মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে সংকট আরও গভীর হলো- সরকার ও জোটে অস্বস্তি
তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মহাজোট সরকারের দুর্বলতা ও সংকট আরও গভীর হলো। এ ঘটনায় সরকার, আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলোয় হতাশা ও অস্বস্তি বেড়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেই জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে সংকট মোচন করতে গিয়ে নতুন সংকটের জন্ম হবে, এমনটা সরকারের উচ্চপর্যায়ের ভাবনায় ছিল না। মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হতে পারে, তা ছিল তাদের চিন্তার বাইরে। গত ৪০ বছরে এভাবে কেউ জানান দিয়ে মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন নীতিনির্ধারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের পর থেকে সবকিছু অন্যভাবে দেখছি। এ ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব হয়েছি।’ আরেক নীতিনির্ধারক বলেন, ‘তোফায়েল মন্ত্রী না হয়ে সরকারকে বিপদে ফেলেছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের বড় বড় ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে দলের ভেতরে-বাইরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁরা দলে বিভেদ নয়, সমঝোতার মাধ্যমে বিভক্তি নিরসন করার উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। সে জন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলের সভাপতিমণ্ডলী ও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কথা বলেছিলেন অনেকে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়গুলোতে আপসমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। মিলমিশ করে চলা এবং দেশকে সংকটের দিকে না নেওয়ার পরামর্শও ছিল। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এসব পরামর্শ মানতে চান না, বরং বিরোধ বাড়িয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত লোক দেখানো মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেও সংকট কমল না, উল্টো বাড়ল।
ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, তা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ধারণার বাইরে। বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদের ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ঘনিষ্ঠদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তোফায়েল আহমেদ কাজটি ঠিক করেননি। অপর একজনকে তিনি বলেছেন, এখন আর কোনো বিভ্রান্তি নেই। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রী না হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তবে জ্যেষ্ঠ নেতারা নাখোশ হয়েছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘আমি কাউকে ফোন করিনি। দলের সভাপতি হিসেবে আমার নির্দেশ অমান্য করলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রশ্ন উঠত।’
কেন মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ: রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গত প্রায় চার বছরে মহাজোট সরকারের শাসনকাজের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট ছিল। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে কারসাজি করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করা, সর্বশেষ হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ ডেসটিনি ও ইউনিপেটুইউর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারের নাজুক অবস্থা। আর সরকারের এসব দুর্বলতার ব্যাপারে সংসদের ভেতরে-বাইরে তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও হাসানুল হক ইনু ছিলেন সরব এবং বেশ সমালোচনামুখর।
বছর দেড়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনকালে সেখানকার রাস্তাঘাটের করুণ দশার কথা উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এরপর নানা প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তাঁরা। সূত্র জানায়, তাঁদের মুখ বন্ধ করা এবং সরকারের দুর্বলতা ঢাকাই ছিল মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য। এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদেরও সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। তাঁদের মন্ত্রী করার পর সমালোচনা বন্ধ হয়েছে।
মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করার নেপথ্যে: খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন দল ও সরকারে উপেক্ষিত হওয়ার ক্ষোভ থেকেই তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা না করাও ছিল একটি বড় কারণ।
সূত্র জানায়, এক-এগারোর পর থেকেই শেখ হাসিনার সঙ্গে তোফায়েলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট চলছিল। যে কারণে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোটের সরকার গঠনকালে তাঁকেসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ একই বছরের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করা হয়। কিন্তু তিনি উপদেষ্টাদের কোনো সভায় যোগ দেননি। প্রকাশ্যেই তিনি বলতেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নয়, দলের একজন কর্মী হয়ে থাকতে চান তিনি।
তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠ কারও কারও মতে, এত কিছুর পরও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করলে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা তৈরি হতো। তবে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে তোফায়েল আহমেদের ফাঁদে পড়ার বা অসম্মানিত হওয়ার ঝুঁকিও ছিল।
এ ছাড়া দলের দুই নেতা ও মন্ত্রী বৃহস্পতিবার মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে তোফায়েল আহমেদকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। শেষ পর্যন্ত আধা ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তোফায়েল আহমেদকে ফোন করে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। এ জন্য প্রয়োজনে তিনি শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখারও প্রস্তাব দেন। তার পরও তোফায়েল সম্মত হননি।
অন্যদিকে রাশেদ খান মেননও চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভায় নেবেন। তা না হওয়ায় তিনিও ক্ষুব্ধ হন। তিনি মনে করেন, গত চার বছরে মহাজোট সরকারে তাঁর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছিল না। তিনি এসব বিষয় সুরাহা করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর দলও মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে সম্মতি দেয়নি।
নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে দলের ভাবনা: আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভায় নবনিযুক্ত সাত সদস্যকে নিয়ে দলে কোনো উচ্চাশা নেই, বরং হতাশা কাজ করছে। নতুন সাতজনের মধ্যে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এ এইচ মাহমুদ আলী ও মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ সাবেক আমলা। তাঁদের অংশগ্রহণে দল ও সরকারের বিশেষ কোনো লাভ হবে বলে মনে করেন না মন্ত্রিসভারই অনেক সদস্য। তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের বিকল্প যে দুজনকে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের কতটুকু কী করার আছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। এর চেয়ে তরুণ নেতাদের মন্ত্রিসভায় নিলে দলের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ। প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী সম্পর্কে রাজশাহীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা আছে।
দপ্তর বণ্টন করা হয়নি: সরকারি সূত্রগুলো জানায়, নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের দপ্তর এখনো বণ্টন করা হয়নি। রোববার নতুন মন্ত্রীরা দপ্তর পাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হলেও কেউ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম।
সূত্র জানায়, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁর বাদ পড়ার কিছুটা সম্ভাবনা আছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দুটি আলাদা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেও আলাদা করা হতে পারে। এ ছাড়া রেলপথ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের একজন নীতিনির্ধারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের পর থেকে সবকিছু অন্যভাবে দেখছি। এ ঘটনায় রীতিমতো হতভম্ব হয়েছি।’ আরেক নীতিনির্ধারক বলেন, ‘তোফায়েল মন্ত্রী না হয়ে সরকারকে বিপদে ফেলেছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের বড় বড় ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে দলের ভেতরে-বাইরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁরা দলে বিভেদ নয়, সমঝোতার মাধ্যমে বিভক্তি নিরসন করার উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। সে জন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলের সভাপতিমণ্ডলী ও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার কথা বলেছিলেন অনেকে।
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাংক ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়গুলোতে আপসমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। মিলমিশ করে চলা এবং দেশকে সংকটের দিকে না নেওয়ার পরামর্শও ছিল। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এসব পরামর্শ মানতে চান না, বরং বিরোধ বাড়িয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত লোক দেখানো মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেও সংকট কমল না, উল্টো বাড়ল।
ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, তা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ধারণার বাইরে। বিশেষ করে তোফায়েল আহমেদের ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ঘনিষ্ঠদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তোফায়েল আহমেদ কাজটি ঠিক করেননি। অপর একজনকে তিনি বলেছেন, এখন আর কোনো বিভ্রান্তি নেই। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, তোফায়েল আহমেদের মন্ত্রী না হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। তবে জ্যেষ্ঠ নেতারা নাখোশ হয়েছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘আমি কাউকে ফোন করিনি। দলের সভাপতি হিসেবে আমার নির্দেশ অমান্য করলে শৃঙ্খলা ভঙ্গের প্রশ্ন উঠত।’
কেন মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ: রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, গত প্রায় চার বছরে মহাজোট সরকারের শাসনকাজের দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা স্পষ্ট ছিল। বিশেষ করে শেয়ারবাজারে কারসাজি করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করা, সর্বশেষ হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ ডেসটিনি ও ইউনিপেটুইউর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারের নাজুক অবস্থা। আর সরকারের এসব দুর্বলতার ব্যাপারে সংসদের ভেতরে-বাইরে তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও হাসানুল হক ইনু ছিলেন সরব এবং বেশ সমালোচনামুখর।
বছর দেড়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনকালে সেখানকার রাস্তাঘাটের করুণ দশার কথা উল্লেখ করে জাতীয় সংসদে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এরপর নানা প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তাঁরা। সূত্র জানায়, তাঁদের মুখ বন্ধ করা এবং সরকারের দুর্বলতা ঢাকাই ছিল মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য। এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদেরও সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। তাঁদের মন্ত্রী করার পর সমালোচনা বন্ধ হয়েছে।
মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করার নেপথ্যে: খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন দল ও সরকারে উপেক্ষিত হওয়ার ক্ষোভ থেকেই তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা না করাও ছিল একটি বড় কারণ।
সূত্র জানায়, এক-এগারোর পর থেকেই শেখ হাসিনার সঙ্গে তোফায়েলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট চলছিল। যে কারণে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি মহাজোটের সরকার গঠনকালে তাঁকেসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ একই বছরের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করা হয়। কিন্তু তিনি উপদেষ্টাদের কোনো সভায় যোগ দেননি। প্রকাশ্যেই তিনি বলতেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নয়, দলের একজন কর্মী হয়ে থাকতে চান তিনি।
তোফায়েল আহমেদের ঘনিষ্ঠ কারও কারও মতে, এত কিছুর পরও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করলে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা তৈরি হতো। তবে মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে তোফায়েল আহমেদের ফাঁদে পড়ার বা অসম্মানিত হওয়ার ঝুঁকিও ছিল।
এ ছাড়া দলের দুই নেতা ও মন্ত্রী বৃহস্পতিবার মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করতে তোফায়েল আহমেদকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। শেষ পর্যন্ত আধা ঘণ্টা আগে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তোফায়েল আহমেদকে ফোন করে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। এ জন্য প্রয়োজনে তিনি শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখারও প্রস্তাব দেন। তার পরও তোফায়েল সম্মত হননি।
অন্যদিকে রাশেদ খান মেননও চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভায় নেবেন। তা না হওয়ায় তিনিও ক্ষুব্ধ হন। তিনি মনে করেন, গত চার বছরে মহাজোট সরকারে তাঁর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ছিল না। তিনি এসব বিষয় সুরাহা করতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া তাঁর দলও মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে সম্মতি দেয়নি।
নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে দলের ভাবনা: আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, মন্ত্রিসভায় নবনিযুক্ত সাত সদস্যকে নিয়ে দলে কোনো উচ্চাশা নেই, বরং হতাশা কাজ করছে। নতুন সাতজনের মধ্যে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এ এইচ মাহমুদ আলী ও মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ সাবেক আমলা। তাঁদের অংশগ্রহণে দল ও সরকারের বিশেষ কোনো লাভ হবে বলে মনে করেন না মন্ত্রিসভারই অনেক সদস্য। তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের বিকল্প যে দুজনকে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের কতটুকু কী করার আছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে অনেকের মধ্যে। এর চেয়ে তরুণ নেতাদের মন্ত্রিসভায় নিলে দলের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ। প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী সম্পর্কে রাজশাহীতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা আছে।
দপ্তর বণ্টন করা হয়নি: সরকারি সূত্রগুলো জানায়, নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের দপ্তর এখনো বণ্টন করা হয়নি। রোববার নতুন মন্ত্রীরা দপ্তর পাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হলেও কেউ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম।
সূত্র জানায়, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁর বাদ পড়ার কিছুটা সম্ভাবনা আছে। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দুটি আলাদা মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেও আলাদা করা হতে পারে। এ ছাড়া রেলপথ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী দেওয়া হবে।
No comments