রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে- নির্বাচন কমিশনের সংলাপ
নাগরিক সমাজ ইসিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনার যথার্থ পরামর্শ দিয়েছে। ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে ইসি পুনর্গঠনের পরপরই সবাই আশা করেছিল, নির্বাচনী বিধিবিধান সংস্কারে তারা নির্বাচনী মাঠের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। কিন্তু ইসি এত দিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে।
ইতিমধ্যে অনেক কালক্ষেপণ ঘটেছে এবং সত্যি বলতে কি, ইসি এ পর্যন্ত তেমন আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এমনকি নির্বাচনী বিধিব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আনার কথা পুনর্গঠিত ইসি ভাবছে কিংবা আদৌ তারা ভাবছে কি না, সে বিষয়টি বৃহস্পতিবারের সংলাপে স্পষ্ট করা হয়নি।
নির্দিষ্টভাবে কোনো একটি সংস্কারের প্রস্তাবও ইসি যে সংলাপে উপস্থাপন করতে পারল না, তাতে কিন্তু তাদের আন্তরিকতার অভাবই পরিলক্ষিত হলো। এমনকি বৈঠকে সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে তাদের তরফে কোনো ধারণাপত্রও পেশ করা হয়নি। এ জন্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ইসির সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সমালোচনার জবাবে ইসি কী বলেছে, তা জানা যায়নি। তারা এ বিষয়ে যদি আরও নীরবতা পালন করে, তা হলে সেটি হবে অমার্জনীয়। সীমানা পুনর্বিন্যাস কোনোক্রমেই একটি প্রশাসনিক বা সাদামাটা কাজ নয়। এর সঙ্গে গভীর রাজনীতি ও দলীয় স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। এ কথা অবশ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, সব দেশের জন্যই সত্য। উদগ্র দলীয় স্বার্থের কারণেই আমরা ৪০০ বছরের ঢাকাকে চার মিনিটে ভাগ হতে দেখেছি। এর পরও ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ পূরণ করবে না বলে সেই নির্বাচনও সরকার হতে দেয়নি। আর পুনর্গঠিত ইসি তাই বলে অত্যন্ত পীড়া বোধ করেছে বলে আমরা টের পাই না। ইসি সামগ্রিকভাবে এ পর্যন্ত যা করেছে, তাতে আগামী সাধারণ নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনায় দলীয় সরকারের অধীনে হলে বর্তমান ইসি বাড়তি কোনো ভরসা বা আস্থা সৃষ্টির জায়গা তৈরি করতে পারবে বলে প্রতীয়মান হয় না। সুতরাং এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের কেউ কেউ যে কমিশন সদস্যদের সামনেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
আমরা আশা করব, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে দ্রুত নজির স্থাপন করবে। তারা যে স্বাধীন, তা তাদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ দিতে হবে। আমাদের বড় দুই দলের কাজে প্রায় কখনোই দূরদর্শিতা বা বিচক্ষণতার ছাপ দেখা যায় না। নির্বাচন কমিশনও বেশির ভাগ সময় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। ইসি চাইলে বর্ধিত সংসদীয় আসন ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালুর মতো ভবিষ্যৎমুখী সংস্কার প্রস্তাব জনগণের সামনে আনতে পারে। ইসি যে আমাদের নির্বাচনকাতর রাজনৈতিক দলগুলোর বি টিম নয়, তারও প্রমাণ আমরা চাই। তবে আশু যে কাজটি তাদের না করলেই নয়, সেটি হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ সম্পন্ন করা। জনসংখ্যা, অনগ্রসরতা, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ইসির উচিত অনতিবিলম্বে একটি কৌশলপত্র প্রকাশ করা এবং তার ভিত্তিতে সংলাপ অব্যাহত রাখা।
No comments