মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি জাতীয় পার্টিও by সেলিম জাহিদ
সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আরও একজনকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক এই দল। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার নতুন সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জাপাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাপার একমাত্র সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরকেও সরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা চলছে দলটিতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ‘নভেম্বরের মধ্যেই এটি হতে পারে।’ এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মহাজোট থেকে জাপার বেরিয়ে আসারও সম্ভাবনা রয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বছর খানেক আগেও একবার মন্ত্রিসভায় জাপা থেকে আরও দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। তখনো সাড়া দেয়নি দলটি। অবশ্য, ওই সময় সাড়া না দেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল, মন্ত্রিত্বের জন্য কাকে দল মনোনীত করবে, তা ঠিক করতে না পারা। তখন দলের একাধিক নেতা মন্ত্রী হতে চেয়েছেন। বিবাদ ঠেকাতে তখন মন্ত্রিত্ব নিয়ে আগ্রহ দেখাননি এরশাদ।
এবার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে যুক্ত না হওয়ার কারণ কী, তা জানার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও এরশাদকে পাওয়া যায়নি। তবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজনকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার জন্য জাপার কাছে প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু স্যার (এরশাদ) পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, “ইট ইজ টু লেট।”’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘প্রায়ই উনাদের (এরশাদ ও শেখ হাসিনা) মধ্যে ভিউজ এক্সচেঞ্জ হয়। নিশ্চয়ই চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে ডিটেইল বলা সম্ভব হবে না।’
সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় যুক্ত না হওয়ার বিষয়ে জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদ বহু আগেই ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই এ সময় নতুন করে মন্ত্রিত্ব নয়, বরং সরকারে থাকা মন্ত্রীকে বের করে আনার সময় ঘনিয়ে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, একক নির্বাচনের লক্ষ্যে এরশাদ ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সারা দেশের ১১১ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই সভায় কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমদকে প্রার্থী ঘোষণা করেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, মন্ত্রিসভায় নতুন সদস্য যুক্ত করার সিদ্ধান্তে এই বিষয় মাথায় রেখে ওই আসনে সরকারদলীয় হুইপ মুজিবুল হককে মন্ত্রী করা হয়।
মন্ত্রিসভায় সাতজনের অন্তর্ভুক্তি এবং তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনা করে জাপা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা করেন। এতে মন্ত্রিসভায় নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি করা নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো আলোচনা না করা, শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়াসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল আগেই তোফায়েল ও মেননকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে তাঁদের মনোভাব জানা। এতে প্রধানমন্ত্রীর নিজের এবং দুই নেতার সম্মান রক্ষা হতো। মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রীকেই অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
তোফায়েল ও মেননের মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পড়ন্ত বিকেলে সূর্যরশ্মি অনেক লাল হয়, কিন্তু তাতে উত্তাপ থাকে না। তাঁরা বুঝেছেন, সাঁঝের বেলায় তাঁরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন না।’
আর শপথ অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়ে জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের না জানিয়েই সরকারের সব কার্যক্রম চলছে, এটা নতুন কিছু নয়। আমন্ত্রণ না জানালেও আমরা ব্যথিত হই না। এর পরও আমরা দেখতে চাই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।’
No comments