কোটার কণ্টকে বিদ্ধ মেধা by মীর আশফাকুর রহমান তানিম
সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সব নাগরিকের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হলেও তা আজ কোটা ব্যবস্থার অতিরঞ্জিত অবস্থায় অনিশ্চিত। শত যোগ্য মেধাবী নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে আজ কোটা নামক জাঁতাকলে পিষ্ট।
জনসংখ্যার অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির নাম করে বিশেষ বিধানের মাধ্যমে একদিকে যেমন মেধার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি অযোগ্য ও অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যরা প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন। কোটা ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট উপযুক্ত স্বীকৃতির অপ্রাপ্যতা ও তার দরুন সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষিত ও মেধাবী নাগরিকরা দেশান্তরিত হচ্ছে, ত্বরান্বিত হচ্ছে ব্রেইন ড্রেন। তা ছাড়া বেকারত্ব নামক জাতীয় সমস্যায়ও নীরব অথচ সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এই প্রথাটি।
আর্থিক দৈন্যের মধ্যেও বাবা-মায়ের একনিষ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা, আবশ্যকীয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিটি স্তরে সফল হওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিজেকে দেখার স্বপ্ন আজ বিবর্ণ-ধূসর। শঙ্কা_ মেধা আর যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হবে তো, নাকি কোটার করাল থাবায় চূর্ণ হবে সুপ্ত সেই লালিত স্বপ্ন? কেননা পেশার জন্য নির্ধারিত নীতিতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেও উপেক্ষিত হতে হয়। অযোগ্যতা একটাই_ আদিবাসী কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ না করা।
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সোনার সন্তান। স্বাধীনতায় তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সন্তানদের জন্য সরকারি পেশায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০% কোটার বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। আর এ ধরনের বিশেষ বিধানের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(১) ও ২৯(৩)(ক)। এখানে বলা হয়েছে_ 'প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা থাকবে, তবে নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।'
প্রশ্ন হলো, বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে এটা কি ব্যর্থতা ও লজ্জার বিষয় নয় যে যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, গত ৪১ বছরেও তাদের আমরা অনগ্রসর বৃত্তের বাইরে আনতে পারিনি? গত দুই দশক ধরে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলও কি তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছে? আর তাদের যদি অনগ্রসর অংশ না বলা হয় তাহলে তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়?
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০% কোটা, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান নিয়োগ পাবেন ৩০ জন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী_ দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার। অথচ ৩০% কোটা প্রায় ৫ কোটি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের ইঙ্গিত দেয়।
আমরা স্বাধীনতার ৪১ বছরেও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের খুঁজে বের করতে পারিনি। আজও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা এখনও সন্দেহাতীত নয়। এটা কি তাদের প্রাপ্য সম্মান জানানোর পথে অন্তরায় নয়?
পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির জন্য কোটা ব্যবস্থা গ্রহণযাগ্য, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমান এ ধারা কাম্য নয় এবং কোটা প্রথার লাগামহীন আধিপত্যও অগ্রহণযোগ্য।
সংবিধানের ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার সনি্নবেশন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতায় যোগ্যতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কোটা ব্যবস্থার অতিসম্প্রসারণের কুপ্রভাবে আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কোটাধারী প্রার্থী না থাকায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদ শূন্য থাকে, এমনকি উত্তীর্ণ কোটাবিহীন মেধাবীদের দ্বারাও অবশিষ্ট পদগুলো পূর্ণ করা হয় না।
দেশের ও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে কোটা প্রথার এই লাগামহীন অতিসম্প্রসারিত ব্যবস্থাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।
য় শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashfaq.r68@gmail.com
আর্থিক দৈন্যের মধ্যেও বাবা-মায়ের একনিষ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা, আবশ্যকীয় আনুষঙ্গিক বিষয়ের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মেধা ও শ্রম দিয়ে প্রতিটি স্তরে সফল হওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিজেকে দেখার স্বপ্ন আজ বিবর্ণ-ধূসর। শঙ্কা_ মেধা আর যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হবে তো, নাকি কোটার করাল থাবায় চূর্ণ হবে সুপ্ত সেই লালিত স্বপ্ন? কেননা পেশার জন্য নির্ধারিত নীতিতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেও উপেক্ষিত হতে হয়। অযোগ্যতা একটাই_ আদিবাসী কিংবা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ না করা।
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সোনার সন্তান। স্বাধীনতায় তাদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সন্তানদের জন্য সরকারি পেশায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০% কোটার বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে। আর এ ধরনের বিশেষ বিধানের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(১) ও ২৯(৩)(ক)। এখানে বলা হয়েছে_ 'প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা থাকবে, তবে নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যেতে পারে।'
প্রশ্ন হলো, বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে এটা কি ব্যর্থতা ও লজ্জার বিষয় নয় যে যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, গত ৪১ বছরেও তাদের আমরা অনগ্রসর বৃত্তের বাইরে আনতে পারিনি? গত দুই দশক ধরে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলও কি তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হয়েছে? আর তাদের যদি অনগ্রসর অংশ না বলা হয় তাহলে তাদের জন্য কোটা ব্যবস্থা কি প্রশ্নবিদ্ধ নয়?
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০% কোটা, অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান নিয়োগ পাবেন ৩০ জন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী_ দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার। অথচ ৩০% কোটা প্রায় ৫ কোটি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের ইঙ্গিত দেয়।
আমরা স্বাধীনতার ৪১ বছরেও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের খুঁজে বের করতে পারিনি। আজও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনাহার-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা এখনও সন্দেহাতীত নয়। এটা কি তাদের প্রাপ্য সম্মান জানানোর পথে অন্তরায় নয়?
পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির জন্য কোটা ব্যবস্থা গ্রহণযাগ্য, কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলমান এ ধারা কাম্য নয় এবং কোটা প্রথার লাগামহীন আধিপত্যও অগ্রহণযোগ্য।
সংবিধানের ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার সনি্নবেশন করা হয়েছে। কিন্তু আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতায় যোগ্যতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কোটা ব্যবস্থার অতিসম্প্রসারণের কুপ্রভাবে আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কোটাধারী প্রার্থী না থাকায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পদ শূন্য থাকে, এমনকি উত্তীর্ণ কোটাবিহীন মেধাবীদের দ্বারাও অবশিষ্ট পদগুলো পূর্ণ করা হয় না।
দেশের ও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর স্বার্থে কোটা প্রথার এই লাগামহীন অতিসম্প্রসারিত ব্যবস্থাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।
য় শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ashfaq.r68@gmail.com
No comments