সাংবাদিক দম্পতি হত্যা- এবার চার ‘চোরের’ ডিএনএ পরীক্ষা by নজরুল ইসলাম

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এবার অভিযুক্ত চার পেশাদার চোরের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড) নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে।


জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ক্যাপ্টেন এম সোহায়েল বলেন, এই চোরের দল এর আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল। তাদের ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা এদের নিয়ে সাগর-রুনির বাসায় যান। চোর পাইপ বেয়ে পাঁচতলায় উঠতে পারে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, চোরদের একজন রান্নাঘরের গ্যাসের পাইপ বেয়ে মাত্র ১৫ মিনিটে ঘরের ভেতরে ঢুকে আবার বের হয়ে আসে। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা এটি ভিডিওতে ধারণ করেন।
কারা সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে র‌্যাবের সদস্যরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কয়েকজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। পরে এসব নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে মাহফিজুর রহমান, এনামুল হক, ফজুলল হক ওরফে লিটন দেওয়ান ও আবু হানিফের। এঁরা এখন জামিনে আছেন। হানিফ, এনামুল ও ফজলুল হকের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার বিষয়ে দুটি সংস্থাই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। র‌্যাব তাঁদের মুখের লালা ও হাতের ছাপ সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।
র‌্যাবের পরিচালক বলেন, চিকিৎসক নারায়ণ ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ধরনে মিল আছে। দুটি ঘটনাই ঘটেছে শোবার ঘরে। গ্রিল ভেঙে ঢুকে চিকিৎসক ও সাংবাদিক দম্পতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার ও ডিএমপি কমিশনারের মুখপাত্র মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তকালে গ্রিল ভাঙা চোর মাহফিজুর, এনামুল, ফজলুল, হালিম ও আবু হানিফকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা গ্রিল ভাঙতে পারদর্শী। বিভিন্ন থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। ডিবি প্রথমে ধারণা করেছিল, গ্রিল ভেঙে তাঁরাই সাগর-রুনিকে খুন করেছে। এ জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে পেশাদার ওই চার চোরের সঙ্গে আরও দুজনের মুখের লালা ও হাতের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁদের এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি।
অভিযুক্ত চোর আবু হানিফ প্রথম আলোকে জানান, ডিবি পুলিশ জুলাইয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মাদকের মামলায় তাঁকে আটক করে। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। রমজান মাসের ১৫-২০ দিন আগে উপকারাধ্যক্ষের দপ্তরে তাঁর ও তাঁর পূর্বপরিচিত কারাবন্দী মাহফিজুর রহমান, এনামুল হক, ফজলুল হকের মুখের লালা ও হাতের ছাপ নেওয়া হয়। সাদা পোশাকে র‌্যাবের চার সদস্য চিকিৎসকের মাধ্যমে তাঁদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। এঁরা র‌্যাবের লোক বলে কয়েদি ও কারারক্ষীরা তাঁদের নিশ্চিত করেছেন বলে জানান।
হানিফ জানান, কারাগারে মুখের লালা সংগ্রহের ৮-১০ দিন পর কারাগার থেকে তাঁকে র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে ওয়ারী থানার একটি গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ সময় র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে আবারও তাঁর হাতের ছাপ, মুখের লালা ও ছবি নেওয়া হয়। পরে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানান, গ্রিল ভেঙে রাজাবাজারের বাসায় ঢুকে সাংবাদিক দম্পতিকে খুন করেছে কি না, র‌্যাব তা জানতে চায়।
হানিফ দাবি করেন, মাহফিজুল, এনামুল ও ফজলুল হককেও একই মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে তাঁদেরও হাতের ছাপ, মুখের লালা নেওয়া হয়।
ফজলুল হক জানান, কারাগারে রাত আটটার পর শরীর থেকে নমুনা নেওয়া হয়। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা মা-বাবা ও স্ত্রীর নামসহ বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরি মামলায় তাঁকে র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানেও নুমনা সংগ্রহ করে ও ছবি তোলে।
ফজলুল বলেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁরা সাগর-রুনিকে খুন করতে রাজাবাজারে গিয়েছিলেন কি না, র‌্যাব জানতে চায়। জবাবে তিনি বলেছিলেন, তাঁরা তখন কাকরাইল ও গুলিস্তানে গাড়ি নিয়ে চুরি করতে বের হয়েছিলেন।
এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ১২ মার্চ রুনির ভাই বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে থানা ও ডিবি পুলিশ (ডিবি) মামলাটি তদন্ত করে আসছিল। পরে হাইকোর্ট মামলাটি র‌্যাবকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সম্প্রতি পেশাদার অপরাধীদের ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া সাগর-রুনি ও তাঁদের সন্তান মেঘের ডিএনএ পরীক্ষার জন্যও নমুনা পাঠানো হয়। রুনির পোশাক থেকে এক ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ-বৃত্তান্ত পাওয়া যায় বলে র‌্যাব দাবি করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.