এনার্জি বাল্ব-সস্তার তিন অবস্থা!

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য কমপ্যাক্ট ফ্লুরেসেন্ট ল্যাম্পস বা সিএফএল বিতরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় ২০০৯ সালে। বিতরণ শুরু হয় পরের বছর। ২৭ জেলায় একযোগে বিনামূল্যে বাল্ব বিতরণের তথ্য প্রকাশ করে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্যক্তি বলেছিলেন, দুই বছরে দুই কোটি ৭৫ লাখ বাল্ব জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হবে।


এ জন্য ঋণ মিলবে বিশ্বব্যাংক থেকে। ঋণ করলে তা পরিশোধ করতে হয় সুদসহ। কিন্তু তারপরও বিনামূল্যে বাল্ব বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে আখেরে লাভের বিষয়টিই বড় করে দেখা হয়। বলা হয়েছিল, এসব বাল্ব প্রচলিত বাল্বের তুলনায় আলো দেবে বেশি, কিন্তু বিদ্যুৎ খরচ কম। কত কম, তারও হিসাব দেওয়া হয়। কেউ বলেন, সারাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাঁচবে। কেউবা বলেন, সাশ্রয় আরও বেশি হবে_ অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট। এমনও বলা হয়, এ থেকে যে খরচ বাঁচবে, তা দিয়ে ৩৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু বৃহস্পতিবার সমকালে 'বরিশাল বিদ্যুৎ বিভাগ :৭৫ হাজার এনার্জি বাল্ব বিকল, গচ্চা ৪ লাখ টাকা' শীর্ষক খবর থেকে এ ধারণা হতেই পারে যে, বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্পর্কে যে তথ্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে দেওয়া হয়েছে, তা নিছকই স্বপ্ন। চীন থেকে আমদানি করা বাল্বগুলোর বেশিরভাগ মাত্র ৬ মাসেই অকেজো হয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও বিনামূল্যে বিতরণ করা বাল্বের পরিণতি এমন হলে বুঝতে হবে যে, 'সস্তার তিন অবস্থা' প্রবাদটি যথার্থ। প্রশ্ন করা যেতে পারে, এসব বাল্ব আমদানির পেছনে কোনো অসাধু চক্র জড়িত ছিল কি-না। যে চার লাখ টাকা গচ্চার কথা বলা হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে বাল্বের মূল্য নয়, বিতরণজনিত ব্যয়। এখন আবার গ্রাহকদের নতুন করে বিনামূল্যে বাল্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে ফের ঋণ করে বাল্ব আমদানি এবং তার বিতরণ ব্যয়ের খাত সৃষ্টি। আখেরে দেশবাসীকেই এর দায় বহন করতে হবে। যারা নিম্নমানের বাল্ব আমদানি করেছে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের তরফে যারা এটা বুঝে নিয়েছে তাদের শাস্তি হোক, আমরা সে দাবিই করব। কিন্তু শাস্তি যে হবেই, সে ভরসা কোথায়?

No comments

Powered by Blogger.