গাড়ি চলে না, হাঁটাও দুরূহ by আপেল মাহমুদ
চানখাঁরপুলের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। স্ত্রী-সন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবা নিয়ে দুই বছর ধরে একরকম বন্দি জীবন যাপন করছেন তিনি। খানাখন্দে ভরা জলাবদ্ধ রাস্তা, ড্রেনের দুর্গন্ধ। তাই রাস্তায় নামতেই অপেক্ষা করে নাভিশ্বাস। নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হয়।
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পৈতৃক বাড়ি না হলে অন্যত্র ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চলে যেতেন। এই দুর্ভোগের মূল কারণ হিসেবে তিনি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়কের দীর্ঘমেয়াদি ও অপরিকল্লিত নির্মাণকাজকে দায়ী করেন। হাফিজুর বলেন, প্রতিনিয়ত লাখ লাখ নগরবাসী দুর্ভোগের শিকার। এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ী ইউনুস আলী বলেন, বঙ্গভবনের একেবারে বিপরীতে বসবাস করেও তিনি একদণ্ড স্বস্তিতে নেই। দিনের পর দিন ময়লা ও নোংরা পানির মধ্যে চলছে জীবনযাপন। যান্ত্রিক যানবাহন দূরের কথা, রিকশা পর্যন্ত চলতে পারে না। এমনকি হেঁটে চলাচল করাও দুরূহ।
কাপ্তানবাজার জবাইখানার কাছে প্যান্ট কাচা দিয়ে হাঁটছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পলক। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, উড়াল সড়কটি ঢাকার গতি হয়তো বাড়াবে, কিন্তু প্রকল্পটি দুই বছর ধরে তাঁদের জীবনযাত্রাকেই স্থবির করে রেখেছে। মুক্তি কবে মিলবে তাও জানা নেই কারো।
বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত দেশের বৃহৎ মুরগিপট্টি। এখানকার মুরগি মাংসের চাহিদার বড় অংশ মেটালেও পট্টির বিষ্ঠা ব্যবস্থাপনা বলতে কিছু নেই। প্রতিদিন টনে টনে বিষ্ঠা রাস্তায় ফেলা হয়। একপশলা বৃষ্টি হয়েছে তো বিষ্ঠার সঙ্গে কাদা মিশে অসহনীয় দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এই পরিবেশের মধ্যে বাস করতে গিয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা আর কসাইখানার ময়লা-বর্জ্য মিশে দমবন্ধ করা পরিবেশ তৈরি করে। বনগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ইকবাল আহমেদ রতন বলেন, এই পরিবেশদূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজিরও আছে এলাকায়।
পুরান ঢাকার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে কাপ্তানবাজারে। অথচ সেখানে বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা রাখার কোনো সুযোগ নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা পুরো রাস্তাকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থার মধ্যেই পথচারী এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁটাচলা করতে হয়। সরেজমিনে বিকেল ৪টায় গিয়ে দেখা গেছে, দিন শেষ হয়ে এলেও ঢাকা সিটি করপোরেশন বর্জ্য সরায়নি। পথচারীরা নাকে রুমাল গুঁজে প্যান্ট-লুঙ্গি হাঁটুতে তুলে চলাচল করছে।
স্থানীয় সমাজসেবক ও রাজনৈতিক নেতা চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু কালের কণ্ঠকে বলেন, এই জন্য দায়ী স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার। তিনি দীর্ঘদিন কমিশনার থাকলেও এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। এমনকি তরল বর্জ্য অপসারণের সামান্য ড্রেন পর্যন্ত তিনি তৈরি করেননি। অথচ তাঁর এই ব্যর্থতার দায় পুরো এলাকাবাসীকে নিতে হচ্ছে।
জয়কালী মন্দির এলাকায় দেশের বৃহৎ হোমিও ওষুধ শিল্পের বাজার গড়ে উঠেছে। রাস্তার করুণ পরিণতি আর ময়লা পানির কারণে তাঁদের ব্যবসায় পর্যন্ত ধস নেমেছে বলে ওষুধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হোমিও ওষুধ কিনতে আসে লোকজন। কিন্তু গাড়ি নিয়ে কেউ দোকান পর্যন্ত আসতে পারে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলে হেঁটেও সেখানে যাওয়া যায় না। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ওষুধ ব্যবসায়। হোমিও ডাক্তার আমিনুল ইসলাম জানান, এলাকার পরিবেশদূষণের কারণে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ নানা রোগের উপসর্গও দেখা দিচ্ছে।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল নাগরিক দুর্ভোগের সবচেয়ে করুণ চিত্র। উড়াল সড়কের কারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর ধুলা ওড়াউড়িতে এখানেও পথচারীদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। গোলাপবাগ মাঠ থেকে রাস্তা বন্ধ। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার বাসযাত্রীকে কষ্ট শিকার করতে হচ্ছে। যানজটের সময় অনেক যাত্রীকে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস ধরার জন্য বোঝা মাথায় নিয়ে এক থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা হাসিনা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, যানজটের কারণে তিনি গেণ্ডারিয়া থেকে হেঁটে এসেছেন। এক হাতে ভারী ব্যাগ আরেক হাতে কোলের শিশু নিয়ে পথ চলতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; যার জন্য ফুটপাতে বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত দিকে অবস্থিত করাতিটোলায় থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওহিদুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে কমপক্ষে ২০ লাখ স্থানীয় মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তারা একাধারে কাদা-ময়লা পানি এবং ধুলাবালির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি এলাকার কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিশা বাস সার্ভিসের যাত্রী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি কুমিল্লা থেকে রায়েরবাগের শনির আখড়ায় এসেছেন দেড় ঘণ্টায়। অথচ যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা।
দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনির সামনের রাস্তার চিত্র দেখে কেউই বিশ্বাস করবেন না এটা ঢাকা শহরের কোনো এলাকা। খানাখন্দ আর পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ। ফলে প্রায় প্র্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীসহ রিকশা উল্টে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা হরিগোপাল সাহা বলেন, দয়াগঞ্জ, রাজধানী মার্কেট, স্বামীবাগ ও ওয়ারী এলাকার রাস্তাগুলো আর ব্যবহারের যোগ্য নেই। একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায়। হাঁটাও যায় না। আবার রোদ উঠলে পুরো এলাকা ধুলা-বালিতে ছেয়ে যায়। পথচারীরা তখন রুমালে নাক-মুখ ঢেকে চলতে বাধ্য হয়। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ জানান, কাদা-পানির জন্য দুই বছর ধরে তিনি চামড়ার জুতা পায়ে তুলতে পারছেন না।
যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার দুর্ভোগ নিয়ে তো কম লেখালেখি হয়নি। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হয়েছে বলে মনে হয় না। উড়াল সড়ক নির্মাণ হলে হয়তো যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। কিন্তু বছরের পর বছর এলাকাবাসীকে জিম্মি করে সেটা করা কতটুকু সঠিক হচ্ছে, এর কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। আর তা থেকে নগরবাসী কখন রেহাই পাবে, তাও জানা যাচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য সেবা সংস্থার অপরিকল্পিত ও ধীরগতির কাজ এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। মূলত বর্ষা মৌসুমে তাদের খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই রাস্তাঘাটের অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সেবা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে সেবা সংস্থাগুলোর যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে তারা গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে কোনো খোঁড়াখুঁড়ি করবে না। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৫ জুনের মধ্যে সেবা সংস্থার কাজগুলো শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সেই নির্দেশের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে অর্থাৎ ১৪ জুন থেকে তিতাস গ্যাস এবং ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি) কাজ শুরু করে। এ ব্যাপারে দুটি সেবা সংস্থার কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেন, পুনঃ টেন্ডারসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁদের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টি আর প্রচণ্ড যানজটের কারণে তাঁরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না বলেও তাঁরা স্বীকার করেন। অন্যদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত কাজের জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যার দায় গিয়ে পড়ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওপর।
কাপ্তানবাজারের ব্যবসায়ী ইউনুস আলী বলেন, বঙ্গভবনের একেবারে বিপরীতে বসবাস করেও তিনি একদণ্ড স্বস্তিতে নেই। দিনের পর দিন ময়লা ও নোংরা পানির মধ্যে চলছে জীবনযাপন। যান্ত্রিক যানবাহন দূরের কথা, রিকশা পর্যন্ত চলতে পারে না। এমনকি হেঁটে চলাচল করাও দুরূহ।
কাপ্তানবাজার জবাইখানার কাছে প্যান্ট কাচা দিয়ে হাঁটছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পলক। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, উড়াল সড়কটি ঢাকার গতি হয়তো বাড়াবে, কিন্তু প্রকল্পটি দুই বছর ধরে তাঁদের জীবনযাত্রাকেই স্থবির করে রেখেছে। মুক্তি কবে মিলবে তাও জানা নেই কারো।
বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত দেশের বৃহৎ মুরগিপট্টি। এখানকার মুরগি মাংসের চাহিদার বড় অংশ মেটালেও পট্টির বিষ্ঠা ব্যবস্থাপনা বলতে কিছু নেই। প্রতিদিন টনে টনে বিষ্ঠা রাস্তায় ফেলা হয়। একপশলা বৃষ্টি হয়েছে তো বিষ্ঠার সঙ্গে কাদা মিশে অসহনীয় দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এই পরিবেশের মধ্যে বাস করতে গিয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা আর কসাইখানার ময়লা-বর্জ্য মিশে দমবন্ধ করা পরিবেশ তৈরি করে। বনগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ইকবাল আহমেদ রতন বলেন, এই পরিবেশদূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজিরও আছে এলাকায়।
পুরান ঢাকার সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে কাপ্তানবাজারে। অথচ সেখানে বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা রাখার কোনো সুযোগ নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা পুরো রাস্তাকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থার মধ্যেই পথচারী এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁটাচলা করতে হয়। সরেজমিনে বিকেল ৪টায় গিয়ে দেখা গেছে, দিন শেষ হয়ে এলেও ঢাকা সিটি করপোরেশন বর্জ্য সরায়নি। পথচারীরা নাকে রুমাল গুঁজে প্যান্ট-লুঙ্গি হাঁটুতে তুলে চলাচল করছে।
স্থানীয় সমাজসেবক ও রাজনৈতিক নেতা চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু কালের কণ্ঠকে বলেন, এই জন্য দায়ী স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার। তিনি দীর্ঘদিন কমিশনার থাকলেও এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। এমনকি তরল বর্জ্য অপসারণের সামান্য ড্রেন পর্যন্ত তিনি তৈরি করেননি। অথচ তাঁর এই ব্যর্থতার দায় পুরো এলাকাবাসীকে নিতে হচ্ছে।
জয়কালী মন্দির এলাকায় দেশের বৃহৎ হোমিও ওষুধ শিল্পের বাজার গড়ে উঠেছে। রাস্তার করুণ পরিণতি আর ময়লা পানির কারণে তাঁদের ব্যবসায় পর্যন্ত ধস নেমেছে বলে ওষুধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হোমিও ওষুধ কিনতে আসে লোকজন। কিন্তু গাড়ি নিয়ে কেউ দোকান পর্যন্ত আসতে পারে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলে হেঁটেও সেখানে যাওয়া যায় না। ফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ওষুধ ব্যবসায়। হোমিও ডাক্তার আমিনুল ইসলাম জানান, এলাকার পরিবেশদূষণের কারণে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ নানা রোগের উপসর্গও দেখা দিচ্ছে।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল নাগরিক দুর্ভোগের সবচেয়ে করুণ চিত্র। উড়াল সড়কের কারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর ধুলা ওড়াউড়িতে এখানেও পথচারীদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। গোলাপবাগ মাঠ থেকে রাস্তা বন্ধ। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার বাসযাত্রীকে কষ্ট শিকার করতে হচ্ছে। যানজটের সময় অনেক যাত্রীকে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস ধরার জন্য বোঝা মাথায় নিয়ে এক থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা হাসিনা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, যানজটের কারণে তিনি গেণ্ডারিয়া থেকে হেঁটে এসেছেন। এক হাতে ভারী ব্যাগ আরেক হাতে কোলের শিশু নিয়ে পথ চলতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন; যার জন্য ফুটপাতে বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে।
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত দিকে অবস্থিত করাতিটোলায় থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওহিদুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে কমপক্ষে ২০ লাখ স্থানীয় মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তারা একাধারে কাদা-ময়লা পানি এবং ধুলাবালির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম প্রভৃতি এলাকার কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিশা বাস সার্ভিসের যাত্রী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি কুমিল্লা থেকে রায়েরবাগের শনির আখড়ায় এসেছেন দেড় ঘণ্টায়। অথচ যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা।
দয়াগঞ্জ সুইপার কলোনির সামনের রাস্তার চিত্র দেখে কেউই বিশ্বাস করবেন না এটা ঢাকা শহরের কোনো এলাকা। খানাখন্দ আর পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে দুর্গন্ধ। ফলে প্রায় প্র্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীসহ রিকশা উল্টে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা হরিগোপাল সাহা বলেন, দয়াগঞ্জ, রাজধানী মার্কেট, স্বামীবাগ ও ওয়ারী এলাকার রাস্তাগুলো আর ব্যবহারের যোগ্য নেই। একটু বৃষ্টি হলেই ডুবে যায়। হাঁটাও যায় না। আবার রোদ উঠলে পুরো এলাকা ধুলা-বালিতে ছেয়ে যায়। পথচারীরা তখন রুমালে নাক-মুখ ঢেকে চলতে বাধ্য হয়। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ জানান, কাদা-পানির জন্য দুই বছর ধরে তিনি চামড়ার জুতা পায়ে তুলতে পারছেন না।
যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের ব্যবসায়ী শাহজাহান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার দুর্ভোগ নিয়ে তো কম লেখালেখি হয়নি। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হয়েছে বলে মনে হয় না। উড়াল সড়ক নির্মাণ হলে হয়তো যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। কিন্তু বছরের পর বছর এলাকাবাসীকে জিম্মি করে সেটা করা কতটুকু সঠিক হচ্ছে, এর কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। আর তা থেকে নগরবাসী কখন রেহাই পাবে, তাও জানা যাচ্ছে না। তবে সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য সেবা সংস্থার অপরিকল্পিত ও ধীরগতির কাজ এবং সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। মূলত বর্ষা মৌসুমে তাদের খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই রাস্তাঘাটের অবস্থা এমন নাজুক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সেবা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে সেবা সংস্থাগুলোর যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে তারা গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে কোনো খোঁড়াখুঁড়ি করবে না। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৫ জুনের মধ্যে সেবা সংস্থার কাজগুলো শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সেই নির্দেশের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক দিন আগে অর্থাৎ ১৪ জুন থেকে তিতাস গ্যাস এবং ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি) কাজ শুরু করে। এ ব্যাপারে দুটি সেবা সংস্থার কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে বলেন, পুনঃ টেন্ডারসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে তাঁদের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টি আর প্রচণ্ড যানজটের কারণে তাঁরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না বলেও তাঁরা স্বীকার করেন। অন্যদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত কাজের জন্য জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যার দায় গিয়ে পড়ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওপর।
No comments