বায়ান্ন বাজার ॥ তিপ্পান্ন গলি
মধ্য শরৎ এখন। তবে বহাল আছে বর্ষাও। যখন-তখন রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। পানি জমে যাচ্ছে ভাঙ্গা রাস্তায়। আর যানজট তো চিরকালের। বৃষ্টির জল সেটি আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালেই এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। আর তার পর যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা ভুগেছেন যথেষ্টই। লম্বা সময় গাড়িতে বসে থেকেছেন।
কিন্তু পথ এগোয়নি। বাংলামোটর ফুট ওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। একই অবস্থা ছিল অন্য সড়কগুলোতে। এদিন সদরঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিবিঘিœত জনপদ। কাকভেজা হয়ে কাজ করছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। ঢাকার বাইরে থেকে আসা লোকজন দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠছিলেন। তবে লম্বা সময় ঘাটে বাঁধা ছিল নৌকো। এসব নৌকোয় ছাতা মাথায় দিয়ে বসে ছিলেন মাঝিরা। যাত্রীর অপেক্ষা করছিলেন। বৃষ্টি থামলে অপেক্ষা শেষ হয় তাঁদের। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, অক্টোবর মাসের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। সেই সঙ্গে বিদায় হবে বর্ষার। তখন হয়ত কিছুটা কমবে যানজট। সে প্রতীক্ষায় এখন রাজধানীবাসী।
এদিকে প্রতীক্ষার শেষ হয়েছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। লম্বা সময় আলোচনায় থাকা বুয়েট এখন শান্ত। প্রায় পাঁচ মাসের অচলাবস্থা শেষে আগামীকাল শনিবার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে এখানে। এর আগে গত রবিবার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপে অচলাবস্থা কাটতে শুরু করেছিল। বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া আশ্বাস অনুসারে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অফিসে ভাংচুর, দখল ও লুটপাটের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার বিষয়েও আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা ক্লাসে ফিরতে এখন প্রস্তুত। সমিতির নেতারাও ঘোষণা দেন, এখন শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন বলে আশা করে বলেন, তাদের প্রত্যাশামতো আমরা কাজ করেছি। তারাও আমাদের প্রত্যাশামতো কাজ করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এমন এক পরিস্থিতিতে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সকালে অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং বিকেল তিনটায় আনুষ্ঠানিকভাবে বসে ডিনস কমিটির বৈঠক। বৈঠকে শনিবার ক্লাস শুরুর দিন ধরে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তবে বুয়েট যখন শান্ত তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হতে চলেছে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রদলের ছেলেদের মারধর করেছে। জানা যায়, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসছেÑ এমন খবরে সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এমন সময় দুটো মোটরসাইকেলে করে চার ছাত্রদলের কর্মী প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে তাদের দুজনকে মারধর করেন তারা। পরে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে আরও ছয়জনকে পেয়ে তাদেরও মারধর করা হয়। কয়েক দফায় ছাত্রলীগের মারধরে আহত হয়েছেন ছাত্রদলের অন্তত দশজন। না, এখানেই শেষ নয়। হামলার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখান থেকে যে বক্তব্যটি এসেছে সেটি এ রকমÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ছাত্রদলের প্রবেশে যদি ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি না করে তবে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্যাম্পাসে ঢুকবে ছাত্রদল। আর ঘটনা তেমন হলে অশান্ত হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে শঙ্কার কিছু আর না ঘটুক। শুধু লেখাপড়া নিয়ে থাকুক সকল শিক্ষার্থীÑ এ প্রত্যাশা সচেতন নাগরিক সমাজের।
No comments