ফ্যাশনে পাটের কদর by তৌফিক অপু
আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটিÑ এ কথা যেন যথার্থই। এত উর্বর মাটি অন্যান্য দেশে খুব কমই আছে। আমরা সত্যিই সৌভাগ্যবান। সোনার ফসল ফলে আমাদের মাটিতে। তেমনি একটি ফসল হচ্ছে পাট। যাকে আমরা সোনালি আঁশ নামেই চিনি। অর্থকরী এ ফসল দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
কদিন আগেই ঘরে উঠেছে এই সোনালি আঁশ। পাটের চাহিদা অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হচ্ছে আমাদের দেশে। ইতোমধ্যেই পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পাট। বাংলাদেশে সরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জুট এবং জুট ফেব্রিক নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি একটি বায়িং হাউস ইকো রে প্রা: লি:-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হান গফুর জানান, বিগত দশ বছরের তুলনায় এ বছরে পাটের উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। পাটের র’ ম্যাটেরিয়াল থেকে শুরু করে ফাইনাল প্রোডাক্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে এক্সপোর্ট হচ্ছে দেশের বাইরে। এর মধ্যে ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চায়না, পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি পাট এক্সপোর্ট হয়ে থাকে। বর্তমানে জুট ইয়ার্ন বা পাটের সুতার ভালো চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্পিনিং মিলেই প্রস্তুত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ইয়ার্ন। সুতলি, রশি ছাড়াও সর্বশেষ যোগ হয়েছে ইউনিয়ান ইয়ার্ন। যা জুট ইয়ার্নের সঙ্গে অন্যান্য সুতা মিক্সড করে তৈরি করা হয়। এটা বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক তৈরিতে বিশেষ অবদান রাখে। বর্তমানে অনেক সুন্দর সুন্দর ফেব্রিক তৈরি হচ্ছে। যা দেশীয় ফ্যাশন ট্রেন্ডকে বিশেষভাবে নাড়া দিচ্ছে। পাটের তৈরি বিভিন্ন পোশাক এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, অন্যতম। দিন দিন এগুলোর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। নিজেদের কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পোশাক দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে এটা দেশের জন্য সুখবরই বটে। শুধু মাত্র পোশাকই নয় ফ্যাশনের অনুসঙ্গ হিসেব ভ্যারাইটিজ প্রোডাক্ট এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। একটা সময় ছিল পাট শুধু মাত্র বস্তা, চট ইত্যাদি তৈরিতেই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে। মানুষ এখন অনেকটাই ফ্যাশনসচেতন। যে কারইে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন প্রোডাক্ট ব্যবহারে নিজেদের বিরত রাখছে। বাজারে পাটের নিত্য ব্যবহার্য ব্যাগ, ফ্যাশনেবল ব্যাগ, ঝুড়ি, স্কুল ব্যাগ, বেড কভার, কুশন কভার, চাদর, পর্দ্দা, কার্পেট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে। সুখের বিষয় হচ্ছে এইসব প্রোডাক্ট দেশের বাইরে প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি করেছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ অবস্থান থেকে দেশীয় পণ্যকে প্রমোট করা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পাটের সোল এখন দেশেই প্রস্তুত হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে রফতানি হচ্ছে। জুতা তৈরির এসব সোল শীত প্রধান দেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। পাটের আরও সফল প্রোডাক্ট হচ্ছে ফায়ার প্রুফ ফেব্রিক এবং টেপ। এই টেপ শীত প্রধান দেশে ওয়েদার প্রুফ হিসেবে বাসা বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। দুই তক্তার মাঝখানে এই টেপ ব্যবহার করা হয়। ফলে ঠা-া বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। ফ্যাশনসচেতন মানুষ তাদের বিভিন্ন ডেকোরেশনে জুট রিবন্ড ব্যবহার করে থাকে। নিজের প্রিয় গাড়িটিতে নিরাপদে বসে থাকতেও ব্যবহৃত হচ্ছে পাট। সিটের অভ্যন্তরে জুট ফ্লেট ব্যবহার করা হয় যা গাড়ির অভ্যন্তরে উৎপাদিত বিষাক্ত গ্যাস দূর করে। কাজেই ফ্যাশনেবল মানুষদের প্রতিটি কাজের উপসঙ্গ হিসেবে পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তি মো. রফিক জানান, আমরা পাট নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে থাকি। এর ফলে ফ্যাশনেবল প্রোডাক্ট হিসেবে পাটকে ক্রেতাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। পাটের পোশাক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাশন শো হয়েছে, হয়েছে বেশ কিছু মেলা। সাড়াও মিলেছে প্রচুর। যে কারণে পূর্বের তুলনায় পাটে অবস্থা এখন অনেক ভালো। তবে এর গতি ত্বরান্বিত করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সত্যিকার অর্থেই দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট ব্যবহারের বিকল্প নেই। পাটজাত পণ্য সেক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রচনা করবে বলে আশা করা যায়।
No comments