কী কাণ্ড মাসকটে!-যাত্রী ফেলে বিমান ভাগার তদন্ত হোক
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ বিমান নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বিমান নিয়ে নানা কাহিনী। অনেক পরিবর্তন হয়েছে বিমানে। নাম থেকে শুরু করে সংস্থার ধরন- অনেক কিছুই পরিবর্তন হওয়ার পরও বিমানের যাত্রীসেবার মান নিয়ে যে প্রশ্নটি শুরু থেকেই আছে, সেটার আর পরিবর্তন হয়নি। যাত্রী হয়রানি, বিড়ম্বনা,
দুর্ভোগ- এসব যেন বিমানের যাত্রীদের ললাট-লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ওমানের রাজধানী মাসকটে যে অভিজ্ঞতাটি হলো, তা নিঃসন্দেহে একেবারেই অভিনব। এমন অভিনব ঘটনা এর আগে বিশ্বের কোনো বিমান সংস্থায় বোধ হয় ঘটেনি। কোনো বিমান সংস্থার উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ফেলে রেখে চলে গেছে, বিমান চলাচলের ইতিহাসে এমন ঘটনা বোধ হয় এটাই প্রথম।
প্রকাশিত খবর পড়ে যা জানা যাচ্ছে, তা হলো- বুধবার যাত্রী নিয়ে মাসকট যাওয়া উড়োজাহাজটির আবার ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল। ৫০০ যাত্রী নিয়ে মাসকট বিমানবন্দরে গেলেও সেখানে অপেক্ষমাণ ২২০ যাত্রী উড়োজাহাজটিতে উঠতে পারেননি। জ্বালানি নিয়ে সেটি আর বোর্ডিং ব্রিজে ফিরে আসেনি। সেখান থেকেই উড়ে গেছে ইয়েমেনের রাজধানী সানায়। পালিয়ে যাওয়া এই উড়োজাহাজটি ভাড়ায় আনা হয়েছিল। ভাড়ার মেয়াদ আছে এ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত। তার আগেই উড়োজাহাজটি অভিনব ঘটনাটি ঘটাল। এ খবর পড়ার পর অনেক পাঠকের চোখে একটি দৃশ্য ভেসে উঠতে পারে। আজকাল রাজধানী ঢাকায় এমন কিছু বাস চালু হয়েছে, যেগুলোতে টিকিট কেটে উঠতে হয়। নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামে। যাত্রী ওঠানামা করে। কিন্তু একসময় এসব সিটিং সার্ভিস ছিল না। সেই সময় বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে অনেককে চলাচল করতে হতো। দিনের কিছু সময়, বিশেষ করে অফিস শুরু ও ছুটির সময় দেখা যেত, ভরা বাস স্টপেজে এলে যাত্রীদের মধ্যে বাসে ওঠার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। এ সময় দেখা যেত, যাত্রীদের ভিড় এড়াতে অনেক বাস স্টপেজের আগে অথবা পরে থেমে যাত্রী নামিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের আর বাসে ওঠা হচ্ছে না। বিমানের এ উড়োজাহাজটির ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে। যাত্রীরা সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করলেও বিমানে উঠতে পারেননি। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ নেমেছে, যাত্রীরা নেমেছেন। কিন্তু যাঁদের ওঠার কথা ছিল, তাঁদের ওই উড়োজাহাজে ওঠা হয়নি।
বিমান নামের সংস্থাটি আকাশ থেকে গোত্তা খেয়ে মাটিতে পড়েছে অনেক আগেই। ডানা-ভাঙা বিমানকে আবার আকাশে উড়তে সক্ষম করার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছে। বিমান নামের সংস্থাটি যেন নিজেই নিজের প্রতিবন্ধক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই পাবলিক লিমিটেড কম্পানিকে বিভিন্ন সময় লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে। বিমানের প্রশাসন- এমন কিছু আছে বলে অনেক সময় মনেই হয় না। একটি ভাড়া করা উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন না করে কিভাবে ভেগে যেতে পারে? প্রশাসনিক ব্যবস্থা কত ঢিলা হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। বিমান কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।
No comments