ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং by মাহফুজুর রহমান মানিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেন, দিন দিন এর মান কমে যাচ্ছে। এর ভিত্তি হিসেবে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিংকেও তারা দেখে থাকেন। এ বছরের অবস্থান দেখাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা অপরিবর্তনীয়। যদিও র্যাংকিংয়ের মাথাব্যথা শীর্ষস্থান নিয়েই।
এ প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ান পত্রিকার শিরোনামটিই যথেষ্ট। যেটি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যেন একটা অঘোষিত প্রতিযোগিতা চলছে। অবশ্য একটু গভীরভাবে দেখলে মনে হবে, গার্ডিয়ানই হয়তো এই প্রতিযোগিতাটা উস্কে দিচ্ছে। কারণ এর আগের বছরও যেখানে ইংল্যান্ড প্রথম ছিল, এবার সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 'বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে ক্যাম্ব্রিজ ও হার্ভার্ডকে টপকিয়ে এমআইটি শীর্ষে'_ প্রতিবেদনটির হাইলাইটই সেই প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিয়ে আসছে। যেটি বলছে, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি শীর্ষস্থানটি দখল করেছে এবং তালিকার প্রথমদিকে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অব্যাহতভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। তবে শীর্ষে থাকা ছয়টির মধ্যে চারটিই ব্রিটিশ। এটাই বোধ হয় গার্ডিয়ানের জন্য কিছুটা স্বস্তির বিষয়। আর অস্বস্তির বিষয় হলো, ক্যাম্ব্রিজ প্রথম স্থানটি হারিয়ে এখন দ্বিতীয়, আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে হার্ভার্ড।
প্রতি বছর পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের ভিত্তিতে এই র্যাংকিং করা হয়। ২০০৪ সাল থেকে কিউএস (ছঁধপয়ঁধৎবষষর ঝুসড়হফং) নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই র্যাংকিং করে থাকে। ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় ২০১২ সালের অবস্থা এবং ওই দিনই এ নিয়ে প্রতিবেদন করে গার্ডিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে গবেষণার গুণগত মান, শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষমতা, শিক্ষকদের শিক্ষাদান এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইত্যাদি দেখা হয়। অবস্থানের দিক থেকে প্রথম ২শ' বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ নম্বরে থাকা ইউনিভার্সিটি অব হংকং ছাড়া ওপরের সবই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, সিঙ্গাপুর. হংকং এবং ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথমদিকে উঠে এসেছে। চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ও ১শ'র মধ্যে আছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা ভাবা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা অপরিবর্তনীয় বলা হলো। আসলেই অবস্থান কত? কিউএস প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইট ঃড়ঢ়ঁহরাবৎংরঃরবং.পড়স-এ ২০১২ সালের কেবল প্রথম ৭শ'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্দিষ্টভাবে দেওয়া নেই। বলা আছে ৬০১+। ২০১১ সালের অবস্থা তা-ই ছিল। অথচ ২০০৫ ও ২০০৬-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং ছিল ৩৬৫। আর মূল তালিকায় না থাকলেও বিশেষায়িত বা উপ-তালিকায় এ বছর প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের অবস্থান ২৬৯।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এশিয়ার মধ্যে কেমন। ৩শ' বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২০১-২৫০-এর মধ্যে। এ ছাড়া ৩শ'র মধ্যে বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
এই হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং। এই র্যাংকিংই যে চূড়ান্ত, তা নয়। এ নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে যেমন এই র্যাংকিংকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয় বলেছেন; অনেকে আবার ঘোরতর সমালোচনাও করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন ক্যাম্ব্রিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে দেখানো হলো, এর বিরোধিতায় মার্কিন এক অর্থনীতিবিদ ব্লগে লিখেছেন 'এই র্যাংকিং আসলে আবর্জনা মাত্র। এটি ভ্রান্ত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্ণয় করছে। এর ওপর বিশ্বাস করা যায় না। একে উপেক্ষা করা উচিত।' আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে ছিল না বলেই হয়তো তার এত ক্ষোভ। এর মধ্যে যে একটা রাজনীতিও আছে, সেটাও কিছুটা বোঝা গেল। এ বছর তো এমআইটি শীর্ষে। এখন তারা কী বলেন_ সেটাই দেখার বিষয়।
সমালোচনা সত্ত্বেও এই র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা অবস্থা যে পরিমাপ করা যাচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার জো নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এর বাইরে দেখলেও কি খুব ভালো আছে? প্রতি বছর শীর্ষস্থান নিয়ে এমআইটি, ক্যাম্ব্রিজ কিংবা হার্ভার্ডের উত্তাপেও নিজেদের দেখার সুযোগ আছে। অন্তত তাও যদি নিজেদের অবস্থা উন্নয়নের চিন্তার মাধ্যম হয়, মন্দ কি!
mahfuz.manik@gmail.com
প্রতি বছর পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের ভিত্তিতে এই র্যাংকিং করা হয়। ২০০৪ সাল থেকে কিউএস (ছঁধপয়ঁধৎবষষর ঝুসড়হফং) নামে একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই র্যাংকিং করে থাকে। ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় ২০১২ সালের অবস্থা এবং ওই দিনই এ নিয়ে প্রতিবেদন করে গার্ডিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করার ক্ষেত্রে গবেষণার গুণগত মান, শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষমতা, শিক্ষকদের শিক্ষাদান এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইত্যাদি দেখা হয়। অবস্থানের দিক থেকে প্রথম ২শ' বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ নম্বরে থাকা ইউনিভার্সিটি অব হংকং ছাড়া ওপরের সবই ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, সিঙ্গাপুর. হংকং এবং ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথমদিকে উঠে এসেছে। চীন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ও ১শ'র মধ্যে আছে।
এই তালিকায় বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা ভাবা যাক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা অপরিবর্তনীয় বলা হলো। আসলেই অবস্থান কত? কিউএস প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইট ঃড়ঢ়ঁহরাবৎংরঃরবং.পড়স-এ ২০১২ সালের কেবল প্রথম ৭শ'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্দিষ্টভাবে দেওয়া নেই। বলা আছে ৬০১+। ২০১১ সালের অবস্থা তা-ই ছিল। অথচ ২০০৫ ও ২০০৬-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং ছিল ৩৬৫। আর মূল তালিকায় না থাকলেও বিশেষায়িত বা উপ-তালিকায় এ বছর প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের অবস্থান ২৬৯।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এশিয়ার মধ্যে কেমন। ৩শ' বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ২০১-২৫০-এর মধ্যে। এ ছাড়া ৩শ'র মধ্যে বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
এই হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং। এই র্যাংকিংই যে চূড়ান্ত, তা নয়। এ নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে যেমন এই র্যাংকিংকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয় বলেছেন; অনেকে আবার ঘোরতর সমালোচনাও করেছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন ক্যাম্ব্রিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শীর্ষে দেখানো হলো, এর বিরোধিতায় মার্কিন এক অর্থনীতিবিদ ব্লগে লিখেছেন 'এই র্যাংকিং আসলে আবর্জনা মাত্র। এটি ভ্রান্ত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নির্ণয় করছে। এর ওপর বিশ্বাস করা যায় না। একে উপেক্ষা করা উচিত।' আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে ছিল না বলেই হয়তো তার এত ক্ষোভ। এর মধ্যে যে একটা রাজনীতিও আছে, সেটাও কিছুটা বোঝা গেল। এ বছর তো এমআইটি শীর্ষে। এখন তারা কী বলেন_ সেটাই দেখার বিষয়।
সমালোচনা সত্ত্বেও এই র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা অবস্থা যে পরিমাপ করা যাচ্ছে, সেটা অস্বীকার করার জো নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা এর বাইরে দেখলেও কি খুব ভালো আছে? প্রতি বছর শীর্ষস্থান নিয়ে এমআইটি, ক্যাম্ব্রিজ কিংবা হার্ভার্ডের উত্তাপেও নিজেদের দেখার সুযোগ আছে। অন্তত তাও যদি নিজেদের অবস্থা উন্নয়নের চিন্তার মাধ্যম হয়, মন্দ কি!
mahfuz.manik@gmail.com
No comments