হাওর অঞ্চলে সন্ত্রাস-এলাকায় শান্তি নিশ্চিত করতে হবে

সম্প্রতি কটিয়াদী ও কিশোরগঞ্জ সদরের হাওর-মধ্যবর্তী ১০টি গ্রামে কালা মিয়া ও তার ভাই-ভাতিজাদের লুট, ডাকাতি, দখল ও ধর্ষণের বীভৎস কাহিনী নিয়ে কালের কণ্ঠে একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। তথ্যবহুল এ প্রতিবেদনে যে কাহিনী চিত্রিত হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।


মনে করিয়ে দেয় বাংলাভাই বা এরশাদ শিকদারের অত্যাচার-অনাচারের কথা। ভাবতে কষ্ট হয়, আধুনিক যুগে, গণতান্ত্রিক একটি সরকারের অধীনে এক ডাকাতের আতঙ্কের সামনে বিস্তৃত এলাকার মানুষ কতটা অসহায় হলে বাপ-দাদার ভিটাবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায়। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কালার নেতৃত্বে এই বাহিনী জমিজমা থেকে শুরু করে কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। হত্যা করেছে এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে আপন মামাসহ নিকটাত্মীয়দের। কালা নামের এই সন্ত্রাসীর দুই ভাই গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার পর তার বাহিনী আরো ভয়ানক হয়ে উঠেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারসহ অনেক পরিবারের নারী হয়েছে ধর্ষণের শিকার। অনেকে ধর্ষণ আতঙ্কে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তরুণী, গৃহবধূ, স্কুলছাত্রী- কেউ তাদের হাত থেকে নিরাপদ নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলা থাকা সত্ত্বেও কালা বাহিনী পুলিশের চোখে পলাতক অবস্থায় চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপরাধ। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, কমপক্ষে ২৫ বাড়ির মালিককে তারা জোর করে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং সেসব ভিটাবাড়ি এই বাহিনীর দখলেই আছে। উল্লেখ্য, কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও এসব ভয়ানক অপরাধে জড়িতরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হয়ে এসেছে।
এই বর্ণনা থেকে মনে হয়, দেশে কোনো আইন নেই, আইনের শাসন নেই। কালা বাহিনীর অপরাধ সংঘটন একদিনের নয়। দিনের পর দিন তারা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। আর শুধু কালা বাহিনী নয়, দেশে এ রকম আরো অনেক বাহিনী রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায়ও এ রকম অনেক বাহিনীর খবর পাওয়া যায়। এরা জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে, মুক্তিপণ না পেলে মেরে ফেলে। জেলেদের জাল, নৌকা, মাছ লুট করে নেয়। সুন্দরবন এলাকায়ও এ রকম অনেক দস্যুবাহিনীর উৎপাতের কথা শোনা যায়। তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কী জন্য আছে? একটি সভ্য সমাজে এ ধরনের অপরাধীর অবাধ বিচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা আশা করি, হাওর অঞ্চলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অচিরেই সন্ত্রাসমুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারকে জানতে হবে- এ দেশের মানুষ অল্প খেয়ে, অল্প চাহিদার মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। তাদের একমাত্র চাহিদা, শান্তির সঙ্গে বসবাসের নিশ্চয়তা।

No comments

Powered by Blogger.