যে খবর নাড়া দেয়- দিল্লি বহুদূর

স্ত্রীকে বেতন দিতে হবে! বলে কি! এ নিয়ে আবার আইন হচ্ছে! প্রথম আলোর ১০ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় সারা বিশ্ব পাতায় এই সংবাদটা পড়ে প্রথমে একটু ধাক্কাই লাগে। ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এ রকম একটি আইন প্রণয়নের চিন্তা করছে। এ আইন হলে পুরুষদের মাসিক আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ চলে আসবে স্ত্রীদের হাতে!


আমাদের দেশসহ এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে পুরুষেরাই মূলত বাইরে কাজ করেন। অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারগুলো তাঁদের জন্যই উন্মুক্ত। নারীরা তবে কী করেন? তাঁরা কি সেকালের রানিদের মতো সোনার পালঙ্কে অলস শুয়ে থাকেন এবং সখী-পরিচারিকা পরিবেষ্টিত হয়ে শুধু গল্প-গুজব করেই সময় কাটান? খাবার সময় হলে রুপার গ্লাসে আঙুরের রস আর সোনার থালায় পোলাও খান?
অভিজ্ঞতা বলে, রোজগারের সন্ধানে পুরুষেরা ঘরের বাইরে গেলে ঘর সামলানোর দায়িত্ব এই নারীদের কাঁধেই বর্তায়। জীবন তো শুধু টাকার সন্ধানে সময় পার করে দেওয়া নয়, ঘর সামলানোর মতো কাজকেও প্রাধান্য দিতে হয়। ঘরের কাজগুলো যাঁরা করেন, তাঁরা ‘গৃহিণী’ নামেই পরিচিতি পান, যার অর্থ তিনি কিছুই করেন না।
ভাবনার এই গড়নটাতেই গলদ আছে। জীবনে টাকা-পয়সার প্রয়োজন আছে বটে, কিন্তু যে কাজগুলোর মাধ্যমে একটি পরিবার সত্যিকার অর্থে ভিত্তি পায়, তা হলো সন্তানদের সহবত শেখানো, দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁদের একাত্ম হওয়ার শিক্ষা দেওয়া। এ কাজগুলো করেন মূলত ওই গৃহিণীরা। তাঁরাও আসলে কর্মজীবী মানুষ।
অর্থ উপার্জন এবং বাড়ি সামলানোর মতো দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রথমটিকেই শুধু কাজ হিসেবে দেখলে এই অসামঞ্জস্য কিছুতেই কাটবে না। বরং সব ধরনের কাজকেই মূল্য দিলে একটি ছন্দময় পরিবার, তথা একটি ছন্দময় দেশ পাওয়া যাবে। আমাদের পাশের দেশ সম্ভবত সেদিকেই এগোচ্ছে, আমাদের কাছে দিল্লি এখনো বহুদূর।
—জাহীদ রেজা নূর

No comments

Powered by Blogger.