিজে নিজে দোল খেতে শুরু করলেন।
মেয়রের ছেলেমানুষি দেখে সবার হাসি পেল। আবার এমন হাসি-খুশি মেয়রকে ভালোও লাগল সবার।
দোল খেতে গিয়ে মেয়রের চোখে-মুখে রোদের হলকা এসে লাগল। বিরক্ত হয়ে দোলনা থেকে নেমে গেলেন তিনি।
তারপর থেকে খুব ভাবতে শুরু করলেন মেয়র।
এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শহরটার কী যে হবে! মানুষই বা কীভাবে বাঁচবে?
এরা কেবল বিল্ডিং দাঁড় করাতে পারলেই বেঁচে যায়। ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে কত্ত টাকা আয়! গাছ নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় এই শহরের বাড়ির মালিকদের?
শহরের হাতে গোনা গাছগুলো কোটি মানুষকে অক্সিজেন দিতে দিতে হয়রান। তার ওপর এমন করে গাছ কমতে থাকলে কী যে হবে! যে কয়টা গাছ শহরে আছে, সেগুলোরও তো যত্ন হয় না।
মেয়র একদিন নামলেন শহরটা খুব ভালো করে ঘুরে দেখবেন বলে।
গাছপালার অবস্থা দেখবেন।
মেয়রের চোখে পড়ল—ন্যাড়া মাথায় দু-চার গাছি চুল থাকার মতো শহরের কোনো কোনো রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতার ফাঁকে টকটকে লাল ফুল ফুটে আছে। দেখে মুগ্ধ হলেন মেয়র। ভাবেন, প্রকৃতির প্রতি আমরা নির্দয় হলেও প্রকৃতি আমাদের ওপর খুব বেশি নির্দয় হতে পারে না। না হলে কী ধুলো আর ধোঁয়ায় ঢাকা এই শহরটায় এত চমৎকার করে গাছে গাছে ফুল ফুটে থাকে!
মেয়র অনেক ভেবে ঠিক করলেন, একটা পুরস্কার ঘোষণা করবেন। শহরে যার বাড়িতে অন্তত বড় বড় ১০টি গাছ আছে, কেবল তিনিই এই পুরস্কার পাবেন! পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট তো দেওয়া হবেই, প্রাইজমানিও অনেক থাকবে। মানুষগুলো তবু যদি গাছ লাগাতে উৎসাহিত হয়!
কী আশ্চর্য, পুরস্কার দেওয়ার মতো শহরে কেবল একটি বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেল! গাছপালায় ঘেরা একটা টিনশেড বাড়ি। যেখানে বউ, ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন এক ‘গাছপাগলা বুড়ো’।
তিনি পেলেন পুরস্কার। খবরের কাগজে তাঁর ছবি ছাপা হলো। টিভিতে তাঁঁর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। পুরস্কারের টাকায় অনেক অনেক গাছের চারা কিনলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করলেন চারাগুলো। বুড়োকে পুরস্কার পেতে দেখে শহরের মানুষ তাদের বাড়িতেও গাছ লাগাতে শুরু করল।
বুড়ো এবার পুরো শহরটায় গাছ লাগাতে শুরু করলেন। তাঁকে সাহায্য করল মেয়রের লোকেরা।
মেয়রের মন ভালো হয়ে গেল। এই শহরের দেখাদেখি অন্য শহরের মেয়রেরাও এমন আয়োজনে মেতে উঠলেন।
একদিন হয়তো এখনকার মেয়ররা থাকবেন না! কিন্তু কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু ফুল, কাঠগোলাপের মতো অনেক অনেক ফুলের হাসি তাদের কথা মনে করিয়ে দেবে। ফুলের হাসি দেখে ভালো থাকবে মানুষের মন। ফুলের রং মেখে তারাও যোগ দেবে ফুলের হাসিতে।
মেয়রের একজন সঙ্গী বললেন, ‘ স্যার, এ রকম রোদ মাথায় নিয়ে লোকজন কোথাও যেতে চায় না। তার ওপর ছাতার দামও বেড়ে গেছে।’
‘তাই নাকি!’ শুনে অবাক হলেন মেয়র।
‘জি স্যার। আগে বর্ষা এলে ছাতার দাম বাড়ত। এবার গরমকালেই ছাতার দাম বেড়েছে।’
‘তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এভাবে গরম পড়লে তো শহরের মানুষের বেঁচে থাকায় কঠিন হয়ে যাবে। তার ওপর বিদ্যুৎ সমস্যা। পাখা না ঘুরলে অফিস-আদালতের লোকজন তো কাজই করতে পারবে না। আর কাজ না করলে পিছিয়ে পড়ব আমরা।’ মেয়র বললেন।
উদ্বোধন শেষে শিশুপার্কটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন মেয়র। দোলনার কাছে গিয়ে তিনি এক অদ্ভুত কাণ্ড করলেন। দোলনায় বসে নিজে নিজে দোল খেতে শুরু করলেন।
মেয়রের ছেলেমানুষি দেখে সবার হাসি পেল। আবার এমন হাসি-খুশি মেয়রকে ভালোও লাগল সবার।
দোল খেতে গিয়ে মেয়রের চোখে-মুখে রোদের হলকা এসে লাগল। বিরক্ত হয়ে দোলনা থেকে নেমে গেলেন তিনি।
তারপর থেকে খুব ভাবতে শুরু করলেন মেয়র।
এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শহরটার কী যে হবে! মানুষই বা কীভাবে বাঁচবে?
এরা কেবল বিল্ডিং দাঁড় করাতে পারলেই বেঁচে যায়। ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে কত্ত টাকা আয়! গাছ নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় এই শহরের বাড়ির মালিকদের?
শহরের হাতে গোনা গাছগুলো কোটি মানুষকে অক্সিজেন দিতে দিতে হয়রান। তার ওপর এমন করে গাছ কমতে থাকলে কী যে হবে! যে কয়টা গাছ শহরে আছে, সেগুলোরও তো যত্ন হয় না।
মেয়র একদিন নামলেন শহরটা খুব ভালো করে ঘুরে দেখবেন বলে।
গাছপালার অবস্থা দেখবেন।
মেয়রের চোখে পড়ল—ন্যাড়া মাথায় দু-চার গাছি চুল থাকার মতো শহরের কোনো কোনো রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতার ফাঁকে টকটকে লাল ফুল ফুটে আছে। দেখে মুগ্ধ হলেন মেয়র। ভাবেন, প্রকৃতির প্রতি আমরা নির্দয় হলেও প্রকৃতি আমাদের ওপর খুব বেশি নির্দয় হতে পারে না। না হলে কী ধুলো আর ধোঁয়ায় ঢাকা এই শহরটায় এত চমৎকার করে গাছে গাছে ফুল ফুটে থাকে!
মেয়র অনেক ভেবে ঠিক করলেন, একটা পুরস্কার ঘোষণা করবেন। শহরে যার বাড়িতে অন্তত বড় বড় ১০টি গাছ আছে, কেবল তিনিই এই পুরস্কার পাবেন! পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট তো দেওয়া হবেই, প্রাইজমানিও অনেক থাকবে। মানুষগুলো তবু যদি গাছ লাগাতে উৎসাহিত হয়!
কী আশ্চর্য, পুরস্কার দেওয়ার মতো শহরে কেবল একটি বাড়ি খুঁজে পাওয়া গেল! গাছপালায় ঘেরা একটা টিনশেড বাড়ি। যেখানে বউ, ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন এক ‘গাছপাগলা বুড়ো’।
তিনি পেলেন পুরস্কার। খবরের কাগজে তাঁর ছবি ছাপা হলো। টিভিতে তাঁঁর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। পুরস্কারের টাকায় অনেক অনেক গাছের চারা কিনলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করলেন চারাগুলো। বুড়োকে পুরস্কার পেতে দেখে শহরের মানুষ তাদের বাড়িতেও গাছ লাগাতে শুরু করল।
বুড়ো এবার পুরো শহরটায় গাছ লাগাতে শুরু করলেন। তাঁকে সাহায্য করল মেয়রের লোকেরা।
মেয়রের মন ভালো হয়ে গেল। এই শহরের দেখাদেখি অন্য শহরের মেয়রেরাও এমন আয়োজনে মেতে উঠলেন।
একদিন হয়তো এখনকার মেয়ররা থাকবেন না! কিন্তু কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু ফুল, কাঠগোলাপের মতো অনেক অনেক ফুলের হাসি তাদের কথা মনে করিয়ে দেবে। ফুলের হাসি দেখে ভালো থাকবে মানুষের মন। ফুলের রং মেখে তারাও যোগ দেবে ফুলের হাসিতে।
No comments